গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেছেন, অনেকেই নির্বাচনে না গিয়ে আলাদাভাবে আন্দোলন করছেন। তাদের বলব, একসাথে নামুন। আলাদাভাবে আন্দোলন করে সরকার পতন করা যাবে না।
মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) রাজধানীতে গণঅধিকার পরিষদের কালো পতাকা মিছিলে পুলিশের বাধা পরবর্তী সমাবেশে এ কথা বলেন নুর। ৭ জানুয়ারি ‘একতরফা’ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত দ্বাদশ সংসদ অধিবেশনের প্রতিবাদে বিকেল ৪টায় বিজয়নগর আল রাজি ভবনের সামনে থেকে সংসদ অভিমুখে কালো পতাকা মিছিল শুরু করে গণঅধিকার পরিষদ।
নেতারা অভিযোগ করেন, কালো পতাকা মিছিলে পুলিশ শুরুতে বাধা দেয়, পরে লাঠিচার্জ করে। তারা আরও বলেন, মিছিল শুরু করলে পুলিশ ব্যানার কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলে এবং নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের হুমকি দেয়।
গণঅধিকার পরিষদের নেতারা জানান, কর্মসূচিতে পুলিশের লাঠিচার্জে দলের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন, উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ, শাকিল উজ্জামান, শহিদুল ইসলাম ফাহিম, ফাতিমা তাসনিম, জসিম উদ্দিন আকাশ, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তরের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফারজানা কিবরিয়া, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নুসরাত কেয়া, যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মনজুর মোর্শেদ মামুনসহ প্রায় ১০ জন আহত হয়েছেন।
পুলিশের বাধা পরবর্তী সমাবেশে নুরুল হক নুর বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছি, কিন্তু পুলিশ-আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেখানে হামলা করছে। আজকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ হামলা করেছে, অসংখ্য নেতাকর্মীকে আটক করেছে। আমরা চাইলে পুলিশের সাথে ধাক্কাধাক্কি করে মিছিল করতে পারি, এতে আমাদের হয়তো কয়েকজনকে আটক করবে। কিন্তু এতে লাভ কার? ২৮ অক্টোবর একজন পুলিশ মারা গেলে এতিম হলো তার সন্তান, বিধবা হলো তার স্ত্রী, লাভ হলো সরকারের। আজকে একটা অবৈধ সংসদের অধিবেশন বসেছে। এই সংসদে কেউ জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি। এরা অবৈধভাবে সংসদে বসেছে। আজকে এই সরকার দৈত্য-দানবের মতো জনগণের ঘাড়ে চেপে বসেছে। আজকে ড. ইউনূসের মতো সম্মানী লোককে কোর্টের বারান্দায় ঘুরতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, যারা আমাদের ওপর হামলা করছে, তাদের কিন্তু বিচার হবে। আমরা মরে গেলেও আমাদের সন্তানরা বেঁচে থাকবে, আমাদের নেতাকর্মীরা বেঁচে থাকবে- তারা একদিন বিচার করবে। অনেকেই নির্বাচনে না গিয়ে আন্দোলন করছেন আলাদা আলাদাভাবে। তাদের বলব, একসাথে নামুন। আলাদাভাবে নেমে সরকার পতন করা যাবে না। আওয়ামী লীগের উদ্দেশে বলব, ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবেন না। ’৭১-এর পর জনগণ যেমন বাকশাল মেনে নেয়নি, এবারও জনগণ একতরফা নির্বাচন, একদলীয় শাসন মেনে নেয়নি। তারা সময় ও সুযোগের অপেক্ষায় আছে। প্রেক্ষাপট তৈরি হলে, জনগণ রাজপথে নেমে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগকে গদি থেকে নামাবে।
দলের এই অংশের সাধারণ সম্পাদক মো রাশেদ খান বলেন, সংসদ অভিমুখে আমাদের কালো পতাকা মিছিল ছিল, পুলিশ আমাদের মিছিল পণ্ড করে দিয়েছে। আমাদের ওপর লাঠিচার্জ করেছে। পুলিশের দায়িত্ব জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া। সেখানে পুলিশ উল্টো অবৈধ ক্ষমতা রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছে। আমাদের আন্দোলন তো পুলিশের বিরুদ্ধে না। আজকে অবৈধ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসেছে, আমরা গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মেনেই প্রতিবাদ করছি। কিন্তু এই অবৈধ সরকার কোনো রীত-নীতির ধার ধারে না। এই সরকারের কাছে ক্ষমতাই মুখ্য বিষয়। জনগণকে বলব, রাজপথে নেমে আসুন, সরকারের পতন অনিবার্য।
গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান খানের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন-দলের উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ, শাকিল উজ্জামান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মনজুর মোর্শেদ মামুন।
কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন দলের উচ্চতর পরিষদের সদস্য শহিদুল ইসলাম ফাহিম, আব্দুজ জাহের, ফাতিমা তাসনিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রবিউল হাসান, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক তোফাজ্জাল হোসেন, মহানগর দক্ষিণের সভাপতি নাজিম উদ্দিন, যুব অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নাদিম হাসান, পেশাজীবী অধিকার পরিষদের সভাপতি ডা. জাফর মাহমুদ, ছাত্র অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তারিকুল ইসলাম, শ্রমিক অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা সম্পদসহ নেতাকর্মীরা।