সংবিধান লঙ্ঘন করে ‘ডামি এমপি’দের শপথ গ্রহণ ও পার্লামেন্টের অধিবেশন ডাকার প্রতিবাদে ৩০শে জানুয়ারি ‘ডামি ফাইভ পার্সেন্ট সংসদ’কে লাল কার্ড দেখানোর কর্মসূচি দিয়েছে ‘এবি পার্টি’। শনিবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এই ঘোষণা দেন দলের সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু। ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের সংবিধান থেকে আইনি বিধান উল্লেখ করে বক্তব্য রাখেন এবি পার্টির যুগ্ম আহবায়ক ও সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, এই মুহূর্তে দেশে মিডনাইট একাদশ সংসদের ৩৫০ জন আর ডামি দ্বাদশ সংসদের ২৯৮ জন মোট ৬৪৮ জন শপথবদ্ধ এমপি রয়েছেন। আগামী ২৯শে জানুয়ারি একাদশ সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়া অবধি এই অরাজকতা থাকবে। এটি একটি চরম সাংবিধানিক লঙ্ঘন। এই সময়ের মধ্যে চাইলে দ্বাদশ অবৈধ সংসদ বাতিলও করে দেয়া সম্ভব। তিনি বলেন, ডামি সরকার যেহেতু স্বজ্ঞানে ইচ্ছাকৃতভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন, যাতে ৭(খ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ‘এই সংবিধান বা ইহার কোন বিধানের প্রতি নাগরিকের আস্থা, বিশ্বাস বা প্রত্যয় পরাহত করিলে কিংবা উহা করিবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করিলে- তাহার এই কার্য রাষ্ট্রদ্রোহিতা হইবে এবং ঐ ব্যক্তি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে দোষী হইবে। (৩) এই অনুচ্ছেদে বর্ণিত অপরাধে দোষী ব্যক্তি প্রচলিত আইনে অন্যান্য অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ দণ্ডে দণ্ডিত হইবে’ তাদের ওপর ক্যাপিটেল পানিশমেন্টও বরাদ্দ।
অ্যাডভোকেট তাজুল সংবিধানের ১২৩ (৩) অনুচ্ছেদের “ক” দফা উল্লেখ করে বলেন, এতে বলা হয়েছে: “সংসদ অবসানের কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পূর্ববতী নব্বই দিনের মধ্যে সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে। তবে শর্ত থাকে যে, এই দফার “ক” উপ দফা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত ব্যক্তিগণ উক্ত উপ দফার উল্লিখিত মেয়াদ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত, সংসদ সদস্যরূপে কার্যভার গ্রহণ করিবেন না।’
বর্তমান সংসদের মেয়াদ আছে ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত। অর্থাৎ, এই দফা ও উপ দফা অনুযায়ী দ্বাদশের জন্য নির্বাচিতরা ২৯ জানুয়ারির আগে শপথ গ্রহণ করতে পারবেন না। করলে, তা অসাংবিধানিক এবং অবৈধ হবে।
অন্যদিকে সংবিধানের ১৪৮ এর (৩) দফায় বলা আছে: “এই সংবিধানের অধীনে যে ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তির পক্ষে কার্যভার গ্রহণের পূর্বে শপথ গ্রহণ আবশ্যক, সেই ক্ষেত্রে শপথ গ্রহণের অব্যবহিত পর তিনি কার্যভার গ্রহণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে।” তার মানে ১০ই জানুয়ারি যেদিন দ্বাদশের ২৯৮ জন সদস্য শপথ নিয়েছেন, সেদিন থেকেই তারা পদে আসীন হয়েছেন। এটি সাংবিধানিকভাবে অবৈধ। একটি একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে সংবিধান লঙ্ঘন করে বাংলাদেশ এক বিস্ময়কর বাকশালী যুগে প্রবেশ করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ব্রিফিংকালে আরও উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, ব্যারিস্টার যোবায়ের আহমদ ভূঁইয়া, দফতর সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা, প্রচার সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল, মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহবায়ক গাজী নাসির, যুগ্ম সদস্যসচিব সফিউল বাসার, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদ, মশিউর রহমান মিলু, শরণ চৌধুরী, আনোয়ার হোসেন সহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।