নিরাপদ হোক জাবি

0
76

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) এক দম্পতিকে ডেকে এনে স্বামীকে আবাসিক হলে আটকে স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের পাশের জঙ্গলে এ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এরই মধ্যে এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর স্বামী বাদী হয়ে ছয়জনের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় একটি ধর্ষণ মামলা করেন। ঘটনার পর থেকে জড়িতদের বিচার দাবিতে শনিবার রাত ও রোববার দিনভর মানববন্ধন, মশাল মিছিলসহ বিক্ষোভে উত্তাল থাকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছেন মূল অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান এবং তার সহযোগী একই বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হাসানুজ্জামান, ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাগর সিদ্দিকী ও উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন। পলাতক আছেন ভুক্তভোগীর পূর্বপরিচিত মো. মামুনুর রশিদ এবং স্বামীকে আটকে রাখায় সহায়তা ও মারধর করা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মুরাদ। শিক্ষার্থীদের মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক। বাকিরা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ও মীর মশাররফ হোসেন হল কমিটির পদপ্রত্যাশী।

১৯৯৮ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন মানিক ‘ধর্ষণের সেঞ্চুরি উদযাপন’ করেছিলেন। অর্থাৎ একের পর এক ধর্ষণ করা সত্ত্বেও তাকে কখনো প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক বাধার মুখে পড়তে হয়নি। জাহাঙ্গীরনগর দেশের অন্যতম সেরা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ভর্তি হন তারা দেশের মেধাবী শিক্ষার্থী। স্বাভাবিকভাবেই এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে, অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে যাদের রুখে দাঁড়ানোর কথা, প্রতিবাদ করার কথা, সেই শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে, নিজেরাই ধর্ষক হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে, যা আমাদের নতুন শঙ্কার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়ন রোধে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কেন্দ্র’ রয়েছে। কিন্তু নির্যাতনের শিকার ৯০ শতাংশ ছাত্রী বা নারী শিক্ষকরা সেখানে অভিযোগ দিতে চান না। কারণ, অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রভাবশালী বা ক্ষমতাসীন দলের হলে সেল বিচারে গড়িমসি করে। লোকলজ্জা, সামাজিক চাপও বড় বাধা। শুধু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায়ই যৌন নিপীড়ন হচ্ছে। নব্বইয়ের দশকের শেষদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও ঘটেছিল ছাত্রী নিপীড়নের ঘটনা। এ দুটি ঘটনার প্রেক্ষাপটে সে সময় শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ কমিটি তৈরির ব্যাপারে জনমত গড়ে ওঠে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন সহিংসতার ক্ষেত্রে শুধু শিক্ষার্থীরা নন বরং যারা সমাজ গড়ার কারিগর, নতুন প্রজন্ম গড়ার কারিগর, সেই শিক্ষক সমাজের কিছুসংখ্যক শিক্ষকও এ অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। শুধু নারী শিক্ষার্থীরা নন, নারী শিক্ষকরাও যৌন নিপীড়ন, যৌন হয়রানির শিকার হন। অন্যায়-অনাচার-নির্যাতনের ঘটনার বিচার না হওয়ার সংস্কৃতি ক্রমেই আধিপত্য বিস্তার করছে এবং আরও বর্বরতর ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থী, নারী শিক্ষকসহ সব স্তরের, সব পেশার, সব বয়সের নারীরা নিপীড়ন-নির্যাতন-অন্যায়-অনাচারের প্রধানতম শিকার, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

আমরা মনে করি, বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে মুক্ত হতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে আইনের শাসন। নেতৃত্ব পর্যায়ের ব্যক্তিত্বদের মধ্যে থাকতে হবে নিজস্ব দায়বদ্ধতা। তবেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সমাজে ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য প্রবণতা কমানো সম্ভব হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here