পেছন থেকে তিন চার জন লোক হঠাৎ ঝাঁপটে ধরলো। টেনে গাড়িতে তুলেই দুই হাতে হ্যন্ডকাফ পরিয়ে ফেললো। পেছন থেকে একজন মাথায় কালো জমটুপি পড়িয়ে ফেললো। গাড়ি চলতে থাকলো। ত্রিশ মিনিটের মতো চলে থেমে গেল। আমাকে নামানো হলো। পেছন দিক দিয়ে হাত বাঁধা। দুই হাতের নিচ দিয়ে দু’জন শক্ত করে ধরে হাটতে শুরু করলো। মনে হলো, কোনো লিফটে উঠালো। আবার নামানো হলো। কত তলায় উঠলাম বুঝতে পারিনি। লিফট থেকে বের হয়ে একটু হেঁটেই আমাকে একটি চেয়ারে বসানো হলো। মুখের ভেতরে কাপড় বা গামছা জাতীয় কিছু একটা দিয়ে শক্ত করে মুখ বেঁধে ফেললো। চোখ মুখ পা সবই বাঁধা। সজোরে কোমর থেকে পায়ের পাতা সবখানে মোটা লাঠি দিয়ে পেটাতে শুরু করলো। তিন চার মিনিটের মধ্যেই জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম। চেয়ার থেকে মাটিতে লুটিয়ে পড়লাম। এভাবে টানা তিন দিন থেমে থেমে মারলো। একে একে আমার পায়ের আটটি নখতুলে ফেললো। আমার সামনে গরম পানি নিয়ে আসলো। কাটিং প্লাস আনলো। বললাম, আমি বাঁচতে চাই। আমাকে প্রাণে মেরে ফেলবেন না। কথাগুলো বলছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোঃ আমানউল্লাহ আমান। ২০২৩ সালের ৪ নভেম্বর রাজধানী ঢাকার মহাখালী এলাকায় একটি মিছিলের পূর্বপ্রস্তিতির সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে যায় তাকে। ১৪ ফেব্রুয়ারী কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান আমান।
আমানউল্লাহ আমানের জন্ম ১৯৯০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। দক্ষিনের জেলা বরগুনার সদর উপজেলায়। স্কুল শিক্ষক বাবা মৃত আঃ রহিম মুন্সী এবং মা আম্বিয়া খাতুনের ৪ ছেলে ৩ মেয়ের মধ্যে ৬ষ্ঠ সন্তান তিনি। ২০২১ সালে বাবা রহিম মুন্সী মারা যান। ৭৩ বছর বয়সী আম্বিয়া খাতুন দুই ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় থাকেন। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় ভাল ছিলেন আমান। বরগুনা সদর উপজেলার পরীরখাল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সব থেকে মেধাবী আমান ২০০৬ সালে এসএসসি পাশ করেই একাদশ শ্রেনীতে ভর্তী হন ঢাকার তেজগাঁও কলেজে। এর পর ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে সংগীত বিভাগে ভর্তী হয়ে স্নাতক ও স্নাতকত্তোর সম্পন্ন করেন। বর্তমানে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের জাপানী ভাষা স্টাডিজে স্নাতকত্তোর অধ্যায়নরত আছেন এই ছাত্র নেতা। ক্ষমতাসীন দলের হামলা, মামলা এবং নির্যাতনের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নির্মম নির্যাতন নিয়ে কথা বলেন…..
মামলা হামলায় জীবনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা কী?
আমানউল্লাহ আমান: সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা হয়েছে ২০২৩ সালের ৪ নভেম্বর। কাউন্টার টেররিজম ইউনিট আমাকে যেভাবে গ্রেফতার করে এবং এর পরের ভয়াবহতা কোনো দিনই ভুলতে পারবো না।
একটু খুলে বলবেন?
আমানউল্লাহ আমান: ওই দিন দুপুর দুইটার দিকে আমরা প্ল্যনিং কমিশনের সামনে একটা বিক্ষোভ মিছিলের প্রস্তুতি ছিল। সারাদেশেই তখন প্রচুর ধরপাকড় চলছিলো। আমাদের নির্ধারিত স্পটের আশপাশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখে, স্থান পরিবর্তন করে মহাখালীতে জড়ো হতে বলি সবাইকে। মহাখালী গিয়ে দাঁড়ানোর সাথে সাথে আমাকে সাদা পোশাকে ঘিরে ফেলে। গাড়িতে ওঠানোর সাথে সাথেই কালো যমটুপি পড়িয়ে ফেলে। এসময় আমি বাঁধা দিলে, আমাকে অশ্লীল ভাষায় গালি দেয়। আমার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। হাতে হ্যন্ডকাফ লাগিয়ে ফেলে। ৩০ মিনিটের মতো গাড়ি চালিয়ে আমাকে নামানো হলো। আমার মনে হয়েছে, লিফটে আমাকে কোনো ভবনের উপরের দিকে তোলা হলো। কিন্তু চোখ বাঁধা থাকায় আমি কিছুই দেখতে পারিনি।
সেখানে নেয়ার পর কী হলো?
