মিনার রশিদ
এই প্রশ্নটি আমাদের এক বড় ভাইয়ের। নিজেও এদেশের একটি গর্বিত প্রতিষ্ঠানের এলামনাই। দেশের বাইরে থাকলেও দেশের আর্থ সামাজিক পরিস্থিতির দিকে একটা চোখ রাখেন! কোনও বিচারেই এই বড় ভাইটিকে সাম্প্রদায়িক বলা যাবে না, কোনও বিশেষ রাজনৈতিক মতাবলম্বীও বলা যাবে না। বরং এক সময় নন-আওয়ামীলীগ সকল বন্ধুদের সাথে একাই ফাইট করতেন! উনার বিপক্ষে তর্ক করা কেউ কেউ এখন মারাত্মক আওয়ামীলীগার বনে গেছেন। পরিণত বয়সে কৌতুক ভরে এসব স্মৃতি আওড়ান, মাঝে মাঝে দুয়েকটা আমার সঙ্গে শেয়ার করেন!
আমাকে অনুরোধ করেছেন আমি যেন এই বিষয়টি নিয়ে একটু লেখি বা বলি। বড় ভাইটি নিজের একটি আশংকার কথা বলেছেন! সেই আশংকাটিই আজকের লেখার মূল বিষয়। সাইড ডিশ বা এপিটাইজার হিসাবে লোনা পানির দুয়েকটা নোনতা বিষয় উল্লেখ করেই সেদিকে ফিরে যাব।
এই দেশের যে কয়টি প্রতিষ্ঠান শত চেতনার ঝাড়ফুঁক বা চা-ছামোছার প্রভাব কাঁটিয়ে এখনও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে তার মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠান অন্যতম বলে বড় ভাইটি মনে করেন। একটি বুয়েট এবং অন্যটি বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি। মেরিন একাডেমি নিয়ে বড় ভাইটির সাথে আমি স্লাইটলি দ্বিমত পোষণ করি। তবে এটা ঠিক, দেশের বাইরে যে কয়টি বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের এলামনাইগণ বিশ্বের নানা প্রান্তে অধিক সংখ্যায় মর্যাদাবান অবস্থানে পৌঁছে গেছেন, তন্মধ্যে এই দুটি প্রতিষ্ঠান অন্যতম। প্রাক্তন মেরিনারগণ নতুনদের জন্যে একটা বাজার সৃষ্টি করে গেছেন যা বর্তমান চেতনাধারী চা-ছামোছা ওয়ালাগণও নষ্ট করতে পারছে না। সারা বিশ্বেই বিশেষ করে পাশের দেশটিতে উপরের স্তরের মেধা মেরিনে আসা বন্ধ করে দেওয়াতে তুলনামূলক কম্পিটিশনে আমরা এখনও ভালো অবস্থানে রয়ে গেছি।
যদিও বুয়েটের মত সেই মান (মেধাবী ইনটেইক বিবেচনায়) এই প্রতিষ্ঠানটি ধরে রাখতে পারে নাই। এক সময় মেধা তালিকায় থাকা অনেক রত্ন (!) এই প্রতিষ্ঠানটিতে ভর্তি হতেন। কোনও কোনও ব্যাচে ৪৮ জন ক্যাডেটের মধ্যে ২৫ জনই ছিলেন মেধা তালিকা থেকে! কিছুটা আগের নামে এবং কিছুটা পরিবর্তিত গ্লোবাল চাহিদা ও জোগানের সুবিধাজনক অবস্থানে থাকায় সেই গুরুত্ব কিছুটা ধরে রেখেছে।
ড. সাজিদ হোসেন গত চৌদ্দ বছরে মেরিন একাডেমির কসমেটিক এপিয়ারেন্স অনেক বাড়ালেও বা অনেক চা-ছামোছার সুবন্দোবস্ত করলেও ভেতর থেকে অনেক ধ্বংস করে গেছেন! আগে যেখানে হাজার হাজার মেধাবী ছাত্র ভর্তির জন্যে উদগ্রীব হয়ে থাকতেন এখন সেখানে ঢাক-ঢোল বাজিয়েও প্রয়োজনীয় সংখ্যক ক্যাডেট সংগ্রহ করা যায় না।
অবসরে গিয়েও (শেষ হয়েও হইল না শেষ) যিনি এখনও মেরিন একাডেমির জমিদারের ছড়িটি নিজ হাতে রেখেছেন।
এখন মেরিন একাডেমিতে গেলে একটা অদ্ভুত লেখা অনেকের দৃষ্টি কাড়ে! বিজয় নিরন্তর নামে একটি দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য বানিয়ে সেখানে লেখা হয়েছে, মৃত্তিকা বিজয় ১৯৭১, সমুদ্র বিজয় ২০১৪! অনেক তৈলবাজ এই কথাটি সেই সময় উচ্চারণ করলেও এভাবে বুকে ধারণ করে রেখেছে আমাদের প্রিয় এই প্রতিষ্ঠানটি! এটা অনেকটা ঈসায়ী সালের মত করে মুজিবীয় সাল চালু করার মত ব্যাপার। সেই মহান উদ্যোগটি কেন আর অগ্রসর হলো না, তা আর জানতে পারলাম না!
