স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে রোববার ঢাকা ছাড়েন সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। পরদিন সোমবার চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে রওনা দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর পর থেকেই রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন শুরু হয় তাহলে কি দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি দুদলের শীর্ষ নেতাদের ভরসা নেই?
বুধবার এই ইস্যুতে টকশোর আয়োজন করা হয় যমুনা টেলিভিশন।
সেখানে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অংশ নেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপকমিটির সদস্য মাহমুদ সালাহউদ্দীন চৌধুরী। অন্যদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে অংশ নেন দলটির সহআন্তর্জার্তিক বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা।
মির্জা ফখরুল চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে গেছেন, এটি কী অনাস্থা না অন্য কারণ?
প্রশ্নোত্তরে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, গত বছর দেশের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম। ওই সময় কিছু সরকারি দলের বন্ধু ফোন করে বলেন, আপনি বাংলাদেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন? আপনি বিদেশ যান। না হলে ভারতে গিয়ে চিকিৎসা নেন। দেশে অনেক খরচ হবে এবং চিকিৎসার মান ভালো না।
স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ প্রসঙ্গ টেনে রুমিন ফারহানা বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ বাদ দিলাম, দক্ষিণ এশিয়ায় সব থেকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ কম বাংলাদেশে। এতে বুঝা যায়, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতকে আমরা কোন চোখে দেখি।
উচ্চ বিত্ত, উচ্চ মধ্য বিত্ত পরিবারের কারো সন্তান দেশের সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করে না। নিজের সবটুকু জায়গা জমি বিক্রি করে হলেও সন্তানদের ইংরেজি ভার্সনে ভর্তি করান। আর চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোনো ভাবেই সরকারি হাসপাতালে ভর্তির প্রশ্ন উঠে না। যদি অল্প কিছু টাকা জমাতে পারে তাহলে ঘরের পাশের দেশ ইন্ডিয়া যাবে। এ অবস্থা কেন?
ডাক্তারদের ব্যাপারে আমার একটা অবজেকশন আছে? কারণ ২৫ বছর আমাকে রোগী দেখতে হয়েছে। বাংলাদেশের ডাক্তারদের যোগ্যতা নিয়ে আমার কোনো প্রশ্ন নেই। উনাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেন। কিন্তু চিকিৎসা তো ডাক্তার নির্ভর হতে পারে না। এখানে নার্স, পরিবেশ, ইনভেস্টিগেসন, জবাবদিহিতা এই জায়গাগুলোতে যখন ঘাটতি থেকে যায়, তখন চাইলেও একজন রোগীকে সুস্থ করে তুলবার জন্য সার্বিক পরিচর্যার যে বিষয়টা তা নিশ্চিত করা যায় না।
দ্বিতীয়ত হলো, বাংলাদেশে চিকিৎসা খরচে ১০০ টাকায় মাত্র ২৮ টাকা দেয় সরকার। আর জনগণকে ৭২ টাকা বহন করতে হয়। এটি বহন করতে গিয়ে কয়েক লক্ষ মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে চলে যায়। একে তো চিকিৎসার ব্যয় অতিরিক্তি, মান নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন, তৃতীয়ত ইনভেস্টিগেসন রিপোর্ট নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন এসব কিছু মিলিয়ে ভরসার জায়গাটা থাকে না বলে মন্তব্য করেন ব্যারিস্টার রুমিন।
বাংলাদেশে ওবায়দুল কাদের চিকিৎসা নিচ্ছেন না কেন? চিকিৎসা নিতে গিয়ে অনেকে মারা যাচ্ছেন এই ভয়ে, নাকি ভিআইপিদের জন্য ভালো চিকিৎসার দেশ বাংলাদেশ নয় ?
জবাবে মাহমুদ সালাহউদ্দীন চৌধুরী বলেন, বর্তমানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন এবং বিএনপি মহাসচিবও গেছেন খুবই সত্য কথা। পাশাপাশি এটিও সত্য কথা যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিন্তু চোখের চিকিৎসা দেশেই নিচ্ছেন। তাছাড়া বেগম খালেদা জিয়াও দেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন। দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা বা ডাক্তারদের প্রতি অনাস্থা থেকে বিদেশ চিকিৎসা নিচ্ছেন এটি পুরোপুরি সঠিক নয়।
আমি মনে করি, তারা দুজনই বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। ১৭ কোটি মানুষের দেশে খুব ভালো চিকিৎসা হয়। কোথাও কোথাও দুএকটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটছে এটা সত্যি কথা।
শেখ হাসিনা দেশের চিকিৎসার প্রতি আস্থা থাকলেও ওবায়দুল কাদেরের কি আস্থা নেই?
জবাবে আওয়ামী লীগে কেন্দ্রীয় এই নেতা বলেন, দেশের চিকিৎসার প্রতি ওবায়দুল কাদেরের আস্থা নেই এমনটি নয়, তিনি কিন্তু হার্ট অ্যাটাকের সময় প্রথমে দেশেই চিকিৎসা নিয়েছেন। তার পরে সিঙ্গাপুর গেছেন। এখন শুধু ফলোআপ চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুর যেতে হচ্ছে।