প্রচারণার শুরুতেই সংঘর্ষ-বাধা

0
142

প্রচারণার শুরুতেই দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও অফিস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া নৌকা ছাড়া স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দলের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করলে সমর্থকদের মেরে ফেলা ও হাত-পা ভেঙে দেয়ার হুমকিও দেয়া হয়েছে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী এ. কে. আজাদের সমর্থকদের ওপর নৌকা সমর্থকদের হামলা: ফরিদপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এ. কে. আজাদের সমর্থকদের মারধর ও মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম হকের সমর্থকরা। গতকাল দুপুরে ফরিদপুর পৌরসভার ১৪নং ওয়ার্ডের মাহমুদপুর এলাকায় এ. কে. আজাদের সমর্থক রনি মোল্লা ও কাইয়ুম মোল্লাকে পিটিয়ে আহত করা হয়। এ হামলার ঘটনায় রনি মোল্লা ফরিদপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এদিকে দুপুর ৩টার দিকে পৌরসভার ১১নং ওয়ার্ডের রাজ্জাকের মোড়ে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নুসরাত রাসুল তানিয়ার নির্বাচনী প্রচারণার সময় তার পথরোধ, হুমকি প্রদান এবং লিফলেট ছিনতাই করেছে শামীম হকের সমর্থকরা।

এ বিষয়ে সৈয়দ নুসরাত রাসুল তানিয়া বলেন, আমরা নির্বাচনী প্রচারণার জন্য বের হয়েছিলাম। আলীপুরের রাজ্জাকের মোড়ে আমরা উপস্থিত হলে শামীম হকের সমর্থক এজাজ খানের বাহিনী প্রায় ৩০-৪০টা মোটরসাইকেল নিয়ে আমাদের ঘিরে ধরে। এ সময় আমরা আলীপুরে এ. কে. আজাদ চাচার কোনো নির্বাচনী ক্যাম্পেইন করতে পারবো না বলে চলে যেতে বলেন। ভবিষ্যতে এই এলাকায় প্রচারণা করতে আসলে হাত-পা ভেঙে দেয়ারও হুমকি দেয়া হয়। এ সময় আমাদের কাছে থাকা ঈগল মার্কার সকল লিফলেট তারা ছিনতাই করে নিয়ে চলে যায়। এর আগে মাহামুদপুর এলাকায় এ. কে. আজাদের নির্বাচনী প্রচারণা করার জন্য স্থানীয় নান্নু মোল্লার ছেলে রনি মোল্লা ও কাইয়ুম মোল্লাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়।

কাইয়ুম মোল্লা বলেন, দুপুর ২টার দিকে আমি দোকান খুলতে যাই। দোকান খুলবো এমন সময় মোস্তফার নেতৃত্বে আজাদ, আসাদ ও চুন্নু আমার ওপর হামলা চালায়। তারা আমাকে বলতে থাকে, তোরা আর আজাদের নির্বাচনী প্রচারণায় যেতে পারবি না। এখন থেকে নৌকার প্রচারণা করবি, তা না হলে তোদের মেরে ফেলবো।

বিএনপি কর্মীদের হাত-পা ভেঙে দেয়ার হুমকি দিলেন এমপি বাহার: বিএনপি-জামায়াতের কর্মীদের হাত-পা ভেঙে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন কুমিল্লা-৬ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। এ ঘটনায় তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান মো. সিরাজ উদ্দিন ইকবাল।

