চকের ইফতার দাম বেড়েছে ক্রেতা কম

0
50

চক বাজারের ইফতার। রাস্তা জুড়ে বাহারি পণ্যে সাজানো। বিক্রেতারা হাঁকডাক করে বিক্রি করছেন। পাঁচ টাকা থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন পণ্যের ইফতার সেখানে বিক্রি হয়। তবে সবচেয়ে বেশি দাম সুতা কাবাবের। এক কেজি সুতা কাবাব বিক্রি হচ্ছে ১২০০ টাকায়। গত বছর ছিল ১০০০ টাকা। আর সবচেয়ে কম দাম পিয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ ও পাকোরার। প্রতি পিস ৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। দাম না বাড়লেও এই পণ্য আকারে ছোট হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।

খরচ বাড়ায় তাদের লাভও কম হচ্ছে। তবে অন্যান্য প্রায় সব ধরনের ইফতারি পণ্যের দাম আগের চেয়ে বেড়েছে। এ ছাড়া গতকাল ইফতারের প্রথম দিন হিসেবে মানুষের ভিড় কম ছিল বলেও জানিয়েছেন বিক্রেতারা।

পুরান ঢাকার এই ইফতার বাজারের ঐতিহ্য চার শতাব্দীর। অতীতে এখানে ইফতার করাকে বলা হতো ‘রোজা খোলাই’। দেশব্যাপী চক বাজারের এই ইফতার বাজারের বেশ খ্যাতি রয়েছে। পবিত্র রমজানে দূর-দুরান্ত থেকে মানুষ এখান থেকে ইফতার কিনতে আসে। গতকাল পবিত্র রমজানের প্রথম দিনে দুপুর থেকেই তোড়জোড় ছিল চক বাজারের ইফতার বিক্রেতাদের। রাস্তার উপর টেবিল বসিয়ে পসরা দিয়ে রেখেছেন বাহারি ইফতার। এসব খাবারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ‘বড়বাপের পোলায় খায়, ঠোঙা ভইরা লইয়া যায়।’ এক বিক্রেতা জানান, এটি বানাতে মাংস, মাংসের কিমা, সুতি কাবাব, ডিম, মগজ, আলু, ডাবলি, বুটের ডাল, ঘি, কাঁচা ও শুকনো মরিচসহ ৩৬টি উপকরণ প্রয়োজন হয়। চকবাজারের দু’টি দোকানে এ বছরও বিশেষ এই খাবারটি প্রতি কেজি ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পুরান ঢাকার চক বাজারের ক্রেতারা অনেকেই শখের বসে ইফতার ক্রয় করতে আসেন। তবে গত বছরের তুলনায় এবার মানুষের ভিড় কম দেখা যায়। বিক্রেতারাও জানিয়েছেন তাদের বিক্রি কম হওয়ার কথা। কারণ হিসেবে বলছেন, নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির ছোঁয়া লেগেছে ইফতার বাজারে। সবধরনের ইফতার পণ্যের দামও বেড়েছে। রোজা এলেই শাহী পরোটার চাহিদা বাড়ে। এবার বেড়েছে দামও। গত রোজায় শাহী চিকেন পরোটা বিক্রি হয়েছিল ৫০ টাকা, এবার তা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। আর শাহী বিফ পরোটা ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। শাহী জিলাপির দামও আগের চেয়ে বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। এক কেজি শাহী জিলাপি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা, রেশমি জিলাপি ২০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। শাহী জিলাপি বিক্রেতা সাইফুল বলেন, চিনির দাম বড়েছে, তেলের দাম বেড়েছে। তাই জিলাপির দামও বাড়াতে হয়েছে। আমরা রোজায় অল্প লাভে বিক্রি করি। এবার প্রথম দিনে ক্রেতা কম বলেও জানান তিনি।

চক বাজারে আকর্ষণীয় পণ্যের মধ্যে চিকেন টিকা ও চিকেন হারিয়ানি রয়েছে। তবে তা এবার বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা করে। বিক্রেতা মো. রানা বলেন, গত বছর আমরা ১৫০ টাকা করে বিক্রি করেছিলাম। এবার ৩০ টাকা বাড়াতে হয়েছে। মাংসের দাম বেড়েছে। মসলার দাম বেড়েছে। আমাদের তো দাম না বাড়িয়ে উপায় নেই। কোয়েল রোস্ট বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে  ১০০ টাকা। যদিও গতবার তা ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। খাসির লেগ পিস (৭০০ গ্রাম) ১০০ টাকা দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ টাকা। আর চিকেন পিস বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা। এর দামও ৫০ থেকে ৭০ টাকা বেড়েছে।

বাহারি সব ইফতারের মধ্যে ডিম চপ (হাফ) ২০ টাকা, ডিম চপ (ফুল) ৪০ টাকা, জালি কাবাব ৫০ টাকা, টিকা কাবাব ৪০ টাকা, মুরগি কাবাব ৩০ টাকা, সাসলিক ৪০ টাকা, চিকেন বল ১৫ টাকা, গরুর কোপ্তা ২০ টাকা, গরুর টিকা ২০ টাকা, কলিজা সিংগাড়া ২০ টাকা, ভেজিটেবল রোল ৪০ টাকা, চিকেন রোল ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এসব পণ্যে কোনোটায় ৫ থেকে ১০ টাকা দাম বেড়েছে আবার কোনোটার আকার ছোট হয়েছে। চক বাজারে ৫ বছর ধরে এসব পণ্য বিক্রি করেন বাপ্পী। এর আগে তার চাচা ৬০ বছর এখানে ইফতার বিক্রি করেছেন। বাপ্পী বলেন, এখন মানুষের আর্থিক অবস্থা ভালো না। সবাই কম কম কিনছে। পিয়াজু, আলুর চপ, বেগুনির দাম ১০ টাকা করলে কেউ কিনতে চাইবে না। তাই ৫ টাকা রেখে আকারে একটু ছোট করে বিক্রি করছি। লাভও কম হচ্ছে এখন। আগে যেখানে ১ টাকা লাভ হতো এখন ৫০ পয়সা হচ্ছে। ইমরান তালুকদার নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, বাজারে সবকিছুর দাম বেশি। কিন্তু আমরা সেভাবে দাম বাড়াইনি। এরচেয়ে কম দামে বিক্রি করলে লাভ করা যাবে না। এবার ক্রেতাও কম। বেশি ক্রেতা থাকলে বেশি বিক্রি হয়। কম লাভ করলেও পুষিয়ে যায়। কিন্তু প্রথম দিনেই  মানুষ কম আসছে।

ইফতারে শরবতের জন্যও চক বাজারে মানুষ ভিড় করেন। এবার বেড়েছে শরবতের দামও। চক বাজারে পোস্তা বাদামের শরবত (হাফ লিটার) বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা, পোস্তা বাদামের শরবত (এক লিটার) ২০০ টাকা, মাঠা বিক্রি হচ্ছে (লিটার) ১০০ টাকা, মহব্বতের শরবত (লিটার) ২০০ টাকা ও ফালুদা (ছোট বাটি) বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা। এসব শরবতের দামও ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বেড়েছে।  শরবত বিক্রেতা সোহেল রানা বলেন, চিনির দাম বাড়ার কারণে শরবতের দাম কিছুটা বেশি। বিভিন্ন ফলও দিতে হয় শরবতে। ফলের দামও তো আগের থেকে বেড়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here