কী ইস্যুতে আলোচনায় মার্কিন প্রতিনিধিদল

0
59

ঢাকায় ব্যস্ত সময় পার করছেন উচ্চপদস্থ ৩ সদস্যের মার্কিন প্রতিনিধিদল। সফরের প্রথম দিন গতকাল অত্যন্ত ব্যস্ত কর্মসূচিতে কাটিয়েছেন তারা। ঢাকায় মার্কিন প্রতিনিধি দলের দৃশ্যমান কর্মসূচির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল আলোচিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং নতুন সরকার গঠনের প্রক্রিয়ার পুরো সময় কারাবন্দি (সদ্য মুক্তি পাওয়া) বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠক। বৈঠকটি নানা কারণে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ সেখানে নিশ্চিতভাবে দেশের রাজনীতি ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যদিও কোনো পক্ষই বৈঠকের বিষয়ে সবিস্তারে এখনো বলেননি। শনিবার বিকাল ৩টায় রাজধানীর গুলশানে হোটেল ওয়েস্টিনে শুরু হওয়া বৈঠকটি ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় স্থায়ী ছিল। সেই বৈঠক শেষ করে মার্কিন প্রতিনিধি দল যায় রামপুরাস্থ সলিডারিটি সেন্টারে। শ্রমিক নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করে মার্কিন প্রতিনিধি দল। রাতে ওয়েস্টিনে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের মধ্যদিয়ে প্রথম দিনের কর্মসূচি শেষ করে প্রতিনিধি দল।

একাধিক বৈঠকের সূত্র জানায়, আলোচনায় বিগত জাতীয় নির্বাচন, শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।

ওদিকে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের এক ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে অনুধাবন করা এবং স্বীকৃত সমাধান খুঁজে বের করার মূল চাবিকাঠি হলো গঠনমূলক সংলাপ। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং জেলে থাকা বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিষয়ে বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।

এদিকে গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল, ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট এবং এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) এর প্রতিনিধি দল ঢাকায় পৌঁছার পর দূতাবাস তাদের স্বাগত জানায়। দূতাবাস বিজ্ঞপ্তি মতে,  ২৬শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তারা বাংলাদেশ সফরে থাকছেন। প্রতিনিধি দলে আছেন- প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের (এনএসসি) ডিরেক্টর আইলিন লাউবেচার, ইউএসএআইডির এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর এসিস্ট্যান্ট এডমিনিস্ট্রেটর মাইকেল শিফার এবং ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেটের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার ডেপুটি এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আক্তার। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে পারস্পরিক স্বার্থের অগ্রগতির জন্য কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা হবে তাদের। সফরকালে তারা তরুণ অ্যাক্টিভিস্ট, সুশীল সমাজ, শ্রম সংগঠক এবং মুক্ত গণমাধ্যমের বিকাশের সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। মুক্ত ইন্দোপ্যাসিফিকের জন্য অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিকে এগিয়ে নেয়া, মানবাধিকারের প্রতি সমর্থন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, আন্তর্জাতিক হুমকির বিরুদ্ধে আঞ্চলিক সহনশীলতার শক্তিকে এগিয়ে নিতে এবং অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রচারে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্বে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে বৈঠক আজ: ওদিকে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে আজ বৈঠক হবে বাংলাদেশে সফররত মার্কিন প্রতিনিধি দলের। বহুল আলোচিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর ঢাকা-ওয়াশিংটন এটাই হবে প্রথম আনুষ্ঠানিক আলোচনা। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের জ্যেষ্ঠ পরিচালকের নেতৃত্বাধীন দেশটির প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিনিধি দলটি এমন এক সময় ঢাকায় এসেছে যখন প্রতিবেশী মিয়ানমারের সংঘাতের ধাক্কা বাংলাদেশের ওপর এসে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে গত সপ্তাহে ওয়াশিংটনে এক সেমিনারে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লু। ফলে মার্কিন প্রতিনিধিদলের সফরে দ্বিপক্ষীয় নানা ইস্যুর পাশাপাশি মিয়ানমারের পরিস্থিতি যে আলোচনায় গুরুত্ব পাবে, এটা প্রায় নিশ্চিত।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য থাকলেও দুই দেশই সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আগ্রহী। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি লিখে সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এরই অংশ হিসেবে উচ্চ পর্যায়ের মার্কিন প্রতিনিধিদল ঢাকা সফরে এসেছে।

