বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) রাজনৈতিক সংগঠন ও এর কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। সোমবার বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি কেএম জাহিদ সারওয়ার কাজলের সমন্বয়ে গঠিত অবকাশকালীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রিট আবেদনের শুনানি গ্রহণ করে এ আদেশ দেন। রুলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, বুয়েটের ভিসি ও রেজিস্ট্রারকে জবাব দিতে বলা হয়েছে। এর ফলে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি চলতে কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। আদালতে বক্তব্য রাখেন- এডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন। সঙ্গে ছিলেন এডভোকেট মোহাম্মদ জগলুল কবির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন- ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম খান দাউদ।
আদালতে শুনানিতে আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, রাজনৈতিক সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা আইনগতভাবে তাদের নেই। একটি সংগঠনকে এভাবে বন্ধ করার রাইট বা এখতিয়ার তাদের নেই। আদালত শুনানি গ্রহণ করে এ রুল ও স্থগিতাদেশ দেন।
শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, সংবিধানের ৩৭, ৩৮ ও ৩৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের নোটিশ দেয়ার কোনো ভিত্তি নেই। সমাবেশ, রাজনৈতিক দল করার এবং বাক-স্বাধীনতার অধিকার মৌলিক অধিকার হিসেবে দেয়া আছে। বুয়েট অর্ডিন্যান্স, ১৯৬১ অনুসারে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলা আছে। নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা নেই। তারপরও ওই নোটিশকে সম্মান করে আসছিল ছাত্রলীগ। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিতে গেলে বাধা দেয়া হয়। এরপর রাজনীতি নিষিদ্ধের নোটিশ যখন আমাকে দেখানো হলো, আমি বললাম, এটা মৌলিক অধিকার ও বুয়েট অর্ডিন্যান্স পরিপন্থি। আদালত রুল জারি করেছেন এবং বুয়েটের বিজ্ঞপ্তি স্থগিত করেছেন। যার ফলে বুয়েটে রাজনৈতিক কার্যক্রমে আর কোনো বাধা থাকলো না। আদালতে শুনানির সময় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন।
২০১৯ সালের ১১ই অক্টোবর বুয়েট কর্তৃপক্ষের দেয়া ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তির’ বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বুয়েটের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম আদালতে রিট আবেদন করেন। তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেয়াকে কেন্দ্র করে ২০১৯ সালে আবরার ফাহাদ নামে এক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তখন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৯ সালের ১১ই অক্টোবর একটি জরুরি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। বুয়েটের ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল রাজনৈতিক সংগঠন এবং এর কার্যক্রম কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে নিষিদ্ধ করা হলো। এরপর থেকে বুয়েটে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ছিল।