দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভোটে থাকলেও প্রচারণায় মাঠে নেই অনেক প্রার্থী। কোনো ভোটার তাদের চেনেনও না। শুধু নাম ফলাতেই প্রার্থী হয়েছেন তারা। এমনকি কোনো কোনো প্রার্থী পোস্টারও ছাপেননি এখন পর্যন্ত। তাই এদের নিয়ে ভোটারদেরও তেমন কোনো আগ্রহ নেই।
মেহেরপুরে ভোটের মাঠে দুটি আসনে দুই দলের চার প্রার্থীর কোনো প্রচারণা নেই। তাদের ভোট প্রার্থনাও নেই। এ পর্যন্ত তাদের নেই প্রচার-প্রচারণা। কোনো ভোটার চেনেনও না তাদের। এ চার প্রার্থী হচ্ছেন- মেহেরপুর-মুজিবনগর আসনে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের বাবুল জম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) তারিকুল ইসলাম লিটন, গাংনী আসনে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) গোলাম রসুল ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট প্রার্থী শাহ জামাল। মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের মো. বাবুল জম সপ্তম শ্রেণি পাশের পর আর্থিক অনটনে লেখাপড়া করতে পারেননি। বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট প্রার্থী বাবুল জমের কোনো ধরনের প্রচারণা নেই। দলীয় সিদ্ধান্তে তিনি প্রার্থী হয়েছেন বলে জানান।
এনপিপি প্রার্থী তারিকুল ইসলাম লিটন সপ্তম শ্রেণি পাশ। সদর উপজেলার আজিজাবাদ গ্রামের এ প্রার্থীও কোনো জনসংযোগ করছেন না। কোথাও তার পোস্টার চোখে পড়েনি। যোগাযোগ করেও তার দেখা মেলেনি। বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের প্রার্থী শাহ জামালেরও কোনো জনসংযোগ ও পোস্টার চোখে পড়েনি। মেহেরপুর সদর উপজেলার নতুন মদনাডাঙ্গা (আজিজাবাদ) গ্রামের মো. গোলাম রসুল মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনে প্রার্থী হয়েছেন ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) থেকে। গ্রাম ঘুরে তিনি ছাগল কিনতেন। বিক্রি করতেন বিভিন্ন হাটে। এজন্য তিনি গ্রামে ছাগলের ব্যাপারী নামেও পরিচিত। তিনি জনসংযোগ করছেন না। তার পোস্টারও কোথাও দেখা মেলেনি।
২৯৯ পার্বত্য রাঙামাটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী থাকলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই। নির্বাচনি মাঠে দলবল নিয়ে একাই খেলছেন ক্ষমতাসীন দলের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এমপি দীপংকর তালুকদার। আসনটিতে দীপংকর ছাড়াও আরও দুই প্রার্থী বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের অমর কুমার দে ও তৃণমূল বিএনপির মো. মিজানুর রহমান নির্বাচনে থাকলেও প্রচারণায় তাদের কেউই মাঠে নেই। এমনকি এ দুই প্রার্থীর (ছড়ি) ও ‘সোনালি আঁশ’ প্রতীকের পোস্টারও আজ পর্যন্ত নির্বাচনি এলাকার কোথাও চোখে পড়ছে না। যদিও শহর এলাকায় অমর কুমার দের কয়েকটি স্থানে গুটিকয়েক ব্যানার দেখা যায়। এখন পর্যন্ত প্রচারণায় একেবারে নীরব এ দুই প্রার্থী। কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) আসনে নৌকা আছে প্রচারে আর অন্যরা নীরবে। ফলে ভোট দেওয়ার আগ্রহ নেই ভোটারদের। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তিনবারের সংসদ-সদস্য সাবেক রাষ্ট্রপতির ছেলে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। তার সঙ্গে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নুরুল কাদের সোহেলসহ ছয়জন প্রার্থী আছেন। তার মধ্যে দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। তবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছাড়া অন্য পাঁচ প্রার্থীকে এলাকাবাসী চেনেন না।
১৮ ডিসেম্বর থেকে নির্বাচনি প্রচারণা শুরু হলে শুধু আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী পাপনের কর্মিসভা, পথসভা, জনসংযোগ চলছে। অপর ছয় প্রার্থীর মুখ ভোটাররা এখনো দেখতে পাননি। তারা আছেন নীরবে। এ ছয় প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিলের পর ১৭ ডিসেম্বর প্রতীক পান। এরপর তাদের ভোটাররা দেখতে পাচ্ছেন না। তবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নুরুল কাদের কিছু কর্মী নিয়ে এলাকায় ঘুরলেও ভোটারদের সাড়া নেই। এছাড়া বিগত কয়েকটি নির্বাচনের মতো এবারের নির্বাচনে চায়ের দোকান, রিকশাচালক, শ্রমিকদের হাটেঘাটে ভোট নিয়ে কোনো আলোচনা নেই বললেই চলে। বরিশাল-৩ (মুলাদী-বাবুগঞ্জ) আসনে ভোটে থাকলেও মাঠে নেই একমাত্র নারী প্রার্থী তৃণমূল বিএনপির শাহানাজ হোসেন। ভোটাররা পোস্টার দেখেননি বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট প্রার্থী মো. আজমুল হাসান জিহাদের। এ দুই প্রার্থী গণসংযোগসহ কোনো ধরনের প্রচারণা করছেন না বলে জানান সাধারণ ভোটাররা। এ আসনে ছয়জন প্রার্থী নির্বাচনে রয়েছেন। তারা হচ্ছেন-জাতীয় পার্টির গোলাম কিবরিয়া টিপু (লাঙ্গল), ওয়ার্কার্স পার্টির টিপু সুলতান (হাতুড়ি), স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আতিকুর রহমান (ট্রাক), ড. মোহাম্মদ আমিনুল হক (ঈগল), তৃণমূল বিএনপির শাহানাজ হোসেন (সোনালি আঁশ) এবং মুক্তিজোট প্রার্থী মো. আজমুল হাসান জিহাদ (ছড়ি)।
তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী শাহানাজ হোসেন জানান, পোস্টার-লিফলেট করে ইতোমধ্যে তার প্রচারণা শুরু হয়েছে। এ আসনে একমাত্র নারী প্রার্থী হিসাবে ভোটারদের সহানুভূতি পাব বলে আশা করছি। দু-এক দিনের মধ্যে গণসংযোগ এবং ভোটারদের কাছে গিয়ে প্রচারণা শুরু করা হবে।
মুক্তিজোট প্রার্থী মো. আজমুল হাসান জিহাদ বলেন, ‘জয়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট থেকে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। শিগগিরই প্রচারণা শুরু করা হবে।’