গত ১৫ বছরের মধ্যে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপি এবং নেতারা অর্থসম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, মন্ত্রী-এমপি-নেতাদের এই সম্পদ-এই টাকার পাহাড় কিভাবে গড়ে উঠেছে আয়ের উৎস কি এসব নিয়ে শেখ হাসিনার মাথাব্যথা নেই। জবাবদিহিতা নেয়ার কেউ নেই। বর্গীদের মতো লুটের রাজ্য ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে টপ টু বটম ব্যস্ত। তারা জনগণের সম্পদ চেটেপুটে খেয়ে পেট মোটা করতে এসেছেন। লুটের শাসন স্থায়ী করতে খুন গুম হামলা মামলা গ্রেপ্তার ও মিথ্যা সাজা দেয়া হচ্ছে। জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। এক তরফা নির্বাচনের নাটক করে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে অন্ধ হয়ে পড়েছে। বুধবার বিকালে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, হলফনামা ধরে প্রতিদিন সংবাদপত্রে নির্বাচনের প্রার্থীদের সম্পদের যে বিবরণ প্রকাশিত হচ্ছে তা দেখে জনগণের চক্ষু চড়কগাছের অবস্থা। একেকজন মানুষের সম্পদ ২০০ গুণ, ৩০০ গুণ, ৪০০ গুণ ৫০০ গুন, কেউ আবার পাঁচ বছরে ৭০০ গুণ সম্পদেরও মালিক হয়েছেন।
তিনি বলেন, যিনি নীতির সবক দেন সেই আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।
গত দশ বছরের ব্যবধানে মন্ত্রীর নগদ টাকা বেড়েছে ২১৮ গুণ। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের সম্পদ বেড়েছে ৯৮ গুণ। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরীর সম্পদ বেড়েছে ৪৯৭ গুণ, নওগাঁ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও বর্তমান স্বতন্ত্র প্রার্থী ছলিম উদ্দিন তরফদারের আয় বেড়েছে ১৮০ গুণ এবং সম্পদ বেড়েছে ১৪ গুণ, ঝিনাইদহ-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের নগদ টাকা বেড়েছে ২২২ গুণ, রেলমন্ত্রী এবং পঞ্চগড়-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুরুল ইসলাম সুজনের সম্পদ বেড়েছে ৩২ গুণ, যশোর-১ আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা শেখ আফিল উদ্দীনের সম্পদ বেড়েছে ১৬ গুণ, ফেনী-২ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী ও তার স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে শত কোটি টাকার এবং লালমনিরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেনের সম্পদ (স্ত্রীর সম্পদের হিসাব ছাড়াই) বেড়েছে দেড় কোটি টাকার ওপরে। ময়মনসিংহ-১১ আসনের সংসদ সদস্য কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ ধনুর নগদ টাকা ৪ লাখ থেকে বেড়ে আড়াই কোটি, ১০ ভরি সোনা থেকে হয়েছে ১০০ ভরি। কিনেছেন বহু জমি-বিলাসবহুল গাড়ি। ১০ বছরে কুষ্টিয়া-২ আসনের নৌকার মাঝি জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর নগদ টাকা বেড়েছে ৫২ গুণ। ৬ লাখ ৮৫ হাজার মালিক ছিলেন ইনু। এখন তাঁর কাছে নগদ টাকা আছে ৩ কোটি ৫৬ লাখ ১৫৫ টাকা। গত ১০ বছরে ইনুর স্ত্রীর সম্পদ বেড়ে হয়েছে ২৯ গুণ। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সম্পদ বেড়েছে প্রায় ৩০ গুণ। লাখ টাকার গাড়ি থেকে হয়েছে কোটি টাকার গাড়ি। বগুড়া-১ আসনে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য প্রার্থী কেন্দ্রীয় মহিলা লীগের নির্বাহী সদস্য সাহাদারা মান্নানের গত ৪৫ মাসে (প্রায় চার বছর) চার কোটি টাকার অধিক অর্থ-সম্পদ বেড়েছে। কুষ্টিয়া-৩ আসনের এমপি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের গত ১০ বছরে সম্পদ বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাছিমের নগদ টাকা বেড়েছে ১৭ গুণ। বগুড়া-৭ আসনের এমপি রেজাউল করিম বাবলুর পাঁচ বছরে সম্পদ বেড়েছে ৭২৪ গুণ। ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় তার আয় ছিল পাঁচ হাজার টাকা। শূন্য থেকে কোটিপতি বনে গেছেন তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সম্পদ বেড়েছে। তার বর্তমান স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের মূল্যমান ৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা ছাড়িয়েছে। প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ ও তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ বেড়েছে ২২ গুণ। গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের সম্পদ বেড়েছে ৫৪ গুণ। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ১০ গুণেরও বেশি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সম্পদ বেড়েছে দেড়গুণ, স্ত্রীর ৪ গুণ। পাঁচ বছরে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো.তাজুল ইসলামের সম্পদ বেড়েছে আড়াই গুণ। পাঁচ বছরে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল-৫ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীমের আয় বেড়েছে ৩৭ গুণ। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমানের আয় ১০ বছরে বেড়েছে পাঁচ গুণের বেশি। বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীর আয় ও সম্পদ ৮ গুণ বেড়েছে। তার চেয়ে তার স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে সাড়ে ২৫ গুণ। আগে তার সম্পদ ছিল না, এবার পৌনে ২ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সম্পদ বেড়েছে। ২০১৮ সালে ছিল ৩৫ লাখ টাকার দুটি ফ্ল্যাট। পাঁচ বছরে তিন কোটি ৬০ লাখ টাকার তিনটি ফ্ল্যাটের মালিক। প্রতিটি হলফনামার অবস্থা তথৈবচ।
তিনি বলেন, গত ১৫ বছরের মধ্যে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপি এবং নেতারা অর্থসম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। অনেকে প্রায় কপর্দকহীন থেকে আঙুল ফুলে কলাগাছ নয়, বটগাছ হয়েছেন। তাদের স্ত্রী-সন্তান-শাশুড়িরাও টাকার কুমিরে পরিণত হয়েছে। সাধারণ ব্যবসায়ীদের লোকসান হলেও আওয়ামী ফ্যাসিস্ট রাজনীতিকদের কোনো লোকসান নেই। আওয়ামী রাজনীতি এমন একটি ব্যবসা যেখানে কোন ঝুঁকি নেই এবং লোকসান হওয়ারও কোনো আশঙ্কা নেই। সারাদেশে গ্রেপ্তারের চিত্র তুলে ধরে রিজভী বলেন, ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের ৩৪০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত ২৮শে অক্টোবর থেকে ২১৪৯০ জন গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া ৬৭টি মামলায় ৯ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ১০৩২ জনের সাজা দেয়া হয়েছে।