আমানউল্লাহ আমান: লিফট থেকে নামিয়ে একটু হাটিয়ে একটি কক্ষে নিয়ে চেয়ারে বসায়। হ্যন্ডকাফ সামনের দিক থেকে পেছনের দিক দিয়ে দুই হাতে লাগায়। মুখের ভেতরে কাপড় দিয়ে শক্ত করে বেঁধে ফেলে। মাথায় আগে থেকেই যমটুপি পড়ানো ছিল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই চার দিক দিয়ে এলোপাথারী আঘাত শুরু করে। কোমর থেকে পা পর্যন্ত লাঠি দিয়ে বেধরক পোটাতে থাকলো। মাথায় হাত দিয়ে চড়, ঘুষি দিতে থাকলো। যতটুকু মনে পড়ে দ্রুতই আমি অজ্ঞান হয়ে পরি। এর পর কতক্ষন পিটিয়েছে, আমি আর কিছুই বলতে পারবো না। জ্ঞান ফিরলে আমি অনুভব করি মেঝেতে পড়ে আছি। আমার দুই হতের বাহু, উরু, কোমর, পায়ের পাতা সবই ফুলে গেছে। তৃষ্ণায় বুক ফেটে যাচ্ছে। কথা বলার মতো শক্তিও আমার ছিল না। প্রচন্ড শীত ছিল ওই সময়। আমার শরীরে পাতলা একটি শার্ট, পরনে প্যান্ট, খালি পা। মেঝেতে পাড়ে আছি। কেউ একজন আমাকে একটি বালিশ, কম্বল দিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমার এতটুকু শক্তি শরীরে ছিলো না, যে বালিশটা টেনে মাথার নিচে দেই বা কম্বলটা গায়ে জড়াই। এভাবেই কেটেছে তিন দিন। দু’দিন আমার চোখ থেকে ওই জমটুপি একবারের জন্যও খোলা হয়নি। ভুলে গিয়েছিলাম টয়লেটে যাওয়ার কথাও।
কোনো কথা হয়নি?
আমানউল্লাহ আমান: হ্যাঁ। আমার হাত, চোখ, মুখ সবই বাধা। নির্যাতনের ফাঁকে ফাঁকে তারা আমাকে একটি হত্যা মামলার দায় স্বীকার করার জন্য চাপ দিচ্ছিল। আমি রাজি হচ্ছিলাম না। আমাকে নিয়ে যাওয়ার দ্বিতীয় দিন রাতে নির্যাতনের এক পর্যায়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। একজন ডাক্তার আনা হলো, আমাকে ইঞ্জেকশান দেয়া হলো। একটি ট্যবলেট খাওয়ানো হলো। আর কি যেন একটা স্প্রে করা হলো। ডাক্তার বললেন, যমটুপিটা একটু খুলে রাখার জন্য। ব্যথা কিছুটা কমলেও আমার শরীরে কোনো শক্তি ছিলো না। উঠে দাঁড়াবার মতো অবস্থাও ছিলো না। তাদেরই দু’জনের কাঁধে ভর করে আমি টয়লেটে গেলাম। এর কিছুক্ষন পর হঠাৎই আবার ডেকে পাঠালো। জমটুপি পরানো হলো। কিছুই দেখছি না। প্রচন্ড জোরে আমার পায়ে, কোমরে, হাতের বাহুতে পেটানো শুরু করলো। হাত, পা সবই বাঁধা। তাদের অন্তত ৫-৬ জনের নির্যাতনে আমি চেয়ারসহ মাটিতে পড়েগেলাম। অনেকটাই অচেতন। কিন্তু টের পাচ্ছিলাম, তারা বলা বলি করছিল; আমার নখ তুলে ফেলা হবে। শক্ত কিছু একটা দিয়ে আমার ডান পায়ের তিনটি নখ টেনে তুলে ফেললো। ব্যথায় আমি ‘মা-গো’ বাবা-গো’ বলে জোরে জোরে চিৎকার দিচ্ছিলাম। কিন্তু আমার গলা শুকিয়ে যাওয়ায় সেই চিৎকারও বেরুলো না। প্রথম নখ তুলেছে আমি টের পেয়েছি। কিন্তু পরের দু’টি নখ তোলার সময় আমি টের পাচ্ছিলাম না, কিন্তু আমার মনে হচ্ছিল, আমি মনে হয় মরে যাচ্ছি। চিৎকারও করতে পারলাম না। ফেলে রেখে চলে গেল। দু’জন