ফ্রান্সে অভিবাসীদের কাছে তিন বছরে প্রায় ৩০ লাখ রেসিডেন্স কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ বিভিন্ন ভুয়া এবং জাল নথি বিক্রি করেছে একটি চক্র। সম্প্রতি ফ্রান্স কর্তৃপক্ষের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে এমন বাস্তব চিত্র। জালিয়াত চক্রটি ভুয়া এবং জাল নথি তৈরি করে সেগুলো আবার একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অভিবাসীদের কাছে বিক্রি করে। ইতিমধ্যে ফ্রান্স প্রশাসন তিন ব্যক্তিকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে।
অভিবাসী পাচার প্রতিরোধ বিষয়ক বিশেষ ফরাসি দপ্তর (অল্টিম) এর মুখপাত্র ফাব্রিস সউনের বুধবার (৩ এপ্রিল) গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “অভিযুক্তরা ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ফরাসি ভাষায় একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেছিল। তারা সেখানে রেসিডেন্স পারমিট, হেলথ ইন্সুরেন্স কার্ড বা কার্ত ভিতাল, ড্রাইভিং লাইসেন্স, প্রশাসনিক ঠিকানার প্রমাণ, বেতনের রশিদসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ নথি জাল করে বিক্রি করত।”
তিনি আরও জানান, অভিযুক্তদের মধ্যে দুজনকে ফ্রান্সের নরমান্দি অঞ্চল থেকে এবং তৃতীয় ব্যক্তিকে স্পেন সীমান্তবর্তী তুলুজ শহর থেকে আটক করে ফরাসি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের সবার বয়স বিশের মধ্যে। তাদেরকে বর্তমানে বিচারিক ব্যবস্থার তত্ত্বাবধানে আটক রাখা হয়েছে। ২০২২ সালের আগস্টে একটি সাইবার টহলের সময় ওই ওয়েবসাইটটি খুঁজে পেয়েছিল। ২০২০ সালের শেষ দিক থেকে অল্টিম অনলাইনে নথি জালিয়াতি ও অন্যান্য অনিয়ম তদন্ত করতে সাইবার তদন্তকারীদের একটি দলকে নিযুক্ত করেছে। অল্টিমের তদন্তকারীরা অনুমান করছেন, ওয়েব সাইটটিতে প্রতিদিন ৫৪ হাজার লোক ঢুকেছে।
গত সপ্তাহে এটি বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত সাইটিতে অন্তত ২৭ লাখ নথি তৈরি করে বিক্রি করা হয়েছে।
অল্টিমের কমিশনার ফাব্রিস সউনের উল্লেখ করেন, “এই সাইটের ডিজাইনার এবং অ্যাডমিনিস্ট্রেটররা মূলত গেমিং এবং হ্যাংকিংয়ে দক্ষ। তারা অত্যন্ত মেধাবী। তাদের ডিজিটাল টুল নিয়ে বেশ দক্ষতা আছে। তবে তারা মাদক পাচারকারী নয়।”
কমিশনার ফাব্রিস যোগ করেন, তারা নথি বিক্রির পাশাপাশি ৩০ ইউরোর বিনিময়ে বিভিন্ন প্রশাসনিক সেবা দিত। তাদের কাছ থেকে প্রায় ৩০ হাজার ইউরোর ক্রিপ্টোকারেন্সি জব্দ করা হয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে তিন ব্যক্তি তাদের অপরাধের সত্যতা স্বীকার করেছে। তিনজনকে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর প্যারিসের আদালতে তোলা হবে। অল্টিমের মতে, চক্রটির প্রাথমিক লক্ষ্য অর্থ উপার্জন ছিল না। তাদের লক্ষ্য ছিল কর্তৃপক্ষের কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করা। তারা নির্দিষ্ট কোনো জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্যবস্তু করেনি। অভিবাসী, পলাতক আসামি এবং দুর্বৃত্তরাসহ সবাই তাদের গ্রাহক ছিল।