বিদেশে সম্পদ অর্জন ও তা নির্বাচনী হলফনামায় গোপন করা প্রসঙ্গে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ব্যাখ্যাকে অযৌক্তিক, অবান্তর ও অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
রবিবার (৩ মার্চ) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন মন্তব্য করা হয়।
হলফনামায় মিথ্যা বা অপর্যাপ্ত তথ্য প্রকাশ করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ উল্লেখ করে আইনি প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগসহ (সিআইডি) সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি সাবেক ভূমিমন্ত্রীর বিদেশে সম্পদ অর্জনের প্রক্রিয়া ও পরিমাণ যথাযথভাবে যাচাইয়ের আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি বলেছে, ‘গত বছর ২৬ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ ও সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে টিআইবি জানিয়েছিল, সরকারের মন্ত্রিসভার একজন সদস্যের নিজ নামে বিদেশে একাধিক কোম্পানি থাকার প্রমাণ রয়েছে, যার প্রতিফলন হলফনামায় নেই। এই মন্ত্রী যে তৎকালীন ভূমিমন্ত্রী তা পরবর্তীতে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের খবরে স্পষ্ট হয় এবং শনিবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি তা স্বীকারও করেন।’
বিদেশে সম্পদ অর্জনের বিষয়ে নির্বাচনের পূর্বে টিআইবির তথ্য প্রকাশের উদ্দেশ্য নিয়ে সাবেক ভূমিমন্ত্রী যে প্রশ্ন তুলেছেন তা ভিত্তিহীন উল্লেখ করে টিআইবি বলেছে, ‘এমন তথ্য প্রকাশের উদ্দেশ্য নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের আয় ও সম্পদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।’
এ প্রসঙ্গে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সর্বশেষ চারটি জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ৬ হাজার ৭ জন প্রার্থীর হলফনামার ভিত্তিতে সার্বিক, আসন ও দলভিত্তিক তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরতে একটি ড্যাশবোর্ড প্রস্তুত এবং তথ্যের বিশ্লেষণ করে টিআইবি। যার উদ্দেশ্য নির্বাচনের প্রার্থী সম্পর্কে তথ্য, প্রার্থীদের আয় ও সম্পদ বৃদ্ধি এবং হলফনামায় প্রদর্শিত আয় ও সম্পদের তুলনামূলক চিত্র জনস্বার্থে তুলে ধরা। কিন্তু সাবেক ভূমিমন্ত্রীর প্রদর্শিত সম্পদের সাথে তার প্রকৃত সম্পদের গড়মিল থাকায় তার বিদেশে সম্পদ অর্জনের বিষয়টি উঠে এসেছে। সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী অভিযোগ করেন, তাকে ও সরকারকে বিব্রত করতেই টিআইবি এ কাজ করেছে। যদিও টিআইবি মনে করে এ ধরনের সঠিক তথ্য প্রকাশ হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিব্রত হওয়াই স্বাভাবিক।’
হলফনামায় বিদেশে থাকা সম্পত্তি আলাদা করে ঘোষণা করার কোনো কলাম নেই এই অজুহাতে সেসব সম্পদের উল্লেখ করেননি— সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের এই ব্যাখাকে ‘অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য’ উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘প্রথমত, সাবেক ভূমিমন্ত্রী হলফনামায় তথ্য গোপন করেছেন। আর নির্বাচনী হলফনামায় মিথ্যা বা অপর্যাপ্ত তথ্য প্রকাশ করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। হলফনামায় একজন প্রার্থীর সকল সম্পদের বিবরণ প্রদানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তা দেশে বা বিদেশে যেখানেই থাকুক না কেন। বিদেশে সম্পদের জন্য আলাদা কলাম নেই বলে খোঁড়া যুক্তি দিয়ে তিনি নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। আয়কর বিবরণীতে না থাকায় হলফনামায়ও বিদেশে সম্পদের কথা উল্লেখ করেননি বলে যে দাবি করেছেন, যা নিতান্তই অবান্তর যুক্তি।’
বিদেশে সম্পদ গোপন করার ঘটনায় একটি নয়, সাবেক ভূমিমন্ত্রী বেশ কয়েকটি আইন ভেঙেছেন উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সংবিধানের ১৪৭(৩) ধারা অনুযায়ী, দেশের মন্ত্রীসহ আট ধরনের সাংবিধানিক পদাধিকারী কোনো লাভজনক পদ কিংবা বেতন-ভাতাদিযুক্ত পদ বা মর্যাদায় বহাল হবেন না কিংবা মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যযুক্ত কোনো কোম্পানি, সমিতি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা বা পরিচালনায় কোনোরূপ অংশগ্রহণ করবেন না। অর্থাৎ, সাবেক ভূমিমন্ত্রী শপথ নিয়ে সাংবিধানিক এই বিধানকেও লঙ্ঘন করেছেন, যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই।’
সাবেক ভূমিমন্ত্রী দেশ থেকে টাকা নিয়ে বিদেশে সম্পদ গড়েননি দাবি করে যে বক্তব্য দিয়েছেন এবং তা তদন্তে যে কমিটি করার প্রস্তাব করেছেন তা একেবারেই ‘অবান্তর’ বলে মনে করে টিআইবি। অর্থপাচারসহ সাংবিধানিক ও আইনি বিধানের লঙ্ঘন কোনো তদন্ত কমিটির বিষয় নয় বরং যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় দুদক, এনবিআর, বিএফআইইউ এবং সিআইডিসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ জবাবদিহি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।