আমাকে মেঝেতে টেনে আবারো পাশের একটি কক্ষে নিয়ে ফেলে রাখলো। আমি অচেতন নই, আবার পুরো জ্ঞানও কাজ করছে না। কক্ষের বাইরে কেউ একজন বলছিল, আল্লাহ আল্লাহ করো। ওরা যেন তোমাকে মেরে না ফেলে। আমি শুধুই শব্দ শুনেছি। চোখ বাঁধা তাই দেখিনি, কে ছিল সেই ব্যাক্তি। আমি বলছিলাম, আমাকে একটু পানি দিন, কিন্তু তিনি বললেন, এখন পানি দেয়া যাবে না। সমস্যা হবে। আমি শুয়ে আছি মেঝেতে। আমার কোমড় থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত এক বিন্দু যায়গা ছিল না, যেখানে মারেনি। হাতের বাহুসহ সবস্থান কালো হয়ে গিয়েছিল। লাঠির সাথে আমার শরীরের চামড়া উঠে গেছিল তাদের পিটুনিতে। মধ্যরাত ২টা-৩টার দিকে আমাকে পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করিয়ে আনা হয়েছিল অন্তত ৩ বার। ভোর ৭টার দিকে নিয়ে আসতো। আবারো মারতো । এভাবে তিন দিন চললো। প্রতিবার পেটানোর পর এক ঘন্টা বিরতি দিত। আমি খাওয়া দাওয়া সবই ভুলে গেছিলাম। ক্ষুধার চেয়েও বেঁচে থাকার আকূতিই ছিলো প্রধান ওই তিন দিনে।
তিন দিন পর কোথায় নিয়ে গেল?
আমানউল্লাহ আমান: তৃতীয় দিনের শুরুতেই তারা আমাকে বেদম পেটালো। যে অফিসারই আসলো সেই মারলো। অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেছে প্রথম থেকেই। আমার মাথা থেকে যমটুপি খুলে দিল। আর কিছুক্ষন পর একটি ছবি দেখিয়ে বলাছিল, এই ছবি তোর, এটা স্বীকার কর, তোকে কোর্টে পাঠিয়ে দেব। ওই ছবির মাথায় পরিহিত হেলমেট, গায়ের শার্ট এগুলো কোথায় জানতে চাচ্ছিল। কিন্তু আসলেই আমি এ ঘটনার সাথে জড়িত নই। তাই বললাম আমি জানি না। তারা বললো, আমি স্বীকার না করলে মেরেই ফেলবো। এখন একটু আন্তর্জাতিক চাপ আছে, তাই তুই এখনো বেঁচে আছিস। না হলে তোকে এতক্ষন বাঁচিয়ে রাখতাম না বলেও ক্ষোভ দেখালো।
এর পর কী করলো?
আমানউল্লাহ আমান: আমার সামনে চতুর্দিকে তারা গোল হয়ে বসে আছে। একেক জন একেক কথা বলছে। আমার সামনে গরম পানি আনলো। একটি প্লাস্টিকের বালতি আনা হলো, ইলেক্ট্রিক লাইন, কাটিং প্লাসসহ আরো অনেক কিছুই রাখা হলো। বললো, তুই স্বীকার করে নে যে এই ছবির ব্যাক্তিই তুই। আমি তাদেরকে বললাম, আমি এর সাথে জড়িত নই। আর কে বা কারা এ কাজ করেছে, আমি কিছুই জানি না। আমাকে কেন এমন একটি মামলায় জড়িয়ে আমার জীবনটা শেষ করে দেবেন? কিন্তু আমাকে ঘিরে থাকা সবাই এক যোগে লাথি, মারতে শুরু করলো। পুলিশের বড় লাঠি দিয়ে যে যেভাবে পেরেছে মারলো। আর বলাবলি করছিল, ওকে মেরে ফেলতে হবে। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। মনে হচ্ছিল, আমি হয়তো মরে যাচ্ছি, শেষ বারের মতো বাঁচার চেষ্টাটা অন্তত করি। হাত পা সবই বাঁধা। ব্যথায় জোরে জোরে চিৎকার দিচ্ছিলাম। কিন্তু কিছুতেই থামছে না।
আপনি কী ক্যমেরা ট্রায়ালে সব স্বীকার করলেন? কেন?
