দীর্ঘদিন ধরে চলা সরকার পতন আন্দোলনে কাঙ্ক্ষিত ফল না আসায় দলের অভ্যন্তরে কৌশলগত পরিবর্তন নিয়ে পর্যালোচনা চলছে বিএনপিতে।
বিগত ১৫ বছরের কার্যক্রমের মূল্যায়ন এবং এর ভিত্তিতে সংগঠন পুনর্গঠন ও দলের জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের বিষয়ে নজর দলটির। পাশাপাশি কূটনৈতিক তৎপরতায় ভিন্নতা আনা হচ্ছে। পূর্বমুখী কূটনীতি জোরদারের পাশাপাশি পশ্চিমের সঙ্গেও নিবিড় সম্পর্ক চায়।
এজন্য বিদেশবিষয়ক কমিটিও (ফরেন অ্যাফেয়ার্স) ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেখানে দক্ষিণ এশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ভৌগোলিক সীমানা অনুযায়ী আলাদা আলাদা ‘ডেক্সভিত্তিক উইং’ গঠনের কথাও ভাবছে দলটির হাইকমান্ড।
বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশের রাজনীতি ঘিরে এশিয়ার পরাশক্তিগুলোর অবস্থানও পর্যালোচনা করছে বিএনপি। ইতোমধ্যে দলটি বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় আনার পেছনে ভারত, চীন ও রাশিয়া সহায়তা করেছে বলে অভিযোগ করেছে। এসব পরাশক্তির সঙ্গে আগামী দিনে বিএনপির সম্পর্কের নীতি কী হবে তা নিয়ে ভাবছেন দলের শীর্ষ নেতারা।
পরাশক্তি দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে রাজনৈতিক কৌশল ঠিক করতে হবে বলে মনে করছেন দলের সিনিয়র নেতারা। এজন্য কূটনৈতিক তৎপরতায় ভিন্নতা আসতে পারে। দলটির বিদেশ বিষয়ক কমিটিকেও (ফরেন অ্যাফেয়ার্স) ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে বিদেশবিষয়ক কমিটির বর্তমান চেয়ারম্যানের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চায়।
এজন্য বর্তমান চেয়ারম্যানকে রেখেই বিদেশ বিষয়ক কমিটিতে নতুন করে কূটনীতিতে অভিজ্ঞ একজনকে সদস্য সচিব করা হতে পারে। এছাড়াও এ কমিটির আওতায় দক্ষিণ এশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ভৌগোলিক সীমানা অনুযায়ী আলাদা আলাদা ‘ডেক্সভিত্তিক উইং’ গঠনের কথাও ভাবছে। এসব উইংয়েও অভিজ্ঞদের প্রাধান্য দেওয়া হবে বলে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে।
সূত্রমতে, নির্বাচনের পর চীনসহ কয়েকটি দেশের সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বৈঠক হয়েছে। ওই আলোচনা থেকে দলটির নেতাদের মনে হয়েছে, বিএনপির বিষয়ে চীনের দৃষ্টিভঙ্গির কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। তাই বিএনপিও পূর্বমুখী কূটনীতি জোরদার করতে আগ্রহী।
এছাড়া বাংলাদেশের বিগত কয়েকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে বলে দলটির নেতারা মনে করছেন। সেজন্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে থেকেই ভারতের সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছেন দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের অনেকে।
দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের অনেকেই ভারতের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সমালোচনার মনোভাব ধরে রাখার পক্ষে শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে মত দিয়েছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বিএনপি নিবিড় যোগাযোগ তৈরি করতে চায়। পশ্চিমাদের মধ্যে যাদের সঙ্গে বিএনপির কিছুটা দূরত্ব আছে তা কাটিয়ে তোলার পরিকল্পনা আছে দলটির। মূলত পর্দার আড়ালে কৌশলগত আলোচনাকে এখন বেশি প্রাধান্য দেবে বিএনপি।