বিশ্ব ইতরের অপরিসীম নির্লজ্জতা

0
103

এক মাসেরও কিছুটা বেশি সময় লেখালেখি ছেড়ে মালয়শিয়ায় গিয়েছিলাম মায়ের সাথে সময় কাটাতে। আমিই একমাত্র সন্তান হওয়ায়, ৮৬ বছর বয়সের ভারে দুর্বল আমার মা বাংলাদেশে একাই থাকেন। আমার সঙ্গে তার শেষ দেখা হয়েছিল ২০১৯ সালের প্রথম দিকে কুয়ালালামপুরে। এত দূরের এবং ঠান্ডার দেশ তুরস্কে তার পক্ষে আসা সম্ভব হয় না। তাই বাধ্য হয়ে কুয়ালালামপুরে মা-ছেলের দেখার আয়োজন করতে হয়েছিল। ইস্তানবুলে ফিরেছি গত রাতে। জানিনা আবার কবে মায়ের সাথে দেখা হবে, কিংবা এই জীবনে আর আদৌ হবে কিনা।

আমরা মালয়শিয়ায় থাকতেই বাংলাদেশের বিশ্ব ইতর, ফ্যাসিস্ট শাসক শেখ হাসিনা টানা তৃতীয় বার নির্বাচনী তামাশা মঞ্চস্হ করেছেন। ২০১৪ তে কুকুর-বিড়ালের ভোট এবং ২০১৮’র পূর্ব নিশীথের ভোটের পর এবারের চমক, “ডামি ভোট”। ২০০৮ সালেও মার্কিনিদের পূর্ণ সমর্থনক্রমে, দিল্লির বিশেষ ব্যবস্থাপনার (India managed) ভোটেই  শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় বসানো হয়েছিল। দেশদ্রোহী, বিভীষণ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহায়তায় পরিচালিত সেই নির্বাচনের ফলাফলও আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল। দিল্লির নির্দেশ পালনের ব্যগ্রতায়, সামশুল হুদা কমিশন, রকিব কমিশন, নুরুল হুদা কমিশন এবং এবারের হাবিবুল আউয়াল কমিশন, কেউ কারো চেয়ে পিছিয়ে থাকে নাই। সকলেই ভারতীয় দেবতাকে ষাষ্টাঙ্গে প্রণাম করেছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের এক অন্যতম কুশীলব, ব্রিগেডিয়ার (অব:) সাখাওয়াতকে এখন বিশিষ্ট সুশীল সেজে মিডিয়ায় নিয়মিত জ্ঞান দিতে দেখলে আমার কাছে অন্তত: জাতির সাথে তামাশা বলেই মনে হয়। অনেকে দেখি তার বচনে মুগ্ধ হয়ে, সাধু, সাধু রবও তোলেন। বাংলাদেশের ইতিহাসবিমুখ, গোল্ড ফিশ স্মৃতিশক্তিসম্পন্ন জনগণের চিকিৎসা এক অতি দুরূহ কাজ। হয়ত অসম্ভব। পূনর্বার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি যে, ২০০৮ সালের সেই সাজানো নির্বাচন থেকেই জনগণের সকল অধিকার এবং দেশের সার্বভৌমত্বের অবসান ঘটেছে।

বিগত ১৬ বছরে রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্হা, “র” এতটাই শিকড় গেড়ে বসে গেছে যে, একদা হাসিনাপ্রেমিক, ওয়াশিংটনেরও এখন প্রায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থা। এর মধ্যে শেখ হাসিনা ওয়াশিংটনকে ছেড়ে বেইজিংয়ের কন্ঠলগ্না হয়েছেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাঁক্রোর বাহুডোরের আহ্বানেও সোৎসাহে সম্মতি দিয়েছেন। পূর্ব-পশ্চিম কোন বাছবিচার করেন নাই। দূরের বন্ধুর পরিবর্তন হলেও পার্শ্ববর্তী দিল্লির সাথে তার সুমধুর সম্পর্কের অবশ্য কোন পরিবর্তন হয় নাই, হবেও না। ভুললে চলবে না যে, শেখ পরিবারের সাথে দিল্লির জন্ম-জন্মান্তরের বাঁধন। দিল্লির অনুমতি নিয়েই শেখ হাসিনা প্রয়োজনে কখনও ওয়াশিংটন, আবার কখনও বেইজিং, মস্কো, প্যারিসের দিকে ঝুঁকেছেন।