আমানউল্লাহ আমান: আমাকে নানান ভাবে ভয় ভীতি দেখানো হচ্ছিল, আমাকে বলা হচ্ছিল, তুই ওযু করে নে, দোয়া পড়। তারা একে অপরকে বলাবলি করছিল, ওকে রাতের অন্ধকারে দূরে নিয়ে গিয়ে গুলি করে মেরে ফেলবে। এর সাথে সীমাহীন নির্যাতন। আমি আর নিতে পারছিলাম না। মায়ের মুখটা খুব মনে পরছিল। ভাই বোন সবগুলো মুখ চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। আমার জন্য তারা হয়তো কাঁদছে। হয়তো হন্যে হয়ে খুঁজছে। দিন কী রাত, আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। শুধু ফজরের আজানের সময় “আসসালাতু খায়রুম মিনান নাউম” শুনে বুঝতাম সকাল কী রাত। আমার ছোট বোনটার কথা বার বার মনে পড়ছিল। বড় ভাই তিনিও আটক ছিলেন। ভাবি, আমার ভাগ্নীরা, ভাইয়ের সন্তানদের কথা মনে পড়ছিল। খুব বাঁচতে ইচ্ছা করছিল। শুধুই চিন্তা ছিল, যদি বাঁচতে পারি। আমি বুঝিনি, আমাকে কোর্টে তোলা হবে। বেঁচে থাকার জন্যই ছবির সেই ব্যাক্তি আমি বলে স্বীকার করেছিলাম।
এর পর আর নির্যাতন করেনি?
আমানউল্লাহ আমান: না, ওই দফায় আর নির্যাতন করেনি। শেষ দিনে আমাকে আবারো চিকিৎসা করানো হলো। বলা হলো, তোকে মিডিয়ার সামনে হাজির করবো। তুই কিচ্ছু বলবি না। আর খুড়িয়ে হাঁটবি না। এর পর মেঝেতে ফেলে রেখে চলে গেল ওই টিম। নতুন একজন এসে বললেন, আপনি তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র নেতা, কোথার খাবার খাবেন, আইবিএ না সোনারগাঁ হোটেলের? আমি ভাবলাম, এখন ওদের সাথে জেদ করা যাবে না। যে কোনো মূল্যে আমাকে এখান থেকে বাঁচতে হবে। বললাম, আনেন যে কোনো যায়গার হলেই চলবে।
এর পর কী হলো?
আমানউল্লাহ আমান: আমাকে মিডিয়ার সামনে আনা হলো। সেখানে তারাই গণমাধ্যমের সাথে কথা বললো। আমাকে শুধু সামনে এনে মিডিয়াকে জানানো হলো, একটি হত্যা মামলার অভিযোগে আমাকে গ্রেফতার করা হলো। আমি চুপ হয়ে শুনলাম। পরে দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ডিবির একটি গাড়িতে আদালতে নিয়ে যাওয়া হলো। ৭দিনের রিমান্ড চাইল ডিবি। ৭ নভেম্বর আবরো ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হলো।
রিমান্ডে কী করলো?
আমানউল্লাহ আমান: রিমান্ডে শারীর নির্যাতনের তুলনায়, মানসিক নির্যাতন বেশি করেছে। আমাকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়ার ব্যাপারে চাপাচাপি করেছে। এই ৭দিনের মধ্যে একদিন রাতে সাড়ে ৮টার দিকে আমাকে নির্যাতন করা হলো। পুলিশ হত্যা মামলায় আমাকে অভিযোগ স্বীকার করে নিতে বলে, কিন্তু আমি রাজি না হওয়ায়, আমাকে পুলিশের লঠি দিয়ে আমাকে বেশ মেরেছে। একটি ১৬৪ ধারার লিখিত জবানবন্দি পড়ে আমাকে শুনায়। আমি বলেছিলাম, আমাকে মেরে ফেললেও আমি এটি বলবো না। আমার দলের চেয়ারপার্সন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সনকে নিয়ে অশ্লীল ভাষায় গালি দিল। আর বললো ওই সিস্টেমটা (ক্রসফায়ার) নেই। এজন্য বেঁচে গেলি। এর পর আর মারেনি ওই ৭ দিনে। কিন্তু এক ঘন্টা পর পর জিজ্ঞাসাবাদ করছিল। সাত দিন পর আবারো আদালতে তোলে।
আদালত কী বললো?
