নতুন কিসিমের একদলীয় শাসন

0
79

সরাসরি বাকশাল নয়, নতুন কিসিমের একদলীয় শাসন কায়েম করেছেন শেখ হাসিনা। তার পিতা শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগকে বিলুপ্ত করেছিলেন। নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন অন্য সব রাজনৈতিক দল। প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এক বাকশাল। এই বাকশাল ছাড়া আর কোন দল থাকবে না বলে আইন করা হয়েছিল তখন। তবে শহীদ জিয়াউর রহমান বহুদলীয় রাজনীতির দ্বার উন্মুক্ত করার পর আবারো ফিরে আসে আওয়ামী লীগ। এক পর্যায়ে ১৯৮১ সালে ভারত থেকে দেশে ফিরে পিতার বিলুপ্ত করা আওয়ামী লীগের হাল ধরেন শেখ হাসিনা। এখন তিনি তৃতীয় দফা সাজানো নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে টানা চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর ও ২০২৩ সালের ৭ জানুয়ারী তাঁর সাজানো ছকেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তার ইচ্ছার বাইরে কেউ বিজয়ী হয়ে আসতে পারেনি এই নির্বাচন গুলোতে।

৭ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ফলাফল দেখলেই স্পষ্ট, নয়া কিসিমের এক দলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ ছাড়া বাকী ৩টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। এরমধ্যে রয়েছে শেখ হাসিনার দয়া নিয়ে জাতীয় পার্টির ১১ জন। তাদের প্রত্যেকের নির্বাচনী প্রচারণার পোষ্টারে উল্লেখ ছিল আওয়ামী লীগ সমর্থিত। কারণ, ২৬ আসন জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়ে সমঝোতা হয়েছিল। কিন্তু সমঝোতার বাকী আসন গুলোতে বিজয়ী হয়েছে আওয়ামী লীগের “ডামি” স্বতন্ত্র প্রার্থী।

জাতীয় পার্টি ছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন এবং জাসদের একজন নৌকায় উঠে পার পেয়েছেন। এছাড়া কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বিজয়ী হয়েছেন শেখ হাসিনার সরাসরি করুণা নিয়ে। এর বাইরে আর কোন রাজনৈতিক দল বিজয়ী হতে পারেনি।

নির্বাচন কমিশনের বিতর্কিত হিসাবে ৪০ শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছে। যদিও প্রকৃত সংখ্যা ১০ শতাংশের কম বলে ধারণা করা হয়। বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বেশিভাগ আসনে ২০ শতাংশ ভোট আগেই কাষ্ট করে রাখা হয়েছিল। এর সাথে যুক্ত করা হয় উপস্থিতির সংখ্যা। তাতে বিকাল সোয়া ৩টায় নির্বাচন কমিশন সচিবের প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয় ২৭ শতাংশ ভোটর উপস্থিত হয়েছে। তখন হয়ত, ভোটের আগেই কাষ্ট করে রাখা ২০ শতাংশের সাথে ৭ উপস্থিতি যুক্ত করে ২৭ শতাংশ উপস্থিতির নিশ্চিত করা হয়েছিল। কিন্তু দুই ঘন্টা পরই শেখ হাসিনার অনুগত প্রধান নির্বাচন কমিশনার দিলেন নতুন বয়ান। জানালেন ৪০ শতাংশ ভোটার উপস্থিত হয়েছিল। তাদের হিসাবেও ৬০ শতাংশ মানুষ ভোট দিতে যায়নি। তার মানে সিংহভাগ মানুষ এই ভোট প্রত্যাখ্যান করেছেন। এটা নির্বাচন কমিশনের সব হিসেবই কবুল করা হয়েছে। সিংহভাগ মানুষ চায়নি এই সরকারকে। তাই তারা ভোট দিতে যায়নি। এতে প্রমাণ করে, শেখ হাসিনা সংখ্যালঘু মানুষের সমর্থিত সরকার গঠন করবেন।

ফিরে আসা যাক মূল আলোচনায়। আলোচনাটি ছিল কিভাবে শেখ হাসিনা নয়া কিসিমের এক দলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করছেন। উপরে উল্লেখিত ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ ছাড়া দল হিসাবে নৌকায় চড়ে ওয়ার্কার্স পার্টি-১ জাসদের-১ প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। কল্যাণ পার্টিও বিজয়ী হয়েছে শেখ হাসিনার সহযোগিতার ইচ্ছায়। সুতরাং জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও কল্যাণ পার্টি ছাড়া সংসদে আর কোন রাজনৈতিক দল নেই।

শেখ হাসিনার সাথে বোঝাপড়ার মাধ্যমে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল কিংস পার্টি খ্যাত বিএনএফ, বিএনএমসহ আরো কয়েকটি রাজনৈতিক দল। কিন্তু তাদের কারো প্রতি শেখ হাসিনার সুনজর পড়েনি। তাই ফ্যাসিবাদের দালালিতে নাম অন্তর্ভুক্ত করার পরও বিজয়ী হওয়া সম্ভব হয়নি কারো।

এখন আসা যাক স্বতন্ত্র বিজয়ীদের প্রসঙ্গে। দুই/একটি ছাড়া স্বতন্ত্র বিজয়ীদের সকলেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। তাদের প্রত্যেকের বর্ণনা হচ্ছে নেত্রীর (শেখ হাসিনার ) অনুমতি নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। এই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে ধরা খেয়েছেন শেখ হাসিনার দীর্ঘ দিনের সহযোগী জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। তাদেরকে নৌকা দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। নৌকায় উঠেও তারা তীরে পৌঁছাতে পারেননি। ডুবে গেছেন ফ্যাসিবাদের ডামির ঢেউয়ে।

এখন সংসদে বসবেন, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনার সাথে সমঝোতায় পাওয়া ২৬ আসনের মধ্যে বিজয়ী ১১ আসনের জাতীয় পার্টি, শেখ হাসিনার দেওয়া নৌকায় উঠে পার হওয়া ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ এবং শেখ হাসিনা কৃপায় পার পাওয়া কল্যাণ পার্টি। এছাড়া আওয়ামী লীগের ডামি স্বতন্ত্র বিজয়ীরা। ৩৩০ আসনে ভিন্নমতের কেউ নেই। সবই ফ্যাসিবাদের দোসর। ফ্যাসিবাদ সহযোগীদের নিয়ে গঠিত এই সংসদ এক দলীয় ও এক ব্যক্তির চিন্তা প্রসূত। সুতরাং নয়া কিসিমের বাকশাল শাসনই প্রতিষ্ঠা করেছেন শেখ হাসিনা।

সুত্রঃ সিনিয়র সাংবাদিক, অলিউল্লাহ নোমান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here