বাংলাদেশে নির্বাচন এলে কতকিছুই না ঘটে!

0
80

নির্বাচন এলে বাংলাদেশে কতকিছুই না ঘটে! তৎপর হয় এজেন্সি। বিদেশি শক্তিও নানা খেলায় লিপ্ত হয়। কখনও প্রকাশ্যে, কখনও পর্দার আড়ালে। এবারতো একদম খোলাখুলিভাবে বৃহৎশক্তিগুলোর লড়াই হয়েছে। একদিকে চীন-ভারত-রাশিয়া। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রসহ তার মিত্ররা। প্রথমবারের মতো দিল্লিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে বৈঠক হয়েছে এই নির্বাচন নিয়ে।  ফলাফল আগেই নির্ধারিত ছিল। তাই কোনো বরফ গলেনি। ভারত নিজের অবস্থানে অটল থাকে।

ব্লিঙ্কেন অনেকটাই খালি হাতে ওয়াশিংটন ফিরে যান।  ২০১৪ সনে সুজাতা সিং অবশ্য কাজটা প্রকাশ্যেই সেরে ফেলেছিলেন। তখন ট্রাম্পকার্ড ছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। বিএনপি’র প্রতি যথেষ্ট রাগ থাকা সত্ত্বেও নির্বাচনে যাবেন না এমনটাই মনস্থির করেছিলেন সাবেক এই প্রেসিডেন্ট। ২০০৬-এর ভুন্ডুল হওয়া নির্বাচনে এরশাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছিল তৎকালীন নির্বাচন কমিশন। নেপথ্যে অনেক কিছুই তখন ঘটেছিল। যার কারণে এসেছিল ওয়ান-ইলেভেন।  এতকিছু জানার পরও এরশাদ তলে তলে বিএনপি’র সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন নিবিড়ভাবে। সমঝোতাও হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ষড়যন্ত্রের কাছে এরশাদ পরাভূত হন। তারপর অন্য ইতিহাস। এরশাদ নির্বাচনে যেতে বাধ্য হলেন। এর আগে অবশ্য হাসপাতালে ভর্তি হলেন কৃত্রিম  অসুস্থতায়। বলেছিলেন, আমি তো সুস্থ। হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। 