আমানউল্লাহ আমান: আমার আইনজীবী আমার ওপর নির্যাতনের কথা বলছিলেন, তখন আমি বিচারককে বললাম স্যার আমার কিছু বলার আছে। বিচারক বলতে বললেন। আমার ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতনে বর্ননা দিলাম। আমার গায়ের শার্ট খুলে আমি দেখালাম। আমার আইনজীবী মাসুদ আহম্মেদ তালুকদারকে বললাম- আমি বাঁচতে চাই। বিচারক বললেন, কই আপনাকে দেখেতো অতটা আহত মনে হচ্ছে না। তেমন নির্যাতন করা হয়েছে তাওতো বোঝা যাচ্ছে না। আবারো ৭ দিনের রিমান্ড চাইলো। আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলো।
এ দফার রিমান্ডে কী হলো?
আমানউল্লাহ আমান: আবারো ডিবিতে আনা হলো। এই ৫ দিনের মধ্যে শেষের দুই দিন আমাকে সীমাহীন নির্যাতন চালিয়েছে। আমাকে বলতে বলা হলো আমার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিব এদের নির্দেশে আমি ওই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছি। কিন্তু আমি রাজি হইনি। কিন্তু তারা (ডিবি) বললো, আমাদের ওপর চাপ আছে, আমাকে স্বীকার করতেই হবে। আমি রাজি হচ্ছিলাম না। এই পাঁচ দিন শেষে আবারো এক দফা রিমান্ড বাড়িয়ে নেয় ডিবি। এই দফায় আমার সাথে প্রথম বার যখন আমাকে তুলে আনে সেই সময়ের মতো আচরণ শুরু করে। আমাকে ঘিরে অফিসাররা নানান প্রশ্ন করছে। হঠাৎ পেছন থেকে আমাকে যমটুপি পরিয়ে ফেললো। মেরে ফেলার হুমকি দিতে থাকলো। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। আমি বললাম, আমি ঢাবি’র একজন ছাত্র আমাকে এভাবে নির্যাতন করা আপনাদের ঠিক না। তখনই পেছন থেকে মাথার ওপর আঘাত করলো। আমার হাত পা চোখ বাঁধা। আমি নড়তে পারছিলাম না। আমাকে মেঝেতে চিৎ করে শুইয়ে দিয়ে হাটুতে আঘাত করা হলো। লাঠি দিয়ে বেদম পেটাতে থাকলো। আমি নিথর হয়ে পড়ে রইলাম মাটিতে। শ্বাস প্রশ্বাস নিতেও আমার কষ্ট হচ্ছিল। একে একে আমার পায়ের পাঁচটি নখ টেনে তুলে ফেললো। ডান পায়ের আঙ্গুলের বৃদ্ধাঙ্গুলির নখে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করলো। আমি মা-গো, বাবা -গো চিৎকার করে উঠলাম। তাদের নির্যাতন কিছুতেই থামছে না। আমি বলেই ফেললাম, আপনারা যা বলতে বলবেন আমি তাই বলব। চোখ খোলার পর দেখি আমার হাটু, পায়ের পাতা, মেঝে সবই ছোপ ছোপ রক্তে ভিজে আছে। পরে আমাকে পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করানো হলো। আমার দুই পা, দুই হাত, কোমড় সবকিছুই অনেকটা অচল করে ফেললো। ইঞ্জেকশান, স্প্রে আর মুভ মলমে ব্যথা না থাকলেও আমি দাঁড়াতে বা হাটতে পারছিলাম না। এর পর আমাকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়ার জন্য কোর্টে পাঠানো হলো।
সেখানে কী হলো?
আমানউল্লাহ আমান: আমাকে গারদের সামনে ওই গাড়ির মধ্যেই রেখে দেয়া হলো। বিকেল আড়াইটার দিকে নেয়া হলো বিচারকেরখাস কামড়ায়। সেখানে আগে থেকেই সবাই অপেক্ষারত ছিলেন। খাস কামড়া ভর্তি ডিবির অফিসার, পুলিশের কয়েক জন কনস্টেবল। আমাকে ঘিরে রাখলো। আমি বললাম আমি এ ঘটনার সাথে জড়িত নই। আমাকে নির্যাতনের ফিরিস্তি তুলে ধরলাম। কিন্তু কোনো কথায় কাজ হলো না। ওই বিচারকের কথা শুনে আমার মনে হয়নি, উনি বিচারক। ওনিই আমাকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়ার জন্য নানান ধরনের ভয়ভীতি দেখাচ্ছিলেন। নতুন মামলা দিয়ে সেই মামলায় আবারো রিমান্ড দেয়ার ভয় দেখান। পরে তদন্ত কর্মকর্তাকে বের করে দিয়ে আরো সিনিয়র কয়েকজন কর্মকর্তাকে ডাকলেন, মোট ১১ জন উর্দ্ধতন কর্মকর্তা ছিলেন। তারা উর্দ্ধতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলছিলেন। আমাকে লাউডস্পিকারে শোনাচ্ছিলেন। বিচারক বলেন, অন্য আরো যে মামলা আছে সেগুলো নিয়ে আসো, ওকে শেষ করে ফেলবো। আমি বিস্মিত হলাম বিচারকের মুখে এমন কথা শুনে। আমি নিরুপায়, অসহায় হয়ে পুলিশ সদস্যদের কাঁধে ভর করে দাঁড়িয়ে রইলাম। পরে ৬ জন ডিবি অফিসার আমার ডান হাত চেপে ধরে আগে থেকেই লিখে রাখা একটি কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। পরে আমাকে করাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
জেলখানায় গিয়ে কী হলো?
