‘বাংলাদেশ আজ কাঁটাতারে ঝুলছে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, অনেক বছর আগে প্রতীক ছিল ফেলানি। ফেলানি যেমন কাঁটাতারে ঝুলছিল, আজ বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব তেমন কাঁটাতারে ঝুলছে। এই কাঁটাতার কাটতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার ক্ষমতা কারও নেই।
শুক্রবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের একটি বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এসব কথা বলেন।
‘বিশ্ব মা দিবস’ উপলক্ষে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নবী উল্লাহসহ কারাবন্দী নেতাদের মুক্তির দাবিতে মহানগর দক্ষিণ বিএনপি এই সমাবেশ করে।
গয়েশ্বর রায় বলেন, ‘একটু আগে দেখলাম, ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন, বিএনপি চলে রিমোট কন্ট্রোলে।’ তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, বিএনপি তো রিমোট কন্ট্রোলেই চলে। রিমোট কন্ট্রোলটা কার হাতে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার হাতে, নয়তো–বা তারেক রহমানের হাতে। কিন্তু আপনাদের রিমোট কন্ট্রোলটা কোথায়। আপনার সরকারের রিমোট কন্ট্রোলটা কার হাতে।’
গয়েশ্বর রায় আরও বলেন, ‘মোদির হাতে, না অজিত দোভালের হাতে, না র-এর প্রধানের হাতে। তাদের রিমোট কন্ট্রোলেই তো আপনাদের চলতে হয়।’
গয়েশ্বর রায় বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছিলেন, সারা বিশ্বের মানুষ যেভাবে গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে ষড়যন্ত্র করতেছিল, ভারত যদি আমাদের পাশে না থাকত, এই নির্বাচন আমরা করতে পারতাম না। তাহলে ভারতই আপনাদের রাখে। তার মানে ‘গণতন্ত্র’ বলতে আমরা বুঝলাম কী। কাদের সাহেবের কথায় মনে হয় ডেমোক্রেসি মিনস বাই দ্য ইন্ডিয়া, ফর দ্য ইন্ডিয়া, অব দ্য ইন্ডিয়া!’
প্রতিনিয়ত সীমান্ত হত্যার ঘটনার উল্লেখ করে গয়েশ্বর রায় আরও বলেন, ‘আগে সীমান্তরক্ষীদের নাম ছিল বিডিআর, বাংলাদেশ রাইফেল। আর এখন হচ্ছে বর্ডার গার্ড, রাইফেল নেই। রাইফেল নেই তো প্রতিদিন তারা শখ করে শিকার করে আমার দেশের মানুষকে। আমাদের জোয়ানরা মারা যান, পতাকা বৈঠক করে লাশটা ফেরত নেন, লজ্জা লাগে। পূর্বাঞ্চলে কী হচ্ছে। সেদিকে নজর নেই।’
দেশ ও দেশের স্বাধীনতাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে উল্লেখ করে গয়েশ্বর বলেন, এই স্বাধীনতা যদি রক্ষা করতে হয় তাহলে একাত্তরের মতোই গর্জে উঠতে হবে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য, শহীদ জিয়ার বহুদলীয় গণতন্ত্র, খালেদা জিয়ার সংসদীয় গণতন্ত্রকে উদ্ধার করার জন্য আজ তারেক রহমান নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
গয়েশ্বর রায় বলেন, ‘আমাদের হতাশার কোনো কারণ নেই। আমাদের কর্মীরা ক্লান্ত, কিন্তু হতাশ নন। এত জেল–জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করে তারা এখনো বুক টান করে দাঁড়িয়ে আছে স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য। এই স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার ক্ষমতা প্রতিবেশীদের নেই, কারও নেই। আর প্রতিবেশীদের দালালি করে বেশি দিন টিকতে পারবেন না।’
উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘একটা ডামি নির্বাচন হচ্ছে। ফালতু নির্বাচন। বিএনপি যে এই নির্বাচন বর্জন করেছে, জনগণ তাতে সমর্থন দিয়েছে। এ জন্য দেশের জনগণকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, স্বেচ্ছাসেবক দলের এস এম জিলানি, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম, যুবদলের আবদুল মোনায়েম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ইশরাক হোসেন, উত্তর বিএনপির আমিনুল হক।
সমাবেশ শেষে নয়াপল্টন থেকে একটি মিছিল বের হয়। এতে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী অংশ নেন। মিছিলটি নাইটিঙ্গেল ও কাকরাইল মোড় হয়ে পল্টন ও ফকিরাপুল মোড় ঘুরে আবার নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়।