বিদ্যুতের দাম বছরে ৪ বার বাড়বে

0
47

বছরে বিদ্যুতের দাম চারবার করে বাড়িয়ে আগামী তিন বছরের মধ্যে সরকার এই খাতের সব ভর্তুকি তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।

ঢাকায় সফররত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৃহস্পতিবারের বৈঠকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা এ পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন।

বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যুতের দাম অল্প অল্প করে বাড়ানো হবে, যেন গ্রাহকরা হঠাৎ করে ধাক্কা না খান।

এ ছাড়া গ্যাসের ভর্তুকিও ধীরে ধীরে প্রত্যাহার করা হবে বলে জানান তারা।

কর্মকর্তারা আরও জানান, আইএমএফের দলটি বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদকদের (ইন্ডিপেডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস) বকেয়া বিল এবং বন্ডের মাধ্যমে তাদের কত টাকা পরিশোধ করা হয়েছে তা জানতে চান।

এদিকে, বাংলাদেশ কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন (ক্যাব) গতকাল অভিযোগ করে বলেছে, সরকার কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য বিদ্যুৎ ও অন্যান্য জ্বালানির দাম বাড়াতে যাচ্ছে।

তারা আরও বলেছে, সরকার অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করলে এ খাতে ভর্তুকি দেওয়ার প্রয়োজনই হতো না।

ক্যাব মোট ১৩টি সুপারিশ করেছে, যার মধ্যে আছে প্রতিযোগিতাবিহীন বিনিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা, যেন সরকারকে দাম বাড়াতে না হয়।

চার দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার ঋণের তৃতীয় কিস্তির আগে পর্যালোচনার জন্য আইএমএফের প্রতিনিধিদল গত ২৩ এপ্রিল ঢাকায় আসে। পর্যালোচনা সফল হলে ঋণের তৃতীয় কিস্তি পাওয়া যাবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের সময় আইএমএফের দল সরকারকে ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের ওপর ভর্তুকি কমাতে বলেছে।

গত বছরের জানুয়ারিতে আইএমএফের চার দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার ঋণ কর্মসূচিতে প্রবেশের পর সরকার কয়েকবার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে।

২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের ওপর সরকারি ভর্তুকি প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি বরাদ্দ ৮৪ হাজার ৫৪২ কোটি টাকা এবং আগামী বছরের বাজেটেও প্রায় একই পরিমাণ বরাদ্দ হতে পারে।

চলতি অর্থবছরে বিদ্যুতের ওপর ভর্তুকি প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা এবং গ্যাসে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা।

কর্মকর্তারা জানান, অর্থ বিভাগ চলতি অর্থবছর বিদ্যুৎ বিভাগকে প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকার বন্ড ও নগদ অর্থ দিয়েছে। কিন্তু, জানুয়ারি পর্যন্ত অনাদায়ী বিলের পরিমাণ ছিল প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা।

বিদ্যুৎ বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো সত্ত্বেও প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে সাত থেকে আট টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ‘অনাদায়ী বিল জমা হওয়ার জন্য এটিই প্রধান কারণ। এবার আইএমএফ মিশন অনাদায়ী ও ভর্তুকির বোঝা কমাতে আমাদের পরিকল্পনা জানতে চেয়েছিল।’

ওই কর্মকর্তা বলেন, সরকার জ্বালানি তেলের মতো বিদ্যুৎ ও অন্যান্য জ্বালানি খাতের ভর্তুকি প্রত্যাহার করবে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কোনো ভর্তুকি লাগবে কি না, তাও জানতে চেয়েছে আইএমএফ প্রতিনিধিদল।

ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা তাদের বলেছি, রূপপুর প্ল্যান্টের জন্য প্রতি ইউনিট উৎপাদন খরচ কম হবে এবং কোনো ভর্তুকি লাগবে না।’

আগামী মার্চে দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াটের রূপপুর প্ল্যান্টের প্রথম ইউনিট উৎপাদন শুরু করবে বলে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান।

আইএমএফ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমিয়ে এ অর্থ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচিতে নেওয়ার ওপর জোর দিয়ে আসছে।

অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, আগামী ৬ ও ৭ মে অর্থ বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যৌথ বৈঠকের মাধ্যমে আইএমএফ মিশন তাদের সফর শেষ করবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here