কোনটার সাথে কোনটার তুলনা? একটি বিজয় এসেছে রক্তক্ষয়ী এক যুদ্ধের মাধ্যমে। অন্য প্রাপ্তিটি এসেছে আন্তর্জাতিক নিয়মের স্বাভাবিক ধারাবাহিকতায়। চুল চেরা বিশ্লেষণে প্রতিপক্ষ ইন্ডিয়া ও মিয়ানমারের তুলনায় আমাদের লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হয়েছে! বেশির পক্ষে বলা যায় উইন–উইন সিচুয়েশন হয়েছে! শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে ধরে দিপুমনির সে কী ড্রামা, ক্লাইমেক্স-সে তো ভোলার নয়! আমাদের ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্সের এই দুরবস্থা দেখে সারা বিশ্ব মুখ টিপে হেসেছে! এটা ছিল আরবিট্রেশন- যেখানে কখনোই কারও জয় বা কারও পরাজয় হয় না। ২০১৪ সালের আগে পরে হিরো আলম বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকলেও কথিত এই সমুদ্র বিজয়টি সংঘটিত হত। দিপুমনিকে তখন হিরো আলমকেই এই কিসিমে আবেগে জড়িয়ে ধরতে হত। এই ধরণের Arbitration এ উভয় পক্ষকেই উইন-উইন বা জয়ী-জয়ী অবস্থায় রাখা হয়। বিশেষ চেতনা প্রতিষ্ঠার নামে উপরের দিকে ড. জাফর ইকবাল এবং নিচের দিকে এই ড. সাজিদগণ মিলে কম আইকিউ সম্পন্ন একটা মূর্খ জাতি বানানোর সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে! মেরিন একাডেমি থেকে পাশ করেও জানবে না স্বাধীনতার যুদ্ধ কী জিনিস আর আরবিট্রেশন বা আন্তর্জাতিক সালিশ কী জিনিস!
চরম হতাশার কথা হলো, এই প্রতিষ্ঠানটির যিনি দায়িত্বে ছিলেন বা মতান্তরে এখনও আছেন তিনি নিজেও মেরিন একাডেমির সেই স্বর্ণালি যুগের একজন তুখোড় মেধাবী ছাত্র। ডক্টরেট সহ অনেকগুলো ডিগ্রি আর এচিভমেন্টের ভারে তিনিও দারুণভাবে ভারাক্রান্ত। নিজের নেত্রীর মত (রাষ্ট্রের একজন কর্মচারী হয়েও তিনি তাঁর এই সম্পৃক্ততা গোপন রাখেন নি) এই ডিগ্রীগুলো সবগুলো খয়রাতী ডিগ্রি নহে। এই সব ডিগ্রী বা এচিভমেন্টের অনেকগুলোই তিনি কিছুটা মেহনত করেই অর্জন করেছেন। সেই ক্যাপাসিটি উনার ছিল এবং সেটাকে তিনি যথাযথ কাজে লাগিয়েছেন। এরপরেও শ্রদ্ধেয় সেই বড় ভাইটি চা-ছামোছার সেই ফর্মুলা অনুসরণ করেছেন এবং এই সব কষ্টকর তৈলমর্দন করে গেছেন! মেরিন একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত দৃষ্টি নন্দন এই স্থাপত্যটি তাঁর সেই তৈলাক্ত আমল নামা অনেকদিন ধরে রাখবে, বিশেষ করে জাতির মেরিটাইম মেমোরি বা ডিজিটাল মিউজিয়ামে এটি জাগরূক থাকবে অনেক অনেকদিন। মেরিটাইম জগত বলতে পারবে, আমাদেরও একজন ছিলেন! তিনিও প্রাইম মিনিস্টার’স ম্যান, স্যরি সিম্যান!
