সোমবার বেলা প্রায় দেড়টা। রাজশাহী নগরের মাস্টারপাড়া সড়কের কাঁচাবাজার। দোকানি আসাদুজ্জামানের সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হয়েছেন ক্রেতা ইকবাল হোসেন। ক্রেতার দাবি, আগের দিন তিনি এই দোকান থেকে এক হালি লেবু কিনেছেন ৩০ টাকা দিয়ে। এক দিন পরে কী করে সেই লেবুর দাম ৪০ টাকা হলো? একই লেবু পাশের দোকানে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশ থেকে আরেকজন ক্রেতা বলে উঠলেন, এ দেশের বাজারের অবস্থায় এ রকমই। আজ যদি লেবুর দাম হালিতে ১০ টাকা বাড়ার খবর পায় তো কোলের ছেলে ফেলে এসে লেবু কিনতে লাইনে দাঁড়াবে।
রাজশাহীর এই বাজারে লেবুর দাম নিয়ে যখন এ রকম বসচা চলছে, তখন একজন লেবুবাগান মালিককে ফোন করলেন এই প্রতিবেদক। তিনি বললেন, গত রোববার তাঁর বাগান থেকে ২৪ টাকা হালি হিসেবে ব্যবসায়ীরা লেবু ভেঙে নিয়ে গেছেন। সেই লেবুই ৩০ কিলোমিটার দূরে রাজশাহীতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা হালিতে বিক্রি হচ্ছে। ১০–১২ দিন আগে এই লেবুর দাম ছিল ১২ টাকা। চার টাকা হালি ছিল এক মাস আগে। আর দুই মাস আগে কোনো দামই ছিল না। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বেনীপুর গ্রামে তাঁর ২০ বিঘা লেবুর বাগান রয়েছে। মে মাস থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তাঁর লেবুর কোনো দাম থাকে না। ব্যবসায়ী এসে বিনা পয়সায় লেবু ভেঙে নিয়ে যান। শুধু তা–ই নয়, তাঁর খামারের শ্রমিক দিয়ে লেবু গুনে দিতে হয়, গাড়িতে তুলে দিতে হয়। তা ছাড়া তাঁরা আর বাগানে আসবে না বলে হুমকি দেন।
ওই লেবুবাগানের মালিকের দাবি, বছরের আট মাস লেবুর কোনো দাম পাওয়া যায় না। সারা বছর পর এই রমজানের অপেক্ষায় বসে থাকতে হয়। কিন্তু এখন তো বাগানে লেবু বেশি নেই। সর্বসাকল্যে তাঁর বাগানে এখন হয়তো ছয় হাজার লেবু হবে। ১৫ দিন পর হয়তো আবার এক চালান উঠবে। এই হচ্ছে লেবুর ব্যবসা। দাম আছে আবার দাম নেই। কিন্তু শহরে সব সময় লেবু দামেই বিক্রি হয়।
লেবুর দরদাম জানার জন্য মঙ্গলবার রাজশাহী নগরের শিরোইল কাঁচাবাজারে গিয়ে আরেক অভিজ্ঞতা হলো। সবজি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলামের দোকানে কোনো সবজি নেই। তিনি শুধু এক ডালি লেবু নিয়ে বসে আছেন। বললেন, রোজার বাজার ধরার জন্য সবজি বাদ দিয়ে রাজশাহী নগরের খড়খড়ি বাজার থেকে শুধু লেবু কিনেছেন। বিক্রি করছেন ৩০ থেকে ৪০ টাকা হালি। আগের দিনে কত দাম ছিল, তিনি তা জানেন না।
রাজশাহী নগরের লক্ষ্মীপুর কাঁচাবাজারে লেবু বিক্রি করছিলেন মকবুল হোসেন। তিনিও দাবি করলেন, রোজার ব্যাপার না, এটা কাঁচাবাজার। সরবরাহের ওপর দাম ওঠে, সোমবার তিনি এই লেবু ৫০ থেকে ৬০ টাকা হালি বিক্রি করেছেন। মঙ্গলবার বিক্রি করেছেন ৩০ থেকে ৪০ টাকায়।
এক হালি লেবু কিনেছেন স্কুলশিক্ষক রেজিনা খাতুন। তিনি বললেন, এটা শুধু আমদানির ব্যাপার না, রোজার বাজার ধরার জন্য ব্যবসায়ীরা মুখিয়ে থাকে। পাঁচ থেকে ছয় দিন আগে রাজশাহীর সাহেববাজারে তিনি ২০ টাকা হালি লেবু কিনেছেন। তার কয়েক দিন আগে ছিল ১২ টাকা। রোজার কারণে লেবুর বাজারে আগুন লেগেছে।