আমানউল্লাহ আমান: জেলাখানার অভিজ্ঞতা আরো ভয়াবহ। আমার সাথে বাইরে থেকে নেয়া কিছু ওষুধ ছিল। আমদানী থেকে মেঘনা ওয়ার্ডে দেয়া হলো। কারাগারের দ্বিতীয় দিন আমি শারীরীক নানান জটিলতায় আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাই। ওয়ার্ডের সবাই নানান ভাবে সেবা দেয়, তাতে কিছুটা সুস্থ হই। রাত সাড়ে নয়টার দিকে আমাকে কারাগারের হাসপাতালে নেয়া হয়। ওখানে একজন দায়িত্বরত ছিলেন, আমার কেসকার্ড দেখে বললেন, ছাত্রদলের নেতা হওয়ায় আমাকে চিকিৎসা দিল না। সারা রাত আমাকে বিনা চিকিৎসায় মেঝেতে ফেলে রাখাহলো। বাইরে থেকে যে ওষুধগুলো ছিলো সেগুলো দিয়েই আমার চিকিৎসা করা হলো।
আর কী কী নিপীড়নের মুখে পড়েছেন কারাগারে?
আমানউল্লাহ আমান: আমার পরিবারের সদস্যরাও আমার সাথে দেখা করতে পারেনি। ৭ জানুয়ারী নির্বাচনের আগ পর্যন্ত আমার নামে কারাগারে দেখা করার স্লিপ গেলেও পাঠানো হতো না। কারাগারের অপর বন্দিদের সেবায় আমি সুস্থ হয়েছি। আমার নখগুলো উঠিয়ে ফেলা হয়েছিল। সেগুলো আমি ব্যন্ডেজ পর্যন্ত করতে পারিনি। ছেরা কাপড় দিয়ে বেঁধে রেখেছি। এক কথায় যে বঞ্চনার মধ্যে ছিলাম তার কোনো বর্ননা হয়না।
কারাগারে দলের অন্য অনেক নেতারাই বন্দী ছিলেন, তারা কী খোঁজ নিয়েছে?
আমানউল্লাহ আমান: হ্যাঁ। কারাগারে দলের মহাসচিব আমার শরীরের অবস্থা দেখে কেঁদেছেন। আমাকে সান্তনা দিতে গিয়ে তিনিই বেশি কষ্ট পেয়েছেন। আমাকে একদিন বললেন, তুমি কিছু মনে করো না, তোমার শার্টটা একটু খোল। আমার পিঠে এবং শরীরের বিভিন্ন আঘাত ও ক্ষত চিহ্ন দেখে অঝোরে কেঁদেছেন। আমিই ওনাকে সান্তনা দিয়েছি।
দলে থেকে মামলা এবং পরিবারের খবর নিয়েছে?
আমানউল্লাহ আমান: নিয়েছে। মামলা পরিচালনাই করেছে দল। আমার মায়ের সাথে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কথা বলেছেন। সান্তনা দিয়েছেন। আমি খুশি এবং কৃতজ্ঞ।
জেল থেকে মুক্ত হলেন কবে? এর পর চিকিৎসা নিয়ে ছিলেন? কি কি সমস্যা বোধ করছেন?
আমানউল্লাহ আমান: ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ সালে জেল থেকে মুক্তি পাই। জেল থেকে বের হয়ে চিকিৎসা নিয়েছি। এখনো চলছে। ডাক্তার বলেছে ধকল কাটিয়ে উঠতে দীর্ঘ সময় লাগবে। কারণ, পায়ে ভর দিয়ে এখনো দীর্ঘ সময় দাঁড়াতে পারিনা। পায়ের তালুতে ব্যথা। মাথায়ও ব্যথা আছে। সবচেয়ে বেশি সংকট যেটা সেটি হচ্ছে, ঘুমের মধ্যে এখনো আৎকে উঠি। চোখ বন্ধ করলেই মনে হয়, কেউ ডাকছে। আমাকে নিয়ে যাওয়া হবে, মেরে ফেলা হবে। নখগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। সেগুলোর চিকিৎসা চলছে। ঘুম কমে গেছে। তার পরেও ভাল লাগছে, বেঁচে আছি এই ভেবে।
রাজনীতিতে জড়ালেন কী ভাবে?
