বৈদেশিক সহায়তা প্রকল্পের ১০,৫০০ কোটি টাকা কাটছাঁট

0
47

সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি) আকার কমে দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকায়। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন দেশের শর্ত জুড়ে দেওয়ার আশঙ্কা থেকেই আরএডিপির আকার কমছে।

এজন্য অনেক বৈদেশিক প্রকল্প মাঝ পথে পরিকল্পনা কমিশন কাটছাঁট করে দিয়েছে। আরএডিপির নতুন আকারের মধ্যে সরকারি তহবিলের ১ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৬৫ দশমিক ৯২ শতাংশ।

এছাড়া বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৮৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বা ৩৪ দশমিক ০৮ শতাংশ। এক্ষেত্রে মূল এডিপি থেকে কাটছাঁট করা হচ্ছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের সাড়ে ৭ হাজার কোটি এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা বাদ যাচ্ছে।

তবে বরাদ্দ কমলেও বাড়ছে প্রকল্প সংখ্যা। গত মাসে পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত বৈঠকে আর এডিপির চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার (১২ মার্চ) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) বৈঠকে আরএডিপি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশকিছু বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে। এগুলো হলো দারিদ্র্য বিমোচনমূলক প্রকল্প, সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত প্রকল্প এবং বৈদেশিক অর্থায়নপুষ্ট প্রকল্প। এছাড়া পরিবহন ও যোগাযোগ অবকাঠামো, বিদ্যুৎ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নগর ও পল্লী অবকাঠামো, তথ্য ও প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য ও কৃষির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতের প্রকল্প অগ্রাধিকার পেয়েছে। ৭ জানুয়ারি  নির্বাচনের পরবর্তী সময়ে পশ্চিমা দেশগুলো নতুন করে সুষ্ঠু নির্বাচনের শর্ত উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অর্থ ছাড়ের সাথে যুক্ত করতে চাচ্ছে। আমরা এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।

তিনি আরও জানান, আরএডিপিতে নতুন প্রকল্প গ্রহণের চেয়ে চলমান প্রকল্প শেষ করার ওপর বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। তবে প্রকল্পে শেষ হতেও ডলার সংকটের কারণে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।

অর্থনীতিবিদ ও সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বাংলা আউটলুককে বলেন, দেশের বৈদেশিক রির্জাভ বাড়াতে অবশ্যই বৈদেশিক সাহায্যপ্রাপ্ত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। কিন্তু তা না করে সরকার বৈদেশিক সাহায্যপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলোর ব্যয় কাটছাঁটে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

তিনি আরও বলেন, সরকার এ পদক্ষেপ নিলে দেশের বৈদেশিক রির্জাভ আরও কমে যাবে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে যে মোট বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, তার মধ্যে ১৫টি সেক্টরের আওতায় প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ২ লাখ ২৩ হাজার ৫৫৩ কোটি ৩ লাখ টাকা। এছাড়া ৯টি উন্নয়ন সহায়তা খাতে মোট বরাদ্দ হচ্ছে ৩ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা এবং বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা খাতের থাকছে ১৮ হাজার ৫৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এসব মিলে মোট বরাদ্দ দাঁড়ায় ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা।

পাশাপাশি এই হিসাবের বাইরে বিভিন্ন স্বায়ত্ত্বশাসিত সংস্থা ও করপোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ৯ হাজার ৩৯১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। সর্বমোট সংশোধিত এডিপির আকার হবে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৯১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি বরাদ্দ ১ লাখ ৬৯ হাজার ৭০২ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তার ৮৪ হাজার ৬৮৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।

বর্ধিত সভা সূত্র জানায়, ৫৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সংশোধিত এডিপিতে সরকারি তহবিলের ক্ষেত্রে ৩৬টির বরাদ্দ কমছে। দুটির বরাদ্দ অপরিবর্তিত আছে এবং ২০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বরাদ্দ বেড়েছে। এদিকে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ হলো- স্থানীয় সরকার বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, রেলপথ মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, সেতু বিভাগ এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। এসবের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হবে মোট সংশোধিত এডিপির ৬৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

গত মাসের বর্ধিত সভায় জানানো হয়, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দসহ মোট প্রকল্প থাকছে ১ হাজার ৫৮০টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ ১ হাজার ৩৩৮টি, সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ৩৫টি, কারিগরি সহায়তা ১১৫টি এবং সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প ৯২টি। তবে মূল এডিপিতে মোট প্রকল্প সংখ্যা আছে ১ হাজার ৩৪০টি। ফলে তুলনামূলক বৃদ্ধি পাচ্ছে ২৪২টি প্রকল্প।

বর্ধিত সভায় অংশ নিয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, মূল এডিপির তুলনায় প্রস্তাবিত সংশোধিত এডিপিতে বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান বাবদ বরাদ্দের চাহিদা কম থাকায় ইআরডি থেকেও কম বরাদ্দ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আগামীতে বৈদেশিক অর্থের চাহিদা নির্ধারণের ক্ষেত্রে ইআরডি ও উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে আলোচনা করতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে অনুরোধ জানাচ্ছি। পাশাপাশি প্রকল্পের রেডিনেস না থাকায় বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয়। এজন্য ইআরডি, অর্থ বিভাগ এবং পরিকল্পনা কমিশন সম্মিলিতভাবে প্রজেক্ট রেডিনেস ক্রাইটেরিয়া নির্ধারণ প্রয়োজন। কেননা বরাদ্দ দেওয়া অর্থ ব্যয় করতে না পারলে পরে কমিটমেন্ট চার্জসহ অন্যান্য বিভিন্ন চার্জ পরিশোধ করতে হয়।

সমাপ্ত প্রকল্পের লক্ষ্য কমছে

চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে মূল এডিপির তুলনায় প্রকল্প সমাপ্তের লক্ষ্য কমছে। এক্ষেত্রে এডিপিতে ৩৪৬টি শেষ করার কথা ছিল। এর মধ্যে বিনিয়োগ ২৮৭, সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ১৭টি, কারিগরি সহায়তা ৩২টি এবং নিজস্ব অর্থায়নের ১০টি প্রকল্প। কিন্তু সংশোধিত এডিপিতে শেষ করার প্রকল্পের লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৩৩২টি।

এর মধ্যে বিনিয়োগ ২৭১টি, সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ১৯টি, কারিগরি সহায়তা ২৯ এবং স্ব-অর্থায়নের ১৩টি প্রকল্প রয়েছে। ফলে তুলনামূলক এ ক্ষেত্রে প্রকল্প কমছে ১৪টি প্রকল্প। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি) ৭৬টি প্রকল্পের তালিকা যুক্ত হচ্ছে সংশোধিত এডিপিতে। মূল এডিপিতে এ সংখ্যা ছিল ৭৯টি। ফলে কমছে ৩টি প্রকল্প।

এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের প্রকল্প থাকছে ৩১২টি। সংশোধিত এডিপিতে নতুন অননুমোদিত প্রকল্প যুক্ত হচ্ছে ৭৫৭টি, বৈদেশিক সহায়তার সুবিধার্থে অননুমোদিত প্রকল্প ২৩২টি এবং স্বায়ত্ত্বশাসিত সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্প থাকছে ৪০টি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here