তফসিল ঘোষণা ও কিছু লোকদের ভয়, প্রলোভন দেখিয়ে এক তরফা নির্বাচনের দিকে হাটার প্রেক্ষিতে ঢাকাতে জমে উঠেছে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক যুদ্ধ।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা গত ২২ নভেম্বর রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক্স হ্যান্ডেলে (টুইটার) অভিযোগ করেছেন, ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বাংলাদেশে সরকারবিরোধী আন্দোলনের পরিকল্পনার বিষয়ে বিরোধী দলের এক নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেন,
‘বাংলাদেশের জনগণের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশা শান্তিপূর্ণ উপায়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের অভিন্ন লক্ষ্য পূরণে এবং বাংলাদেশিদের স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাতে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কর্মীরা সরকার, বিরোধী দল, নাগরিক সমাজ ও অন্য অংশীদারদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে এবং ভবিষ্যতেও রাখবে।
রুশ মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা অভিযোগ করেন, অক্টোবরের শেষের দিকে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ও বিরোধী দলের উচ্চপর্যায়ের এক প্রতিনিধির মধ্যে বৈঠকের বিষয়ে তথ্য জনসমক্ষে এসেছে। ওই বৈঠকে তাদের মধ্যে দেশে ব্যাপক সরকারবিরোধী বিক্ষোভ সংগঠিত করার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মার্কিন রাষ্ট্রদূতের এমন কর্মকাণ্ডকে কীভাবে দেখা উচিত, সে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর মতে, মার্কিন রাষ্ট্রদূতের এমন তৎপরতা একটি সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের চরম হস্তক্ষেপ। তিনি বলেন, এমন তৎপরতা কূটনৈতিক সম্পর্কের বিষয়ে ১৯৬১ সালের ভিয়েনা সনদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
জাখারোভা বলেন, ‘দেশের সংবিধান অনুসরণ করে স্বাধীনভাবে ও বিদেশি শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহযোগিতা ছাড়াই যে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করতে সক্ষম, তা নিয়ে আমাদের কোনো সংশয় নেই।’
রুশ মুখপাত্রের এমন বক্তব্যের জবাবে মার্কিন অবস্থান আবারও পরিস্কার ভাবে বুঝতে পারা গেল। এদিকে সরকার বিরোধী দলের উপর ক্র্যাকডাউন জারি রেখে অনুগত মিডিয়ার মাধ্যমে বুঝাতে চাইছে, ভারতের সহযোগিতায় তারা যা খুশি, যেমন খুশি তেমন ভাবে নির্বাচনের নামে ভোট ডাকাতির আয়োজন করে ক্ষমতায় থাকতে পারবে। আর এতে আমেরিকার অবস্থানও পরির্বতন হয়ে যাবে। নির্বাচন করে ফেলতে পারলেই আমেরিকাও ঠিক হয়ে যাবে- এমন বক্তব্য দিয়েছেন আব্দুল মোমেন। কিন্তু রুশ মুখপাত্রের জবাবে মার্কিন পরারাষ্ট্র দপ্তর যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাতে আমেরিকার অবস্থানের কোন পরির্বতন হয়নি এবং আগামীতেও হবে না তা স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকার ২০১৪ এবং ২০১৮ এর মতো অপকৌশলের আশ্রয় নিলে বাংলাদেশ পরাশক্তির লড়াইয়ের ক্ষেত্র হয়ে উঠবে। ক্ষমতার স্বার্থে দেশের ভাগ্য দিয়ে এমন ছেলে খেলার পরিণতি হবে অকল্পনীয়।
জনগনের ভোটাধিকার রক্ষার এই আন্দোলনে গণতন্ত্রকামীদের সমর্থন দ্রুত বিজয়ের সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে, তাই আমেরিকার অবস্থানকে ঘিরে সরকারি মিথ্যা প্রচারনা চলছে। কে না জানে অন্ধ হলে প্রলয় বন্ধ থাকে না।