আমানউল্লাহ আমান: আমার ফুফাতো ভাই ইমদাদুল হক মিলন ছিলেন ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি। তার সাথেই মিছিল মিটিং-এ যেতে যেতে ছাত্রদলের রাজনীতিতে জড়াই নবম শ্রেনীতে পড়াকালেই। জিয়াউর রহমানের দেশপ্রেম, স্বল্প সময়ের মধ্যে একটি দেশকে কী ভাবে ঘুরে দাঁড় করিয়েছেন, এসব জেনেই ওনার প্রতি ভাল লাগা এবং টান জন্ম নেয়। আর বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান সম্পর্কে বড়দের মুখে শুনে, বিএনপির নীতি-আদর্শ এগুলো জেনেই রাজনীতিতে সক্রিয় হই। আর সবচেয়ে বড়কথা আমার মেঝ ভাই, সেজ ভাই এরা সবাই ওই সময় বিএনপির রাজনীতিতে পদধারী নেতা ছিলেন। সব মিলিয়ে আমার পরিবারের রাজনৈতিক ধারা এবং আমার নিজস্ব ভাল লাগা, সবই বিএনপির রাজনীতিতে জড়ানোর ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে, সেই কিশোর বয়সে স্কুলে পড়া কালেই ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে সক্রিয় ভাবে জড়ানোর পেছনে। আর ২০০৪ সালে ফুফাতো ভাইয়ের সাথে বরগুনার পাথরঘাটায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার একটি সমাবেশে যোগ দেই। সমাবেশে বেগম জিয়ার বক্তৃতা আমার মনে প্রকট ভাবে দাগ কাটে, তখন থেকেই নিজেকে এই দলের অংশ ভাবতে শুরু করি। সেই শুরু।
স্কুলে পড়া যে কোনো ছাত্রের সক্রিয় রাজনীতিতে জড়ানো বেশ কঠিন, স্কুলের শিক্ষক অভিভাবকরা বাঁধা দেয়নি?
আমানউল্লাহ আমান: নেতৃত্বের প্রতি ছোট বেলা থেকেই আমার আগ্রহ ছিল প্রবল। অনেক বেশি পড়–য়া ছাত্র ছিলাম না কিন্তু ক্লাস ওয়ান থেকেই দশম শ্রেনী পর্যন্ত ক্লাসের ফার্স্টবয় ছিলোম। ফলে ক্লাস ক্যপ্টেইন নির্বাচন, পাড়ার খেলাধুলা-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সব সময়ই নেতৃত্ব দিয়েছি। এছাড়া স্থানীয় ভাবে বন্ধুরা মিলে স্কুল কেন্দ্রীক “বঙ্গোস্টার” নামে একটি ক্লাব বানিয়ে ছিলাম, সেখানেও অনেক সিনিয়ররাও ছিলেন, কিন্তু সভাপতি ছিলাম আমি। এই করতে করতেই আসলে প্রত্যক্ষ ভাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ি। কোনো বাঁধাই আসলে পথ আটকাতে পারেনি।
ছাত্রদলের রাজনীতির পর্যয়ক্রমিক ধারাবাহিকতা বলুন।
আমানউল্লাহ আমান: ২০০৬ সালে এসএসসি পাশ করার পরই ঢাকার তেজগাঁও কলেজে ভর্তি হই। তখন তেজগাঁও কলেজে দীর্ঘ দিন কমিটি হয়নি। আর একাদশ দ্বাদশ এই দুই বছরে কলেজ কেন্দ্রীক রাজনীতিতে প্রকট ভাবে জড়ানোর সুযোগও তেমন ছিল না। তবে, ক্যম্পাস কেন্দ্রীক এবং মহানগর কেন্দ্রীক মিছিল মিটিং করেছি অনেক। এর পর ঢাকা কলেজে স্নাতকে ভর্তি হই। সেখানে এসেই ছাত্ররাজনীতিতে পুরোপুরি জড়িয়ে পড়ি ২০০৯ সালে। নিয়মিত মিছিল মিটিং করেছি। এর পরের বছর ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে যাই ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষে। লোকসংগীত বিভাগে ভর্তি হই। সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে সংযুক্ত হয়েছি। ঢাকা কলেজের ছাত্রদলের বড় ভাই মাহি ভাইকে জানাই, আমি ঢাবিতে ছাত্রদলের রাজনীতি করবো। তখন তিনি ফজলুর রহমান খোকন ভাইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। খোকন ভাই হলের নেতা ছিলেন। ঢাকাতে ভর্তি হওয়ার প্রথম দিন থেকেই ছাত্রদলের মিছিল মিটিং-এ সরব ছিলাম। ভর্তি হওয়ার ২২ দিনের মধ্যেই ছাত্র দলের মিছিলে দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীর সামনে থেকে ওই সময়ের জহুরুল হক দলের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল কবীর রাহাত আমাকে ধরে নিয়ে যায়। ধরে নিয়ে হলের গেস্ট রুমে আমার ওপর নির্যাতন চালায়।
কী কী নির্যাতন চালায়?