আমাদের প্রিয় সাজিদ স্যার অথবা সাজিদ ভাইকে এই ভূমিকায় দেখে অবাক হই নাই। তাঁর পূর্বের বেশির ভাগ কম্যান্ডেন্ট এক মেয়াদ (তিন বছর) কিংবা দুয়েকজন দুই মেয়াদে ছিলেন। তিনিই একমাত্র ভাগ্যবান যিনি ২০০৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত চেয়ারটি ধরে রেখেছেন। অর্থাৎ মেরিন একাডেমিতেও তিনি মিনি বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছেন। অবস্থাদৃষ্টে মালুম হচ্ছে তিনিও বোধহয় ২০৪১ সাল পর্যন্ত মেরিন একাডেমির কম্যান্ডেন্ট থাকবেন। আল্লাহ যেমন এদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শেখ হাসিনার কোনও বিকল্প বানান নি, তেমনি মেরিন একাডেমির কম্যান্ডেন্ট হিসাবে আমাদের সাজিদ ভাইয়ের কোনও বিকল্প নাই!
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে তিনি যখন এই মহান দায়িত্ব অন্য একজনের হাতে অর্পণ করে যান তখনও যে সরকারী আদেশটি লিখে যান তা দেখলে পিলে চমকে যায়। সরকারি সেই আদেশ নামায় শেষের প্যারাটিতে তিনি লেখেন, নিম্ন স্বাক্ষরকারীর এক্সটেনশনের আবেদনটি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে, কাজেই তিনি তার দায়িত্ব পুন:গ্রহণের জন্যে স্ট্যান্ডবাই রয়েছেন।
আসলে পুরো রাষ্ট্রটিকেই সাজিদ ভাইয়েরা নিজ নিজ পৈতৃক সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছেন! যতদূর জানতে পেরেছি উনার পরিবার এখনও কম্যান্ডেন্টের জন্যে বরাদ্দকৃত সেই বাসায় অবস্থান করছেন। অর্থাৎ উনি এখনও মেরিন একাডেমির স্ট্যান্ডবাই জমিদার বা জমাদ্দার!
মগের মুল্লুকটা দেখেন! নিজের জমিদারি ছেড়ে যাওয়ার আগে পরবর্তী কেয়ার টেকারকে অফিসিয়ালি জানিয়ে যাচ্ছেন যে উনার এই প্রস্থান সাময়িক, জমিদারির কাগজপত্রে সামান্য ঝামেলা আছে, সেটাও অচিরেই ঠিক হয়ে যাবে। কাজেই কেয়ারটেকার বাছাধন! এটাকে ‘পরের-জায়গা-পরের-জমি’ ভাইবা কিছুদিন থাক, নিজেরে আবার জমিদার ভাইবা বইসো না!
