আইন ও নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্বর্ণের চাবি, চা পাতার প্রতীক ও উপহার সামগ্রী জনসমক্ষে গ্রহন করলেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। শুক্রবার (৩ মে) রাতে মৌলভীবাজার শিল্পকলা একাডেমী অডিটোরিয়ামে মৌলভীবাজার পৌরসভার উদ্যোগে দেয়া নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এই উপহার সামগ্রী গ্রহন করে। একই সাথে তার সফরসঙ্গী অ্যাটর্নি জেনারেল, সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের রেজিস্ট্রাররা ও অন্যান্য কর্মকর্তারাও মঞ্চে উপহার গ্রহণ করে। বিচারকদের তৈরি করা নীতিমালার ১২নং ধারায় বলা হয়েছে, একজন বিচারক তার পরিবার পরিজন ব্যতীত অন্য কারও নিকট হতে কোনো প্রকারের উপহার সামগ্রী গ্রহন করবে না এবং তার অফিসের কর্মচারীদের উক্ত কাজ হতে বিরত রাখবে। অথচ এই নীতিমালা ভেঙে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মোঃ ফজলুর রহমানের উপহার সামগ্রী গ্ৰহণ করেন। এমনকি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে মঞ্চে ছিলেন মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী মোঃ কামাল হোসেন। জানা যায়, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান মৌলভীবাজারে আগমন উপলক্ষে নাগরিক সম্বর্ধনার আয়োজন করে মৌলভীবাজার পৌরসভা। সংবর্ধিত অতিথির সংগে উপস্থিত থাকবেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
এই সংবর্ধনাকে কেন্দ্র করে মৌলভীবাজার শহরের তোড়ন নির্মাণ করা হয়। বিলবোর্ড সাজানো হয় শহর। আলোকসজ্জা করা হয় অনুষ্ঠানস্থল মৌলভীবাজার শিল্পকলা একাডেমী। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শুরু হয় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এর উপর নির্মিত ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। পরে আলোচনা সভা শুরু হয়। মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মোঃ ফজলুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, প্রধান বিচারপতির সহধর্মীনি নাফিসা বানু, মৌলভীবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আল-মাহমুদ ফায়জুল কবির, জেলা প্রশাসক ড. উর্মী বিনতে সালাম, পুলিশ সুপার মোঃ মনজুর রহমান, মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিসবাহুর রহমান, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ও চেম্বারের সভাপতি মো. কামাল হোসেন, কুলাউড়া পৌরসভার মেয়র শিপার উদ্দিন, জেলা বারের সভাপতি কামাল উদ্দিন, এডভোকেট মুজিবুর রহমান ও শান্তি পদ ঘোষ প্রমুখ। এসময় এডভোকেট শান্তি পদ ঘোষ তার বক্তব্য বলেন, একজন বিচারপতি নাগরিক সংবর্ধনা নিবেন বিষয়টি কতটুকু সমিচিন। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান তার বক্তব্যে শুরুতে এই প্রশ্নের উত্তর স্পষ্ট করে বলেন, বিচারকরা কখনো কৈফিয়ত দিতে পারেন না। বিচারকের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেন জবাব দিতে পারেন না। এই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। কয়েকদিন আগে ভারতের প্রধান বিচারপতিও গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছেন। তবে এটা শুধু প্রধান বিচারপতি করতে পারবেন কারণ তিনি দেশের বিচার বিভাগের প্রতিনিধিত্ব করছেন। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের কথা স্বরণ করে বলেন, এখন পুলিশ সাপ্তাহ ও ডিসি কনফারেন্সেও প্রধান বিচারপতি বক্তব্য রাখছেন। এখন দিন পাল্টাচ্ছে। যেহেতু পুলিশ ও প্রশাসনের সাথে আমাদের কিছু কাজ আছে তাই এটা প্রয়োজন। তবে অন্য কোনো বিচারক জনসমক্ষে বক্তব্য রাখতে পারবেন না। শুধু এটা পারবেন প্রধান বিচারপতি। তাই আজকের নাগরিক সংবর্ধনায় চলে এলাম।