আমানউল্লাহ আমান: সেই নির্যাতন আমার জীবনের অন্য ধরনের অভিজ্ঞতা। রড দিয়ে আমার হাটুর নিচে পেটায়। দীর্ঘক্ষন নির্যাতনের পর; বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই সময়ের প্রক্টর ড.সাইফুল ইসলাম স্যার প্রক্টোরিয়াল টিম পাঠিয়ে আমাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে পাঠায়। সেখানে চিকিৎসা নিতে পারিনি। এর পর আমি মীরপুরের একটি বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে তিন দিন চিকিৎসা নিতে হয়েছে। ওই হামলার ক্ষত এখনো আমার হাটুতে আছে। এর পরও বেশ কয়েক বার আমি ক্যম্পাসে ছাত্রলীগের হামলার মুখে পরতে হয়েছে।
মামলায় জড়ালেন কী ভাবে?
আমানউল্লাহ আমান: ২০১৯ সালের ১৯ আগস্ট পল্টন থানা পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করে। তখন বেশ মোটা অংকের বিনিময়ে ওখান থেকে ছাড়া পাই। ঢাকার সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর একটি হরতালে ভাংচুর মামলায় আসামী করে। এর পর যেহেতু ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ছাত্র দলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব ছিলাম শাহবাগ, ধানমন্ডি পল্টন, রমনাসহ আশপাশের বিভিন্ন থানায় একের পর এক মামলা হতে থাকে। এখন ৩১টি মামলা চলছে।
পুলিশের হামলার শিকার হয়েছেন কতবার?
আমানউল্লাহ আমান: অনেকবার পুলিশের হামলার শিকার হয়েছি। ২০১৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী শহীদ মিনারের ভেতরে আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা হয়েছিল। বাইরে আমরা ছিলাম। মৎস্য ভবনের সামনে আমাদের ওপর হামলা হয়েছে। রাইফেলের বাট দিয়ে পায়ে মেরেছে। সেই আঘাত এখনো আমাকে ভোগাচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় হাজিরা দিতে বকশি বাজারের বিশেষ আদালতে হাজিরা দিতে আনা হতো। সেখানে বহুবার আমি পুলিশী হামলার শিকার হয়েছি। ২০১৪ সালের আন্দোলনে বাংলা একাডেমীর সামনে একবার পুলিশের হামলার শিকার হই। এরকম বহু হামলার শিকার হয়েছি। এই ধরনের হামলা এতটাই নিত্য নৈমিত্তিক হয়ে গিয়েছে, যে এর হিসেব করার সুযোগও হয়নি কখনো। হামলা হয়, আহত হই, চিকিৎসা নেই। আবারো আন্দোলন। এভাবেই চলছে আমাদের। যারা এই মূহুর্তে যারা ছাত্রদল করে তারা কেউই এই হিসেব করতে পারবে না; কে কতবার হামলার শিকার হয়েছেন। ২০২১ সলের ২৯ আগস্ট। ওই দিন ঢাবিতে ছাত্রদল মিছিল বের করি। ছাত্রলীগ হামলা করে। আমাদেও ২৩ জন নেতা-কর্মী আহত হয়। মোটা লাঠির আঘাতে আমার ডান হাত ভেঙ্গে যায়। সেই হাত এখনো সঠিক জায়গায় আসেনি।
এত নির্যাতন নিপিড়নের পরও রাজনীতি চালিয়ে যেতে চান?
আমানউল্লাহ আমান: বর্তমানে দেশে যে দূঃশাসন চলছে, আমাদের আন্দোলন এর বিরুদ্ধে। মানুষের মুক্তির জন্য। অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার আন্দোলন। সুতরাং এগুলো মেনে নিয়েই এখনো রাজপথে আছি। ভবিষ্যতেও থাকবো, ইনশাআল্লাহ।
News Credit: বাংলা আউটলুক