এস আলম গ্রুপের টাকা পাচার তদন্তে হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশ বাতিল করে দিয়েছে আপিল বিভাগ

0
35

এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলম (এস আলম) ও তাঁর স্ত্রী ফারজানা পারভীনের বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান ও তদন্তের জন্য হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশনা বাতিল করে দিয়েছে সুপ্রিমকোর্ট। এতে তদন্তের বাধ্যবাধকতা উঠে গেছে দুদক এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের উপর থেকে।

সোমবার সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ এক রায়ে টাকা পাচার তদন্তের জন্য নির্দেশনা চেয়ে আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। এই খারিজ আদেশের ফলে তদন্তে পরোক্ষ বাধা সৃষ্টি করল সুপ্রিমকোর্ট। এই আদেশের ফলে টাকা পাচারের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে দেশের সুপ্রিমকোর্ট।

জাতীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ সোমবার (৫ই ফেব্রুয়ারি) এই আদেশ দিয়েছে।

এর আগে হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ এস আলম গ্রুপের টাকা পাচারের বিষয়টি অনুসন্ধানের জন্য নির্দেশনা দিয়েছিল। এই নির্দেশনার বিরুদ্ধে আপিল করেছিল এস আলম গ্রুপ। এই লিভ টু আপিলের শুনানী শেষে সোমবার আদেশ দিয়েছে সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি ও ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে গঠিত আপিল বিভাগ।

সংক্ষিপ্ত আদেশে বলা হয়, হাইকোর্ট বিভাগের ইস্যু করা সুয়োমোটো রুল ডিসচার্জড (খারিজ) করা হলো। যাই হোক এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট(বিএফআইইউ) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বাধা হবে না।

হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে এস আলম ও তাঁর স্ত্রী ফারজানা পারভীনের করা আবেদন (লিভ টু আপিল) নিষ্পত্তি করে এ আদেশ দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা বলছেন, বিএফআইইউ ও দুদক চাইলে এখন ওই অভিযোগ অনুসন্ধান করতে পারে।

গত বছরের ৪ঠা আগস্ট বাংলাদেশের একটি ইংরেজি দৈনিক পত্রিকায় এস আলমের মুদ্রা পাচার সংক্রান্ত ব্যাপক দুর্নীতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে আনেন একজন আইনজীবী। এরপর গত ৬ই আগস্ট হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দেন।

অনুমতি ছাড়া বিদেশে বিনিয়োগ বা অর্থ স্থানান্তর নিয়ে এস আলম ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধান করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। দুদক, বিএফআইইউ ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়।

হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে এস আলম ও তাঁর স্ত্রী গত ২১শে আগস্ট লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন, যা গত ২৩শে আগস্ট আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। সেদিন শুনানি নিয়ে চেম্বার আদালত বিষয়বস্তুর ওপর সব পক্ষকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দেন। একই সঙ্গে লিভ টু আপিলটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে ৮ই জানুয়ারি শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি ওঠে।

আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রোকন উদ্দিন মাহমুদ, আজমালুল হোসেন কেসি ও আহসানুল করিম। দুদকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। পত্রিকার খবর নজরে আনা আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক শুনানিতে অংশ নেন।

পরে আবেদনকারীদের আইনজীবী আহসানুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুয়োমোটো রুল খারিজ হওয়ায় হাইকোর্টের অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ থাকছে না। তবে দুদক ও বিএফআইইউ যদি মনে করে তাহলে আইন অনুসারে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালাতে বাধা নেই।’

শুনানির বিষয়ে আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, ‘হাইকোর্টের রুলে এস আলম ও তাঁর স্ত্রীকে বিচার হওয়ার আগেই অর্থ আত্মসাৎকারী ও পাচারকারী হিসেবে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে এস আলম ও তাঁর স্ত্রীর বক্তব্যও শোনা হয়নি। তাই রুল ভ্রান্ত ধারণাপ্রসূত ও খারিজযোগ্য, শুনানিতে বলেছি।’

পরে আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘হাইকোর্টের আদেশে এস আলম ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধান করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ ছিল। আজকের আদেশের ফলে হাইকোর্টের এই নির্দেশ থাকছে না। তবে দুদক ও বিএফআইইউ নিজে চাইলে নিজ উদ্যোগে অনুসন্ধান করতে পারবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here