কেন্দ্রে নৌকা ছাড়া কোনো প্রার্থীর এজেন্ট থাকবে না: পাবনা-৩ আসনের ভাঙ্গুরা উপজেলার মণ্ডতোষ ইউনিয়নের মল্লিকচাঁন গ্রামের ভোটকেন্দ্রগুলোতে নৌকার প্রার্থী ছাড়া কোনো প্রার্থীর এজেন্ট থাকবে না বলে হুমকি দিয়েছেন এক স্থানীয় নেতা। গত রোববার রাতে নির্বাচন নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় মণ্ডতোষ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুর ইসলাম মিন্টু এমন মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সভায় বক্তব্য প্রদানকালে তিনি বলেন, ‘মণ্ডতোষ ইউনিয়নে ভোট হবে উৎফুল্ল মনে, একমাত্র নৌকার। এর বাইরে কোনো লোক, কোনো এজেন্টও থাকবে না, কিচ্ছু থাকবে না। আমরা মমিনপাড়া সেন্টার দখল করে রাখবো। আপনারা সহযোগিতা করবেন।’ তার এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে। পাবনা-৩ আসনে এবার নৌকার মনোনীত প্রার্থী হয়েছেন তিনবারের সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন। আর এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন আওয়ামী লীগ নেতা ও চাটমোহর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ মাস্টার।

নেত্রকোনায় আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ: নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। উপজেলার মাসকা বাজারে গত সোমবার রাত ৮টার দিকে হওয়া এই সংঘর্ষে অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। স্থানীয়দের বরাতে কেন্দুয়া থানার ওসি এনামুল হক বলেন, নেত্রকোনা-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইফতেখার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু ও আওয়ামী লীগ প্রার্থী অসীম কুমার উকিলের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও মারধর এবং কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর হয়। এতে উভয় পক্ষের ১২ জন আহত হলে তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বিভিন্ন হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

পাবনায় স্বতন্ত্র প্রার্থীকে অবরুদ্ধ করে রাখলো নৌকার নেতাকর্মীরা: পাবনা-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যাপক আবু সাইয়িদের নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তাকে প্রায় ২ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরে সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আলপনা ইয়াসমিনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে জানিয়ে স্থানীয়রা বলেন, বোয়ালমারী বাজারে সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন অধ্যাপক আবু সাইয়িদ। এ সময় পাশ দিয়ে নৌকার মিছিল যাচ্ছিলো। হঠাৎ তারা স্লোগান দিতে দিতে আবু সিইয়িদকে ঘিরে ধরে। তারা আরও বলেন, সাঁথিয়া পৌরসভার মেয়র মাহবুবুল আলম, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সোহেল রানা খোকন ও বেড়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মেজবাহ মোল্লার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অধ্যাপক আবু সাইয়িদকে চলে যাওয়ার জন্য নানা স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় অধ্যাপক আবু সাইয়িদের সমর্থক ও সাবেক মেয়র আব্দুল বাতেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন নিরপেক্ষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু আপনারা দেখলেন কীভাবে আমাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এটা কি নির্বাচনের স্বাভাবিক পরিবেশ বা নিরপেক্ষ পরিবেশ? তবে নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দেয়ার অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেন সোহেল রানা খোকন।

সাদিক আব্দুল্লাহ ও জাহিদ ফারুকের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ: সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারী ও আওয়ামী লীগ মনোনীত জাহিদ ফারুক অনুসারীদের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। গত সোমবার সন্ধ্যায় হওয়া এই সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন বলে উভয়পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।

সাভারে নৌকা প্রার্থীর সমর্থক কর্তৃক স্বতন্ত্র প্রার্থীর অফিস ভাঙচুর: ঢাকা-১৯ আসনের দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী অফিস ভাঙচুরসহ কর্মী-সমর্থকদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে নৌকা প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। গত সোমবার রাতে সাভার পৌরসভার নামাগেন্ডায় ট্রাক প্রতীকের ও কাতলাপুর এলাকায় ঈগল প্রতীকের নির্বাচনী অফিসে এই হামলা চালানো হয়। সাভার পৌরসভার কাতলাপুর এলাকায় ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী তালুকদার তৌহিদ জং মুরাদের কর্মী ও পৌর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সভাপতি আব্দুল হালিম জানান, সোমবার রাত ৩টার দিকে পৌরসভার কাতলাপুর এলাকায় করা ঈগল প্রতীকের নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করে সাভার সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম রুবেল। আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, পৌরসভার নামাগেন্ডা এলাকায় আমার নির্বাচনী অফিস স্থাপনে বাধা ও কর্মী-সমর্থকদের মারধর করেছে নৌকার কর্মী-সমর্থকরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here