রংপুর মহানগরীসহ বিভাগের আট জেলায় জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। ঘন কুয়াশায় গত আট দিন সূর্যের দেখা মেলেনি। ফলে দিন ও রাতে একই রকম শীত অনুভূত হচ্ছে। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠাণ্ডাজনিত নানা রোগে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বেড়েছে।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ এ বিভাগের হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কিওলাইটিস, অ্যাজমা ও শ্বাসকষ্টসহ শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে দুই-তিনগুণ বেড়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ শিশু। গত আট দিনে এ হাসপাতালে ১৮ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
রোববার রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের দুটি ওয়ার্ডের সূত্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, হাসপাতালের তিনতলার ৯ ও ১০ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে ৮০ শয্যার বিপরীতে রোববার সকাল পর্যন্ত ভর্তি আছে তিন শতাধিক শিশু। কোনো কোনো বেডে তিন-চারজন শিশু রোগীকে রাখা হয়েছে। শয্যা সংকটের কারণে অনেক শিশুকে হাসপাতালের মেঝে ও বারান্দায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ডায়রিয়া রোগীদের আলাদা রাখার জন্য ১০টি শয্যা বরাদ্দ আছে। এর বিপরীতে রোগী ভর্তি আছে ৪০ জনের বেশি। দুটি ওয়ার্ডের বেশিরভাগ শিশু জ্বর-সর্দি, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। এসব ওয়ার্ডে গত আট দিনে ১৮ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তাদের সবাই মারা গেছে ঠাণ্ডাজনিত রোগে।
সরেজমিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, মেডিসিন, শিশু ওয়ার্ডসহ সব ওয়ার্ড রোগীতে পরিপূর্ণ। এর মধ্যে শিশু ওয়ার্ডে শয্যা না পেয়ে অধিকাংশ রোগী মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। একইভাবে হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগীদের ভিড় দেখা গেছে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, আন্তঃবিভাগ ছাড়াও বহির্বিভাগে প্রতিদিন চিকিৎসা নিচ্ছে গড়ে তিন শতাধিক শিশু। শিশু ওয়ার্ডে জায়গা না থাকায় মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে রোগীদের। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত শত শত শিশুকে নিয়ে তাদের অভিভাবকরা হাসপাতালের বহির্বিভাগে দীর্ঘ লাইন ধরে অপেক্ষা করছেন।
বহির্বিভাগের কর্তব্যরত দুজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে শয্যা সংকট থাকায় গুরুতর অসুস্থ ছাড়া অন্যদের ব্যবস্থাপত্র দিয়ে ফিরিয়ে দিচ্ছেন।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ ইউনুস আলী জানান, শীতজনিত রোগে গত আট দিনে ১৮ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
শীতের তীব্রতা বাড়ায় শিশু ও বয়স্কদের প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না করার পরামর্শ দিয়ে তিনি আরও বলেন, এ সময়ে যে কেউ ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এসব রোগ থেকে রেহাই পেতে গরম কাপড় ব্যবহার, যতটা সম্ভব ঠাণ্ডা পরিবেশ এড়িয়ে চলা জরুরি। শিশুদের ঠাণ্ডা বাতাস থেকে দূরে রাখা, সেই সঙ্গে ধুলাবালু থেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখতে হবে। শৈত্যপ্রবাহ চলাকালে শিশুদের ঘর থেকে কম বের করতে হবে। ঘরের মধ্যে ঠাণ্ডা বাতাস যেন না ঢোকে, সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।