ইন্ডিয়া যে প্রতিষ্ঠান নিয়ে গর্ব করে তার মধ্যে আইআইটি অন্যতম। সেই প্রতিষ্ঠানের এলামনাইগণ গুগল সহ বিশ্বের নামীদামী প্রতিষ্ঠানের সিইও সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অবস্থান নিয়েছেন। সেখানে পাশাপাশি জায়গায় উইপোকাদের দেশের (অমিত শাহের কথামত) আরেকটি প্রতিষ্ঠানের ছায়া তারা দেখতে পান। এরাও অনেকটা উইপোকাদের মতই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ঢুকে পড়ছে! এই প্রতিষ্ঠানটিই বুয়েট। ইন্ডিয়ার জন্যে যেমন আইআইটি বাংলাদেশের জন্যে তেমনি বুয়েট! সবগুলোকেই শেষ করেছে, এটিই এখনও অক্ষত আছে।
এখানে উল্লেখ্য, গবেষণা সহ কিছু ক্যাটাগরিতে বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির তালিকায় বুয়েট পিছিয়ে থাকলেও এখান থেকেও শ্রেষ্ঠ মানের দক্ষ জনশক্তি ইনডিভিজুয়াল ক্যাপাসিটিতে তৈরি হয়- এই ম্যাসেজটি বাইরের বিশ্বে ছড়িয়ে গেছে কিংবা এর এলামনাইগণ এই ম্যাসেজটি ছড়াতে সক্ষম হয়েছেন। নাসার কর্তাগণও এই বুয়েটের নাম জানে। সেটাই অমিত শাহদের জন্যে চিন্তার বিষয়!
রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিকভাবে দেশটিকে কব্জা করলেও কোথাও যেন একটা ‘কিছু’ রয়ে গেছে! সেটাই বুয়েটের বর্তমান এবং প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীগণ দেখিয়ে দিয়েছেন। এরা অনেক মন্দ কথা শুনেছেন, শিবির তো আছেই হিযবুত তাহরীর বলেও গালি খেয়েছে। বুয়েট মিনি পাকিস্তান হয়ে পড়েছে – এমন কথাও শুনেছে। তারপরেও একটুও ছাড় দেয় নি।
বুয়েটের ছাত্রছাত্রীদের ছাত্র রাজনীতি গেলাতে চায় আওয়ামী আদালত। ভিসি মহোদয়ের মনোবাঞ্ছাও তাই। ভিসি বলেছেন, ছাত্রলীগের ভালো কাজগুলো দেখলে ছাত্রছাত্রীরা উৎসাহ পাবে। কিন্তু সেখানকার ৯৯.৯৯৯ ভাগ ছাত্র-ছাত্রী তাদের মুখে তুলে দেওয়া এই দ্রব্যটিকে উগলে দিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সাবজেক্টে ৫ বার ফেল মারা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম এবং হাড়িভাঙ্গা ডিগ্রি কলেজের ছাত্রলীগ নেতা সহ সমগোত্রীয়রা যেকোনো ভাবেই তাদের কথায় নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতি শুরু করতে বদ্ধ পরিকর।
সারা দেশ থেকে যারা নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিকে ঝাটিয়ে বিদায় করেছে তারাই এখন বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির জন্যে মায়া কান্না শুরু করেছে! সরকার সমর্থক বুদ্ধিজীবীকুল শেয়ালরা এক সঙ্গে হুক্কা হুয়া শুরু করেছে। বুয়েটে গুণ্ডালীগের রাজনীতি না থাকলে নাকি সেটা জঙ্গিদের হাতে চলে যাবে। অথচ জঙ্গিবাদ সহ সকল নাশকতামূলক কাজের জন্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারের নানা গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে। তারা কি তাদের প্রফেশনাল কাজে (গোয়েন্দাগিরির কাজে) বুয়েটে যেতে পারছেন না? তবে কেন এই অপ প্রচার? এদের আসল মতলবটা কী?
