সরকারি কর্মকর্তা ও আত্মীয়-স্বজনদের উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা এএফপি বলেছে, গত দুই সপ্তাহে জেলখানায় মারা গেছেন প্রধান বিরোধী দলের ৫ জন সদস্য। অন্যদিকে আগামী মাসে বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মানুষ রাস্তায় নেমেছে। এএফপি আরও লিখেছে, ৭ই জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। এর ফলে বর্তমান ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করে দেয়া হয়েছে। বিএনপি বলছে, তাদের পুরো নেতৃত্ব এবং কমপক্ষে ২০ হাজার নেতাকর্মীকে গত ৫ সপ্তাহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এটা অস্বাভাবিক দমনপীড়ন।
এএফপি লিখেছে, ২৮শে অক্টোবর রাজধানী ঢাকায় মহাসমাবেশের পর এই দমনপীড়ন শুরু হয়েছে। গ্রেপ্তারের সংখ্যা নিয়ে বিএনপির দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে পুলিশ। তবে প্রকৃতপক্ষে কতজন বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে, সেই সংখ্যা প্রকাশ করেনি পুলিশ। আটক নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে রোববার ঢাকায় সমবেত হয়েছিলেন বিএনপির কয়েক হাজার নেতাকর্মী। এর মধ্যে ছিলেন আটক করা নেতাকর্মীদের পরিবারের সদস্যরা।
গত মাসে নিউ ইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তার হিসাবে বলে যে, ২৮শে অক্টোবর মহাসমাবেশের পর বিরোধী দলের কমপক্ষে ১০ হাজার সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ওই র্যালিকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। তাতে একজন পুলিশ সদস্য ও ৫ জন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হন। প্রায় ৩০০ বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। গত মাসে ইসলামপন্থি সবচেয়ে বড় দল জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা হয়। বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী বলেছে, কমপক্ষে ২০ জন নিহত হয়েছেন।
বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বলেছেন, গত দুই সপ্তাহে তাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে যে ৫ জন কারা হেফাজতে মারা গেছেন তাদের হিসাব রেখেছেন। তিনি বলেন, আমরা পূর্ণাঙ্গ বিচারবিভাগীয় এবং পক্ষপাতিত্বহীন তদন্ত দাবি করি এসব মৃত্যুর। আমরা জানতে পেরেছি দেশজুড়ে দমনপীড়নের অংশ হিসেবে গ্রেপ্তার করার পর বিএনপির অনেক নেতাকর্মীকে পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের আত্মীয়স্বজনরা বলছেন, তাদের প্রিয়জনদেরকে জেলখানায় গাদাগাদি করে অমানবিক পরিবেশে রাখা হয়েছে।
গাজীপুরের স্থানীয় বিএনপির এক নেতা আসাদুজ্জামান খান হিরা’কে (৪৫) উচ্চ নিরাপত্তাবেষ্টিত কাশিমপুর কারাগার থেকে হাসপাতালে নেয়ার পর ১লা ডিসেম্বর তিনি মারা যান। তার এক কাজিন বলেছেন, অন্য বন্দিদের কাছ থেকে আমরা জানতে পেরেছি, জিজ্ঞাসাবাদের সময় পুলিশ তার ওপর নির্যাতন করেছে। এতে তিনি কারাগারের ভিতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার অবস্থার অবনতিতে পুলিশ তাকে গাজীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তিনি মারা যান।
কমপক্ষে দুই সপ্তাহ আগে রাজশাহী থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে বিএনপির স্থানীয় একজন কর্মী একে আজাদ সোহেলকে (৪৭)। তার এক ভাই বলেছেন, হাসপাতালে নেয়ার পর বৃহস্পতিবার তিনি মারা গেছেন। তার ওই ভাই আরও বলেন, গ্রেপ্তারের সময় সোহেল ছিলেন পুরো সুস্থ। পুলিশ তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখে। হাতকড়া পরায়। আমাদের সন্দেহ নিরাপত্তা হেফাজতে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে। প্রতিশোধ নেয়া হতে পারে এই ভয়ে পরিবারের সদস্যরা নাম প্রকাশ করতে চাইছেন না।
গত দুই সপ্তাহে নিরাপত্তা হেফাজতে থাকা ৫ জনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছেন সহকারী ইন্সপেক্টর জেনারেল (জেল) সাজ্জাদ হোসেন। তবে মৃত ব্যক্তিদের নির্যাতনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি। বলেছেন, এসব মানুষ স্বাভাবিকভাবেই মারা গেছেন।
সমালোচকরা যখন বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন যে, আসন্ন নির্বাচনে বিরোধী দলকে একপেশে করে রাখার জন্য টার্গেট করেছে তারা, তখন সরকার বলছে- তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তদারকিতে দীর্ঘ ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকায় বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু গণতন্ত্রের পশ্চাৎধাবন এবং হাজারো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কারণে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।