বাংলাদেশের সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় শনিবার সকালেও ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে। একাধিক এলাকায় জ্বলছে আগুন। কিছুক্ষণ পরপর সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসছে গুলি। এছাড়া গতকালও একটি মর্টারশেল বাংলাদেশে এসে পড়েছে। এ নিয়ে গত আটদিনে এই এলাকা দিয়ে তিনটি মর্টারশেল এসে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আতঙ্কে সীমান্তবর্তী স্থানীয় বাসিন্দারা। জরুরি কাজ ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। কৃষক ফসলের জমিতে যাচ্ছেন না। মাঝে কয়েকদিন শান্ত থাকলেও ফের উত্তপ্ত বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা। এদিকে গতকালও সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে রোহিঙ্গাসহ রাখাইনের স্থানীয় বাসিন্দারা।
এর আগে শুক্রবার দুপুরেও ভারী মর্টারশেল বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির শব্দ কেঁপেছে বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্ত। উড়ে এসেছে অবিস্ফোরিত মর্টার শেল। এখন পর্যন্ত দুইটি মর্টার শেল অবিস্ফোরিত অবস্থায় তুমব্রু বিওপি’র ৫০ গজ দূরে একটি ব্রিজে রয়েছে। এদিকে এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেকটা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে সীমান্ত পারের মানুষ। গতকালের উয়াইক্যং সীমান্ত এলাকায় অল্পের জন্য রক্ষা পায় হাজী আফসার এবং মনোয়ারার পরিবার। তাদের ঘরের টিন ছিদ্র হয়ে ঘরে এসে পড়ে বুলেট। স্থানীয় বাসিন্দা আকাশ জানান, আমাদের জন্মের পরে এমন অবস্থা দেখি নাই। ভোররাত ৫টার দিকে হঠাৎ গোলাগুলি এবং বিকট শব্দ শুনতে পাই। যে কারণে আমি এবং আমার স্ত্রী খাটের নিচে চলে যাই। কিছুটা শব্দ কমলে বের হয়ে বাইরে আসি এবং বেশ কয়েকটি গুলি দেখতে পাই। স্থানীয়রা জানান, যারা নাফ নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন এবং ফসলি জমি আবাদ করেন তাদের জন্য খারাপ সময়ের অপেক্ষা করছে। এদিকে গত দুইদিন আগে রহমতের বিল সীমান্তে পড়ে থাকা লাশটি স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করেন এবং মর্গে পাঠান। স্থানীয়রা বলেন- এমন বেশ কয়েকটি লাশ বিলটিতে রয়েছে। এই লাশগুলো না সরালে ঘেরের মাছ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার সিরাজুল মোস্তফা লালু বলেন, আমরা সীমান্তের কাছে বসবাস করি। সব সময় ভয়ের মধ্যেই থাকতে হচ্ছে। গোলাগুলির শব্দ ও ভয়ে এলাকার মানুষ সীমান্তের কাছে কাজ কর্ম করতে যেতে পারছেন না। ভোর থেকে হোয়াইক্যং পয়েন্টের মিয়ানমারের ওপারে শুরু হয় প্রচণ্ড গোলাগুলি। ওপারে চলা গুলি থেকে ৪টি গুলি এপারে হোয়াইক্যং উত্তরপাড়া হোছন আলীর মুদির দোকান, হাইওয়ে রোডের পাশে হোয়াইক্যং মাঝেরপাড়া আবসারের বাড়িতে, উত্তরপাড়া মানিকের বাড়ি ও ধলুমিয়ার বাড়িতে এসে পড়ে। একই সঙ্গে চাষের জমিতে আরও পড়ছে বলে স্থানীয়রা জানান। ফলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে সীমান্তবর্তী মানুষ।
বিজিবি জানায়, মিয়ানমারের বিলাই চাড় দ্বীপে গোলাগুলি ও ফায়ারিংয়ে ঘণ্টাখানিক শব্দ হয়। হোয়াইক্যং বিওপি’র কোম্পানি কমান্ডার আবু জানান, গোলাগুলির শব্দ ও বেশ কয়েকটি বুলেট এপারে এসেছে বলে শুনেছি। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
অপরদিকে মিয়ানমারে সংঘাতের মধ্যে বাংলাদেশে গত ৬ই ফেব্রুয়ারি অস্ত্রসহ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ২৩ জন অস্ত্রধারী যুবককে স্থানীয় জনতা আটক করে বিজিবি’র কাছে হস্তান্তর করে। শুক্রবার দুপুরে বালুখালী বিওপি’র নায়েক সুবেদার শহীদুল ইসলাম বাদী হয়ে ওই ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। উখিয়া থানার ওসি শামীম হোসেন জানান, আমরা তাদের আদালতে পাঠিয়ে দিয়েছি। আমাদের পক্ষ থেকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমার নাগরিক, সেনাবাহিনী, সরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের ফিরিয়ে নিতে একটি জাহাজ দেশটি থেকে পাঠানো হচ্ছে। বাংলাদেশ সীমান্তে জাহাজটি পৌঁছার পর সকল ধরনের আইনি কার্যক্রম শেষ করে তাদের আবার মিয়ানমারে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।