একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের রাতে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে দলবদ্ধ গণধর্ষণের সেই আলোচিত ঘটনার মামলার রায় আজ। নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক (জেলা জজ) ফাতেমা ফেরদৌস রায় ঘোষণা করার কথা রয়েছে। এর আগে গত ১৬ই জানুয়ারি মামলাটির রায় ঘোষণা করার কথা ছিল। কিন্তু রায় লেখার কাজ শেষ না হওয়ায় তারিখ পিছিয়ে ৫ই ফেব্রুয়ারি পুনঃনির্ধারণ করা হয়। আদালতের স্টেনোগ্রাফার মো. সামছুদ্দিন মানবজমিনকে জানান, আলোচিত ওই মামলাটির রায় ঘোষণার পূর্ববর্তী সকল কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। তাই নির্ধারিত তারিখে আজ সোমবার রায় ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, গত ২৯শে নভেম্বর অধিকতর যুক্তিতর্ক শেষে ১৬ই জানুয়ারি রায় ঘোষণার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু রায় লেখার কাজ শেষ না হওয়ায় সেদিন রায় ঘোষণা করা হয়নি। ওইদিন রায় ঘোষণার পরবর্তী তারিখ ৫ই ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করা হয়। কোর্ট ইনস্পেক্টর মো. শাহ আলম বলেন বহুল আলোচিত এই মামলার বিষয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন কোর্টকে মেটাল ডিটেক্টরসহ চেক করে নারী পুরুষদের ঢুকিয়ে নিরাপত্তার চাদরে কোর্ট প্রাঙ্গণকে ঢেকে রাখা হবে।
২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাতে স্বামী-সন্তানদের বেঁধে রেখে এক নারী (৪০)কে গণধর্ষণ করা হয়।
নির্যাতনের শিকার নারী ৪ সন্তানের জননী। নির্যাতিত নারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, ভোটকেন্দ্রে থাকা ব্যক্তিদের পছন্দের প্রতীক নৌকায় ভোট না দেয়া। এরই জেরে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি তখন দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার পরদিন নির্যাতনের শিকার নারীর স্বামী বাদী হয়ে চর জব্বর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। পরে মামলার তদন্ত শেষে সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কার হওয়া প্রচার সম্পাদক রুহুল আমিন মেম্বারসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২৭শে মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
মামলার বাদী নির্যাতনের শিকার নারীর স্বামী জানান, রায়কে ঘিরে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। কারণ আসামিরা প্রভাবশালী এবং খারাপ লোক। তিনি আতঙ্কের বিষয়টি সুবর্ণচরের চর জব্বর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলামকে অবহিত করেছেন। আজ রায় ঘোষণাকালে স্ত্রীসহ আদালতে উপস্থিত থাকবেন বলে জানান তিনি। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী কৌসুলী ছালেহ আহমদ সোহেল খান বলেন, আলোচিত ওই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ২৩ জন সাক্ষী উপস্থাপন করেছে। মামলায় রুহুল আমিন মেম্বারসহ ১৬ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একজন আসামি- মো. মিন্টু ওরফে হেলাল (২৮) ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন। কারাগারে থাকা ১৫ জন আসামির মধ্যে কমপক্ষে ৮ জন আসামি নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আজ মামলাটির রায় ঘোষণা হওয়ার কথা রয়েছে। এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত গ্যাংরেপ মামলার আসামি মিন্টু হেলাল ৫ বছর অতিবাহিত হলেও গ্রেপ্তার হয়নি।