খসড়া সূচি অনুযায়ী, দলনেতা আইলিন লাউবেচার পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে রোববার দুপুরে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন। একইদিন বিকালে তিনি প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে দেখা করবেন। সেই দলে মার্কিন প্রতিনিধিদলের অন্য দুই সদস্য আফরিন আক্তার ও মাইকেল শিফারও অংশ নেবেন।

কূটনৈতিক সূত্র বলছে, ওয়াশিংটনের তরফে গত অক্টোবরে বাংলাদেশকে জানানো হয়েছিল নির্বাচনের পর বিভিন্ন স্তরে দুই দেশের মধ্যে সফর বিনিময় শুরু হবে।

উল্লেখ্য, নির্বাচন প্রশ্নে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মূল্যায়নসহ নিয়মিত বিবৃতি সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রধানমন্ত্রীকে একটি চিঠি দিয়েছেন। চিঠিটি বাংলাদেশ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়েছে জানিয়ে এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, নির্বাচনের পর নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। অতীতে যা-ই হোক, যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন নিয়ে অবজারভেশন যেমন দিয়েছে, তেমনি সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার কথাও বলেছে। ওয়াশিংটনের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশ সফর ‘নির্বাচনু পরবর্তী বোঝাপড়া্থ আরও স্পষ্ট হবে বলে মনে করছেন ঢাকার পেশাদার কূটনীতিকরা।

ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচনের পর দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নিতে বাংলাদেশেরও আগ্রহ রয়েছে। জো বাইডেনের চিঠি এবং ঢাকায় উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সফর ওয়াশিংটনের নানা মহলে বাংলাদেশের যোগাযোগের ফল। যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটদের ফরেন পলিসিতে  গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বরাবরই অগ্রাধিকার। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিশেষ করে নির্বাচনের বেশ আগে থেকে শ্রম অধিকারসহ মানবাধিকার, সুশাসন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মতো বিষয়গুলো সামনে এনেছে যুক্তরাষ্ট্র। সামনের দিনগুলোতে ব্যবসা-বাণিজ্য, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল, জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলোর পাশাপাশি মানবাধিকার ও সুশাসনের বিষয়গুলোও থাকবে।

বিএনপি’র সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধিদলের বৈঠক, নির্বাচন নিয়ে আলোচনা
স্টাফ রিপোর্টার জানান, বিএনপি’র সঙ্গে বৈঠক করেছে ঢাকা সফররত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আখতার। রাজধানীর গুলশানে হোটেল ওয়েস্টিনে ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় নির্বাচনের পর বিএনপি’র সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধিদলের  এটাই প্রথম বৈঠক। বৈঠকে বিএনপি’র প্রতিনিধিদলে ছিলেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ। মার্কিন প্রতিনিধিদলে আফরিন আখতার ছাড়াও ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের (এনএসসি) দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সিনিয়র ডিরেক্টর আইলিন লাউবেচার, ইউএসএআইডির এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোর অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর মাইকেল শিফার এবং ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস্‌ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তবে মার্কিন প্রতিনিধিদলের তরফে কেউ কথা বলেননি। বৈঠক শেষে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, উনারা আমাদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, আমরা এসেছি, কিছু কথাবার্তা বলেছি। এতটুকু বলতে পারবো- এর বেশি কিছু বলার নেই।

আপনারা কী বলেছেন- প্রশ্ন করা হলে বিএনপি’র বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির আহ্বায়ক আমীর খসরু বলেন, কিছু বলার নেই। সদ্য অনুষ্ঠিত দ্বাদশ নির্বাচন নিয়ে কথা হয়েছে কিনা আবারো প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কথা হয়েছে, আমরা কিছু বলতে চাই না।  বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কারাগারে ছিলেন, আপনিও কারাগারে ছিলেন- এ বিষয়ে কিছু কথা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, আপনারা যত প্রশ্ন করবেন আমার উত্তর হচ্ছে- কিছু বলার নেই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here