যাইহোক, একটি অনুসন্ধানে কী ঘটেছিল তা বেরিয়ে এসেছে। এক সকালে হাসপাতালের বেডে বসে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এরশাদ। এর আগে তিনি নিজেই নিজের ডেথ সার্টিফিকেট দেখার সুযোগ পান। একজন পদস্থ অফিসার একটি ডেথ সার্টিফিকেট দেখিয়ে বলেন, স্যার এবার আপনি কী করবেন করুন। আপনি নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেন। নাহলে এটাই ঘটবে। আপনার সামনে বড় বিপদ অপেক্ষা করছে। হতবাক এরশাদ তখনও অনড়। কোনও অবস্থাতেই নির্বাচনে অংশ নেবেন না। তার কথা-এই নির্বাচন পাতানো। এতে অংশ নেয়ার অর্থ হচ্ছে আত্মহত্যা করা। এর মধ্যেই এই অফিসার ওই ডেথ সার্টিফিকেট দেখান। যে সার্টিফিকেটে এরশাদের কীভাবে মৃত্যু হয়েছে তা সন্নিবেশিত রয়েছে। এরশাদ ওই সার্টিফিকেট দেখে যারপরনাই ক্ষুব্ধ হন। বলেন, তোমরা কি আমাকে মেরে ফেলবে?  উপায়ন্তর না দেখে তখনই এরশাদ সিদ্ধান্ত নেন নির্বাচনে অংশ নেয়ার।  তিনি অবশ্য তখন বলেছিলেন, কাজটা ভালো হলো না। ২০১৮ সনে একটি দশ লাইনের চিরকুট সবকিছু বদলে দেয়। ভারতের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জির চিরকুট পেয়ে ড. কামাল হোসেন অনেকটা আত্মবিশ্বাসী ও আপ্লুত হয়েছিলেন। বিএনপি নেতারা নির্বাচনে অংশ না নেয়ার পক্ষে তখনও ছিলেন অনড়। ঘন ঘন বৈঠক করে ড. কামাল হোসেন তাদেরকে নির্বাচনমুখী করতে সফল হন।  এক পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হলো  সংলাপ। যেখানে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে এমনটাই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বিএনপি নেতারা এক রহস্যজনক কারণে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। যা ছিল আত্মঘাতী, অদূরদর্শিতা। পাল্টে যায় দৃশ্যপট। নির্বাচনে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে এমনটাই বলাবলি হচ্ছিল। দৃশ্যত তাই দেখা যাচ্ছিল। ভোটের দিন সকাল ১০টার দিকে  বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর  মিডিয়াকে বলেন, ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে । অথচ তিনি জানতেনই না দিনের ভোট রাতে হয়ে গেছে। বগুড়ার একটি আসন থেকে মির্জা ফখরুল জয়লাভ করেন। সঙ্গে আরও পাঁচজন। যদিও মির্জা ফখরুল ওই আসনের এমপি হিসেবে শপথ নেননি। কী ছিল প্রণব বাবুর সেই চিরকুটে? অনুসন্ধানে জানা যায়, এই চিরকুট শেয়ার করে ড. কামাল হোসেন জানিয়েছিলেন, ৬৫ আসন ছাড়তে সরকার রাজি আছে। এটা তারাও নিশ্চিত করবেন। কিছুটা দেন-দরবার হলেও সরকারের এই প্রস্তাবেই তারা সম্মত হন। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। একটি বিদেশি শক্তির সরাসরি হস্তক্ষেপে তা পাল্টে যায়। সরকারের হাতেও এর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ ছিল না। সমালোচনায় ক্ষতবিক্ষত ড. কামাল এরপর রাজনীতির মাঠ থেকেই বিদায় নেন।  ২০২৪ সনের ৭ই জানুয়ারির নির্বাচন আরও রহস্যেভরা। বিরোধী শক্তির আন্দোলন বারবার হোঁচট খাওয়ার পেছনে কী কারণ ছিল? এখানেও অনুসন্ধানে জানা যায়, সরকারের কথিত শেয়ারহোল্ডাররা নানাভাবেই  স্যাবোটাজ করতে থাকে। বিএনপি নেতারা তা জানতেন না এমন নয়। শেয়ারহোল্ডারদের প্রভাব ছিল অনেক বেশি। বিএনপি যাতে নির্বাচনে অংশ না নেয় সেজন্য ইনভেস্টও করেছিল একটি অদৃশ্য শক্তি। একাধিক জরিপ রিপোর্ট সরকারকে বিচলিত করেছিল। সবকটা রিপোর্টই ছিল নেতিবাচক, সরকারের বিপক্ষে। স্বচ্ছ ভোট হলে সরকারের নিশ্চিত ভরাডুবি ঘটবে এমন ইঙ্গিতই ছিল জরিপ রিপোর্টগুলোতে। তাই তারা বিএনপিকে নির্বাচনমুখী না করতে সব প্রচেষ্টাই অব্যাহত রাখে। শেয়ারহোল্ডাররা নিজের স্বার্থে জাতীয় স্বার্থকে বিকিয়ে দেয়। ২৮ অক্টোবর কিংবা ১০ ডিসেম্বর কেন ব্যর্থ হলো তা নিয়ে বিএনপি নেতৃত্ব এখন পর্যালোচনা করছেন। কিন্তু দেখছেন শর্ষের মধ্যেই ভূত।  আন্তর্জাতিক শক্তি এ কারণেই সম্ভবত হতাশ। তাই তারা বেছে নিচ্ছে বিকল্প পথ।

যাইহোক, এখানে একটি প্রসঙ্গ উল্লেখ করতেই হয়, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের কেন অনড় অবস্থান থেকে নির্বাচনে গেলেন। সবাই একবাক্যে তার সমালোচনা করছেন। বলছেন, এটাই জাতীয় পার্টির চরিত্র । কেউ বলছেন না, কোন প্রেক্ষাপটে তিনি রাজি হয়েছেন। তবে বিষয়টা যে সহজ ছিল না এটা পরিষ্কার। তার স্ত্রী শেরিফা কাদেরের সবার আগে নির্বাচনমুখী হওয়ার পেছনে কী কারণ ছিল? ঢাকার একটি আসন নাকি অন্য কিছু!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here