১৬ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামবে বাংলাদেশের রিজার্ভ !

0
55

চলতি বছরে বিশটি মেগা প্রকল্পের ঋণের অর্থ সুদে-আসলে পরিশোধ শুরু হওয়ায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মারাত্মক চাপের মধ্যে রয়েছে। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মাধ্যমে ঋণের অর্থ পরিশোধের পর এ সপ্তাহে বাংলাদেশের নিট ইন্টারন্যাশনাল রিজার্ভ (এনআইআর) হতে পারে ১৫.৩০ বিলিয়ন ডলার।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এখন দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ২১.৩০ বিলিয়ন মাকিন ডলার। ২০২১ সালের আগস্টে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছুঁয়েছিল। তবে ঋণের চাপে সেই রিজার্ভ ক্রমেই কমে আসছে। ফলে সরকারের নেওয়া মেগা প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গণনায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পদ্ধতিটিকে বলা হয় বিপিএম-৬ (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন)। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) বিপিএম৬ অনুযায়ী দেশের গ্রস রিজার্ভ হবে ১৯.১৭ বিলিয়ন ডলার। একই দিনে আকুর মাধ্যমে ১.৩০ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হবে।

আইএমএফের প্রতিবেদন অনুসারে, বৃহস্পতিবার শেষে বাংলাদেশের এনআইআর হচ্ছে ১৫.৩০ বিলিয়ন ডলার।

সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এ. বি. এম. মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, রাজস্ব আয় আর অবাধে অর্থ পাচার বন্ধ করতে হবে। ঋণ নিয়ে বড় মেগা প্রজেক্ট করে কোনো লাভ নেই। এটি ছাড়া দেশের বৈদেশিক রির্জাভ বাড়ানো যাবে না।

তিনি আরও বলেন, দেশের ভালো করতে হলে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত থাকা দরকার। তাছাড়া দেশের মানুষের জন্য অর্থনীতির সুফল পাওয়া এবং বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভ বাড়ানো যাবে না।

অর্থনৈতিক সর্ম্পক বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি মাস থেকে দেশের মেগা প্রকল্পের ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে। ২০২৬ সাল নাগাদ ঋণ পরিশোধের পরিমাণ দ্বিগুণ হতে পারে। তাই ২০২৪ থেকে ২০২৬ সালের মধ্যে অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা আসছে। সরকার বিষয়টি স্বীকার করেছে। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখনই পরিকল্পনা নিতে হবে।

বড় ২০টি মেগা প্রকল্পের দায়-দেনা পরিশোধের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে। ২০১৮ সালের পর থেকেই পরিস্থিতি গুরুতর হতে শুরু করে। এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, বর্তমানে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে ১.১ শতাংশের মতো বিদেশি দায়দেনা পরিশোধ করা হয়। ২০২৬ সাল নাগাদ তা দ্বিগুণ হতে পার। এ হার ২ শতাংশের ঘরে পৌঁছানোর আশঙ্কা আছে।

বেশ কয়েকটি অবকাঠামো প্রকল্প প্রকৃতপক্ষেই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গতিশীলতা এনেছে এবং সেগুলোর দীর্ঘমেয়াদি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু সফল কয়েকটি অবকাঠামো প্রকল্পের অনুপ্রেরণায় সাম্প্রতিক বছরগুলোয় একের পর এক বৃহৎ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে সেসব প্রকল্প বাস্তবায়নের সক্ষমতা না থাকা সত্ত্বেও বহুপক্ষীয় ও দ্বিপক্ষীয় ঋণদাতাদের কাছ থেকে ঋণ নিচ্ছে সরকার। এতে দেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। ১২ বছরে বাংলাদেশের ঋণ আড়াই গুণের বেশি বেড়েছে। সংস্থাটির বৈশ্বিক ঋণ প্রতিবেদন ২০২৩ অনুসারে, ২০২২ সাল শেষে দেশের বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৭.০১২ বিলিয়ন বা ৯ হাজার ৭১২ কোটি ডলার; ২০২১ সালে যা ছিল ৯১.৪৭ বিলিয়ন বা ৯ হাজার ১৪৭ কোটি ডলারের বেশি।

সেই হিসাবে এক বছরে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ বেড়েছে সাড়ে ৬ শতাংশের বেশি। ২০২১ সালে বিশ্বের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর সম্মিলিত বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯.৩ ট্রিলিয়ন বা ৯ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার। ২০২২ সালে ঋণের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৯ ট্রিলিয়ন বা ৯ লাখ কোটি ডলারে। অর্থাৎ এ সময়ে সম্মিলিতভাবে এসব দেশের বিদেশি ঋণ কমেছে ৩.৪ শতাংশ।

এদিকে, বিপিএম৬ অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রস ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নিট হিসাবের মধ্যে রিজার্ভের ব্যবধান ছিল ৪.৪ বিলিয়ন ডলার। এ হিসাবে এখন গ্রস রিজার্ভ ২১.৩০ বিলিয়ন ডলার। আকু খরচ দেওয়ার পর নিট রিজার্ভ ১৫.৩০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে থাকবে।

আকু এমন একটি ব্যবস্থা যার মাধ্যমে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো আন্তঃআঞ্চলিক আমদানি দায় পরিশোধ করে থাকে। তেহরানে প্রতিষ্ঠানটির সদর দপ্তর। বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা এর সদস্য। প্রতি দুই মাস অন্তর এই দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরস্পর আমদানি বিল পরিশোধ করে।
গত বছরের শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রস হিসাবে রির্জাভ ছিল ২৫.৭৬ বিলিয়ন ডলার। রিজার্ভ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ দুটি হিসাবের সঙ্গে একমত নয় আইএমএফ।

সংস্থাটি বলছে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী নিট আন্তর্জাতিক রিজার্ভ প্রকাশ করতে হবে, যেখানে কোনো দায়ের অঙ্ক থাকবে না। রিজার্ভ থেকে সকল প্রকার দায় বাদ দিয়ে নিট হিসাব করার পদ্ধতি অনুসরণ করতে বলা হয়।

আইএমএফের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত অক্টোবর শেষে বাংলাদেশের নিট আন্তর্জাতিক রিজার্ভ (এনআইআর) ছিল ১৫.৯ বিলিয়ন ডলার, এসময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঠিক করা বিপিএম৬ পদ্ধতিতে গ্রস আন্তর্জাতিক রিজার্ভ ছিল ২০.৩ বিলিয়ন ডলার।

আইএমএফের শর্ত অনুসারে দেখা যায়, বিপিএম৬ অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রস ও আইএমএফের নিট হিসাবের মধ্যে রিজার্ভের ব্যবধান ছিল ৪.৪ বিলিয়ন ডলার। এ হিসাবে বাংলাদেশের নিট রিজার্ভ এখন ১৭.১৭ বিলিয়ন ডলারের ঘরে রয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here