শেখ হাসিনা যে একজন ইতর চরিত্রের মহিলা সেটি তিনিও ভাল করেই জানেন। মনে পড়ছে, বছর তিরিশেক আগে তার অশালীন ভাষা ব্যবহার সম্পর্কে প্রশ্ন উঠলে শেখ হাসিনা বলেছিলেন যে, রুচি বিষয়টা নাকি যার যার নিজস্ব ব্যাপার। অর্থাৎ, রাজনৈতিক বক্তব্যে তিনি কোনরকম ভদ্র ভাষা ব্যবহারের ধার ধারেন না। শেখ হাসিনার চরিত্রে ইতরতার সাথে মিথ্যা ও নির্লজ্জতার যে “অনন্য” সমাহার ঘটেছে তার কোন জুড়ি বিশ্বে খুঁজে পাওয়া অসম্ভব বলেই আমার ধারনা। যে ডামি নির্বাচনের নাটকে আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থীর সাথে একই দলের ডামি প্রার্থী, অথবা শেখ হাসিনা সমর্থিত কুজাত, জাতীয় পার্টির প্রার্থী (কাদের, চুন্নু, এক এগারোর মাসুদ, ইত্যাদি) কিংবা পাচাটা ইনু, মেননদের প্রতিযোগীতা হয়েছে, সেই নির্বাচনকে ১৯৭৫ পরবর্তী শ্রেষ্ঠ নির্বাচনের সার্টিফিকেট প্রদান একমাত্র শেখ হাসিনার পক্ষেই সম্ভব। উত্তর কোরিয়ার কিম, রাশিয়ার পুতিন কিংবা চীনের লী এভাবে অন্তত: সুষ্ঠু নির্বাচনের বড়াই করেন না। তারা একনায়কতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার পক্ষে ভিন্ন ভিন্ন যুক্তি খাড়া করেন। একদলীয় নির্বাচনের পর লী, পুতিন ঘটা করে কোন সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন না। শেখ হাসিনার নির্লজ্জতার বিশেষ বৈশিষ্ট হলো, তিনি গণতন্ত্রকে কবর দিয়ে, ফ্যাসিস্ট কায়দায় সরকার চালিয়েও আন্তর্জাতিক মহলের কাছ থেকে গণতান্ত্রিক বৈধতার দাবী করতে কোনরকম দ্বিধা করেন না। বরঞ্চ, বৈধতা না পেলে রাগান্বিত হন। ডামি নির্বাচন পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনেও বিবিসি’র সাংবাদিক ৭ জানুয়ারীর একদলীয় নির্বাচনী তামাশার বিষয়ে প্রশ্ন করলে শেখ হাসিনা তার চরিত্র অনুযায়ী জবাব দিয়েছেন। সম্পাদকীয়তে বিবিসি’র সাংবাদিকের প্রশ্ন এবং শেখ হাসিনার জবাব লিখতে রুচি হলো না। উৎসাহী পাঠক বিবিসি থেকে জেনে নিতে পারেন।

দীর্ঘ বিমান ভ্রমনে বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছি বিধায় আজকের লেখা আর দীর্ঘ করছি না। তবু শেষ কথাটা বলা প্রয়োজন। শেখ হাসিনার মতো সিরিয়াল কিলার, বিকারগ্রস্থ চরিত্রের কোন শাসককে শান্তিপূর্ণ পন্থায় ক্ষমতা থেকে অপসারণ করা সম্ভব বলে আমি মনে করি না। মাত্র কয়েক মাস আগে টাইম ম্যাগাজিনের এক সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা নিজেও বলেছেন যে, প্রাণ থাকতে তিনি ক্ষমতা ছাড়বেন না। তার একচ্ছত্র ক্ষমতার অভিলাষও কোনদিনই লুকিয়ে রাখেন নাই। তিনি দেশকে ক্রমেই প্রচন্ড সহিংসতার দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। এমতাবস্থায় শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশের পরিণতি সম্পর্কে কোন যুক্তিসংগত মন্তব্য করা অত্যন্ত কঠিন। রুমানিয়ার স্বৈরশাসক চসেস্কু এবং শেখ মুজিবের পরিণতি বর্তমান বিশ্বের ভয়ংকরতম নারী শাসকের জন্য অপেক্ষা করছে কিনা সেটা একমাত্র মহান সৃষ্টিকর্তাই জানেন। তবে এটুকু বুঝতে পারি, শেখ হাসিনার অপসারণ ব্যতীত জনগণের মুক্তি কিংবা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধার কোনটাই সম্ভব নয়।

মাহমুদুর রহমান
লেখক: সম্পাদক, আমার দেশ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here