পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য ইমতিয়াজ হাসান বুলবুলের মৃত্যুর অভিযোগ করেছে তার পরিবার। নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানান, বুলবুলকে গত ২৪শে নভেম্বর আটক করে নিয়ে যায় ওয়ারী থানা পুলিশ। এরপর তাকে অমানবিক শারীরিক নির্যাতন করা হয়। পরবর্তীতে তাকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়। কারাগারে থাকা অবস্থায় হঠাৎ হার্টের সমস্যা দেখা দিলে কারা কর্তৃপক্ষ তাকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গত ২৬শে নভেম্বর ভর্তি করান। পুরো বিষয়টি পরিবারের কাছে গোপন রাখে পুলিশ। ৩০শে নভেম্বর বৃহস্পতিবার তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে পরিবারকে জানানো হয়। তার ভাগ্নে ও আরেক আত্মীয় স্থানীয় যুবলীগ ও তাঁতী লীগ কর্মীর তত্ত্বাবধানে মরদেহ হস্তান্তর করে পুলিশ। মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে রাত ৯টায় চুপিসারে দাফন কাজ সম্পন্ন করে পুরো বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। মৃত বুলবুলের শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে বলে পরিবারের দাবি।
বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন অভিযোগ করেন, গত ২২ অক্টোবর প্রথমে স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা বুলবুলের পকেটে জোর করে গাজা ঢুকিয়ে দিয়ে ওয়ারী থানার পুলিশকে খবর দেয়।
পুলিশ এলে তাদের হাতে তাকে তুলে দেয়। সেদিন পুলিশ তাক ছেড়ে দিলেও ২৪শে অক্টোবর ওয়ারী কাজী আরিফ স্কুলের সামনে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মীরা বুলবুলকে মারধর করে আবারও পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এরপর তাঁকে থানায় অমানবিক শারীরিক নির্যাতন করা হয়। এসময় পরিবারের সদস্যরা তাকে দেখতে গেলে তাদের দেখতে দেওয়া হয়নি। পরবর্তীতে বুলবুলের খোঁজে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে একাধিকবার গেলেও তার হদিস পাননি। গত ২০ তারিখে পরিবার নিশ্চিত হয় বুলবুল কাশিমপুর কারাগারে আছেন। এরপর সেখানে গিয়েও বুলবুলের সাথে দেখা করতে পারেনি- তার পরিবারের সদস্যরা। ২৪ নভেম্বর বুকের ব্যথায় পড়ে গেলে বুলবুলকে নেওয়া হয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে। পুরো বিষয় পরিবারের কাছে গোপন রাখা হয়েছিলো। বৃহস্পতিবার তিনি মৃত্যুবরণ করলে পরিবারকে জানানো হয়।
বৃহস্পতিবার ভোর তিনটা ২০ মিনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা বুলবুলকে মৃত্যু ঘোষণা করার পর থেকেই লাশ পুলিশের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যায়। এরপর নিহত বুলবুলের ভাগিনা শ্যামল ও পলাশ (স্থানীয় তাতী লীগ নেতা)-এর কাছে লাশের বিষয়ে পরিবারের অন্য সদস্যরা জানতে চাইলে তারা দিনভর এলোমেলো তথ্য দেন। বলেন, লাশ দাফন হয়ে গেছে, মর্গে আছে, পুলিশের কাছে আছে। পরে রাত ৯টায় চুপিসারে দাফন কাজ সম্পন্ন করে পুরো বিষয় ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমাদের জানা নেই। এই নামে কোনো বিএনপি নেতাকে আমরা আটক কিংবা গ্রেপ্তার করিনি।