নিজের মগজটাকে সামান্য খাটালেই এই সকল জ্ঞানপাপীদের আসল উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়ে পড়ে। এখন হয়তো এরা নিজেরাই এই সব কথিত জঙ্গি গোষ্ঠী সৃষ্টি করে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী দের জব্দ করতে কিংবা তাদের কণ্ঠকে স্তব্ধ করতে চেষ্টা করবে। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের এই ব্যাপারে চূড়ান্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে হবে।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করে তাদের এক সার্ভে রিপোর্টের কথা প্রকাশ করেছেন! অনলাইন সেই সার্ভেতে দেখা যায়, বুয়েটের মোট ৫,৮৩৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে স্বাক্ষর করেছেন ৫,৬৮৩ জন। অর্থাৎ ৯৭ শতাংশ শিক্ষার্থীই ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান করছেন। এছাড়া ছাত্রলীগের অবস্থানের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাত্র ৫ থেকে ৬ জন। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের অবস্থানের বিরুদ্ধে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন মাত্র একজন। ইন্টারেস্টিং বিষয় হচ্ছে এই ৫,৮৩৪ জন ছাত্রছাত্রীদের বয়স ১৯ থেকে ২৩ এর মধ্যে। ১৬ বছর আগে এদের বয়স ছিল ৩ থেকে ৭। অর্থাৎ এদের পুরু গ্রুমিংটি হয়েছে জাফর ইকবালদের চেতনার টেবলেট সেবন করে। বুয়েটে যারা ভর্তি হয়েছেন তাদের অধিকাংশই বাংলা মাধ্যমে দেশীয় কারিক্যুলামে লেখাপড়া করে এসেছেন। অর্থাৎ এরা যে পাঠ্যপুস্তক পড়ে বড় হয়েছে সেই পাঠ্যপুস্তকগুলো জাফর ইকবালদের পুরো নিয়ন্ত্রণে প্রকাশিত হয়েছে! আউটকাম সত্যি সত্যি ইন্টারেস্টিং। জাফর ইকবালরা যা গেলাতে চেয়েছিলেন, এই ছেলেমেয়েরা তা গেলে নাই। মনের সেই দুঃখ থেকেই এদেরকে শিবির আর হিযবুত তাহরির বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে! বুয়েট সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস চেষ্টার পেছনে একটা সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য রয়েছে!
আমাদের দেশের দেড়-দুই কোটি মানুষ কায়িক শ্রম দিয়ে যে ডলার দেশে আনে সেটা পাশের দেশের কয়েক লাখ এক্সিকিউটিভ এসে নিয়ে যায়। বাংলাদেশে চাকুরি করা ইন্ডিয়ানদের সংখ্যাটি ২৬ লাখ, সেটি ভারতের পত্র-পত্রিকাতেই এসেছে।
বিশেষ চেতনার বটিকা সেবন করে আমরা দেশের নানা প্রান্তে হাড়ি ভাঙ্গা কলেজের ছাত্রলীগ নেতার মত মানিক-রতন তৈরি করব, ৫ বার ফেল্টুস সাদ্দামের মত ছেলেরা ছাত্র রাজনীতির নিয়ন্ত্রক হবে, এরাই একদিন মন্ত্রী হবে! এদের কেউ কেউ বাইরে এসে বিদেশিদের সামনে কথা বলা শুরু করলে উপস্থিত দেশীয় ভাইগণ বলতে থাকেন, হে ধরণী তুমি দুই ভাগ হও!
অপরদিকে কোটি কোটি বেকার পোলাপান সোনার বাংলা ছাড়ার জন্যে পাগল হয়ে পড়বে। ইউরোপে বা মালয়েশিয়ায় পাড়ি দিতে গিয়ে ভূমধ্যসাগরে অথবা আন্দামানে হাবুডুবু খাবে, সেই নয়নাভিরাম দৃশ্য বিশ্বমিডিয়ায় দেখে আমাদের চোখ-মুখ-অন্তর সবই তৃপ্ত হবে। নেশাগ্রস্ত হয়ে দেশের ভেতরে অভিশপ্ত বেকার জীবন কাটাবে। দেশের পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাটিকে তাই এভাবে চেতনায়িত করা হচ্ছে। বুয়েট আর হাড়িভাঙ্গা ডিগ্রি কলেজ তখন একাকার হয়ে পড়বে!
কাজেই পলিসিটি বা বুদ্ধিটি সেই হীরক রাজার, “এরা যত বেশি জানবে, তত কম মানবে!”
লেখক: মেরিন ইঞ্জিনিয়ার, লেখক ও গবেষক