আবারও ভোটের মাঠে নৌকায় ৪৩ সিল মারা সেই আজাদ!

0
79

লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে প্রকাশ্যে ৫৭ সেকেন্ডে নৌকায় ৪৩ সিল মারা সেই সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আজাদ হোসেনকে ভোটের মাঠে প্রচারণায় দেখা গেছে। তবে এবার তাকে কেউ ‘শিবির কর্মী’ বলছেন না। এবার তাকে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেই পরিচয় দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। আজাদ চন্দ্রগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি।

শুক্রবার আজাদ নৌকার পক্ষে দীঘলি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় লিফলেট বিতরণ, পোস্টার ঝুলানো ও মাইকিংসহ গণসংযোগে অংশ নেয়। ভোট নিয়ে সব ক্ষেত্রেই তার সরব উপস্থিতি ছিল। তার উপস্থিতিতে এবারও সেই সিল মারার ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় ও প্রতিপক্ষের সমর্থকরা। এ ব্যাপারে আজাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।

এদিকে ৫ নভেম্বরের উপনির্বাচনের পর দিন আজাদের নৌকায় সিল মারার ৫৭ সেকেন্ডের ভিডিওটি ভাইরালের ঘটনায় ঢাকায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রার্থী গোলাম ফারুক পিংকু জানিয়েছিলেন, আজাদ শিবির কর্মী। ওই ঘটনা নিয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে তখন দিঘলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন চৌধুরী জাবেদও তার (আজাদ) শিবির ও ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে গণমাধ্যম কর্মীদেরকে বক্তব্য দিয়েছিলেন। তাকে কিভাবে ছাত্রলীগের কমিটিতে রাখা হয়েছে তা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন।

শনিবার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে আজাদ ফের ভোটের মাঠে সরব হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন চৌধুরী জাবেদ যুগান্তরকে বলেন, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। আজাদের বিষয়ে আমরা সচেতন রয়েছি। ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমরাই হতে দেব না। সুষ্ঠুভাবেই নির্বাচন সম্পন্ন হবে। কোনো জাল ভোট হবে না।

আজাদকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নৌকার প্রার্থী গোলাম ফারুক পিংকুর আখ্যা দেওয়া শিবির কর্মীর বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান জাবেদ বলেন, উপনির্বাচনের অনেক আগে সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকায় আজাদকে ছাত্রলীগের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। সভাপতি তাকে চিনত না। এজন্য ভুল করে আজাদকে শিবির কর্মী বলেছেন।

এদিকে তখন ইউপি চেয়ারম্যান জাবেদও আজাদকে শিবির ও ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের বক্তব্য দিয়েছিলেন। জানতে চাইলে সেই বিষয়ে রুঢ় ভাষায় তিনি বলেন, আমি কেন তাকে শিবির বলব। আমাকে কেন আবার সেদিকে টানছেন। সে ছাত্রলীগ করতো। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

দুপুর ১টা ৬ মিনিটে দিঘলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং নৌকা প্রতীকের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক আব্দুল ওয়াদুদ লিটন বলেন, নৌকা প্রতীকের প্রচারণায় থাকলেও আজাদকে কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। ভোটের মাঠে তাকে নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে না। সুষ্ঠু ভোট হবে, এতে শঙ্কা নেই। আজাদ ছাত্রলীগ করত। কখনোই শিবিরের সঙ্গে জড়িত ছিল না। কে বা কারা তাকে শিবির আখ্যায়িত দিয়েছে, তা আমার জানা নেই।

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নৌকার প্রার্থী গোলাম ফারুক পিংকু এবং চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওহাবকে একাধিকবার কল করলেও তারা রিসিভ করেননি।

নৌকার বিপক্ষে ভোটে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে রয়েছেন রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সাত্তার। তিনি বলেন, যেখানে আমার সমর্থক বেশি, সেখানে নৌকার কর্মীরা তাদেরকে কেন্দ্রে যেতে নিরুৎসাহী করছে। হুমকি দিচ্ছে। তবে আজাদকে নিয়ে কোনো শঙ্কা করছি না। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করলেই হবে।

এদিকে ৪ জানুয়ারি বিকালে সংবাদ সম্মেলন করে সুষ্ঠু পরিবেশ নেই দাবি করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন লাঙল প্রতিকের প্রার্থী ও জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রাকিব হোসেন। আজাদের বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমি ইতিমধ্যেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছি। আজাদের মতো কেউ থাকলে অন্য প্রার্থী কখনোই সুষ্ঠু ভোট আশা করতে পারে না। তার মারা ৫৭ সেকেন্ডে ৪৩ ভোট বহিঃবিশ্বে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে কলঙ্কিত করেছে। শুনেছি এবারও তিনি নৌকার পক্ষে ভোট করছেন।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্মীপুর জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ভোটকেন্দ্রে কোনো অনিয়ম করতে দেওয়া হবে না। প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে কঠোর বার্তা দেওয়া রয়েছে। ভোটগ্রহণের প্রত্যেকটি কক্ষ তিনি পর্যবেক্ষণে থাকবেন। কোনো ঘটনা ঘটলেই আমাদেরসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাতে নির্দেশ রয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here