বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রে গত বছরের তুলনায় পোশাক রপ্তানি কমেছে প্রায় ২৫ শতাংশ। চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ২৫ শতাংশ কমে ৭২৯ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (ওটেক্সা) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৯৭২ কোটি ডলার। দেশের সার্বিক পোশাক আমদানি আগের বছরের ব্যবধানে ২২.০৪ শতাংশ কমে ৭ হাজার ৭৮৪ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। ওটেক্সার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিও ২০২২ সালে ৩১৩ কোটি বর্গমিটার থেকে ২৮ শতাংশ কমে ২২৫ কোটি বর্গমিটারে দাঁড়িয়েছে।
ওটেক্সার তথ্য অনুযায়ী, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের বস্ত্র ও পোশাক পণ্যের সামগ্রিক আমদানি ২০.৫১ শতাংশ কমে ১০৪.৯৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নিজের পোশাক আমদানি ২২.০৫ শতাংশ কমে ৭৭.৮৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বের শীর্ষ পোশাক সরবরাহকারী দেশ চীনের বস্ত্র ও পোশাক রপ্তানি ২২.৮৬ শতাংশ কমে ২৫.১৯ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই প্রতিষ্ঠানটির পোশাক রপ্তানি ২৪.৯৮ শতাংশ কমে ১ হাজার ৬৩১ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পোশাকের রপ্তানির পরিমাণ ছিল প্রায় ১০ শতাংশ, গত বছর তা কমে দাঁড়িয়েছে ৯.৩৭ শতাংশে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ২০২১ সালের তুলনায় ৫০ শতাংশেরও বেশি পোশাক রপ্তানি করে। কোভিড-১৯ এর মারাত্মক বিপর্যয় কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর সময় পোশাকের চাহিদা বেড়ে যায়।
মার্কিন খুচরা বিক্রেতারা কোভিড-১৯ এর ফলে সামগ্রিক অবিক্রীত পণ্য বিক্রিতে মনোযোগ দেয়ায় আমদানি হ্রাস পেয়েছিল। অন্যদিকে বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানি ভারসাম্য অবস্থায় পৌঁছাতে সমন্বয় প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে গেছে।
উদ্যোক্তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের দোকানগুলোতে বিক্রি কমলেও অদূর ভবিষ্যতে রপ্তানি বাড়বে।
গত বছরের তুলনায় মার্কিন ক্রেতারা এখন অনেক বেশি খোঁজখবর নিচ্ছেন- বলেন তিনি।
বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে প্রতিটি দেশ তাদের আমদানি হ্রাস করায় ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী পোশাক বাজার খুব অস্থিতিশীল ছিল। ২০২৩ সালে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সবচেয়ে বড় পোশাক আমদানিকারক দেশ যুক্তরাষ্ট্রও তাদের ব্যবহার কমিয়েছে। সামনের দিনগুলোতে এই বাজার ভালো হবে বলে আশা প্রকাশ করেন বিজিএমইএ সভাপতি। ফারুক হাসান বলেন, উৎসবের মৌসুম, বিশেষত বড়দিন উপলক্ষে বিক্রি খুব ভালো ছিল; কারণ পুরনো মজুত হ্রাস পেয়েছে। এতে এই বছর বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির পরিমাণ বাড়বে বলে আশা করা যাচ্ছে।’
ওটেক্সার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পোশাক রপ্তানি এক বছর আগের ২১.৭৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ১০.৮৩% কমে ১৬.৩২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০২৩ সালে ভিয়েতনাম ও ভারতের পোশাক রপ্তানি কমেছে যথাক্রমে ২২.২৯ ও ২১.৪২ শতাংশ। ওই বছর যুক্তরাষ্ট্রে ইন্দোনেশিয়া ও কম্বোডিয়ার পোশাক রপ্তানি কমেছে যথাক্রমে ২৫.১৯ ও ২৩.৫৮ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম খুচরা বাণিজ্যিক সংগঠন ন্যাশনাল রিটেইল ফেডারেশনের (এনআরএফ) প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ম্যাথিউ শাই গত সপ্তাহে এক বিবৃতিতে বলেন, খুচরা বিক্রেতারা একটি সফল ছুটির মৌসুম থেকে আসছেন। প্রত্যাশা করা হচ্ছে, বিক্রয় প্রবৃদ্ধি প্রায় তিন থেকে চার শতাংশ হবে। যা মহামারির সময় বিক্রি যতটা বেড়েছিল, এখন তার থেকে আরও বেশি বাড়ছে।