কী আলোচনা করতে এফবিআই প্রধান দিল্লিতে?

0
119

তাৎপর্যপূর্ণ সফরে ভারতে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) পরিচালক ক্রিস্টোফার রে। এ রিপোর্ট লেখার মুহূর্তে তিনি নয়াদিল্লির পথে ছিলেন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানায়, ১১ ও ১২ই ডিসেম্বর ভারতের এনআইএ প্রধান দিনকর গুপ্তার সঙ্গে দেখা করবেন ক্রিস্টোফার রে। এই সময়ে খালিস্তানি ইস্যু, জম্মু-কাশ্মীর সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গ সহ এনআইএ-এর তরফে পান্নুর বিরুদ্ধে মামলা এবং প্রমাণ, সান ফ্রান্সিসকোতে ভারতীয় দূতাবাসে হামলাসহ একাধিক বিষয়ে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে। রিপোর্টে প্রকাশ এফবিআই প্রধানের সঙ্গে ভারতীয় কর্মকর্তাদের আলাপে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সংস্থাকে  আইনি পরামর্শ দেয়া একটি দল, নয়াদিল্লির মার্কিন দূতাবাসের পদস্থ কর্মকর্তা এবং জাতীয় নিরাপত্তা ও আইন প্রয়োগকারী একাধিক কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকছেন। সফরকালে দিল্লির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গেও এফবিআই প্রধান এবং তার সহকর্মীদের সাক্ষাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্ট মতে, ক্রিস্টোফার রে এমন এক সময় দিল্লি সফর করছেন যখন ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক শিখ নেতা গুরুপতওয়ান্ত সিং পান্নুনকে আমেরিকায় হত্যা চেষ্টার অভিযোগ নিয়ে নয়াদিল্লি এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি চলছে। বৃটেনের প্রভাবশালি সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস গত ২২ শে নভেম্বর তাদের প্রতিবেদনে দাবি করে যে, পান্নুনকে হত্যার কথিত ‘ভারতীয় ষড়যন্ত্র’ আমেরিকান এজেন্সিগুলো নস্যাৎ করে দিয়েছে।
পান্নুনকে হত্যার ছক কষার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ভারতীয় নাগরিক নিখিল গুপ্তা তৃতীয় দেশে আটক রয়েছেন। বিষয়টি সবিস্তারে ভারতকে জানিয়ে ইতোমধ্যে সতর্ক করেছে ওয়াশিংটন। আমেরিকার বিচার বিভাগ নিখিলের বিরুদ্ধে পান্নুনকে খুনের ছক কষায় মামলা করেছে।

ভারত আমেরিকার অভিযোগকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করে। দিল্লির বিবৃতিতে এই বিষয়ে ভারতের উদ্বেগের কথা জানিয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়। বিদেশ মন্ত্রকের তরফে তদন্ত কর্ম শেষে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের নিশ্চয়তাও দেয়া হয়। রয়টার্সসহ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর বিবেচনায় নিরাপত্তাসহ আঞ্চলিক নানা ইস্যুতে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বোঝাপড়া পোক্ত করতে এফবিআই প্রধানের সফরটি হচ্ছে এবং তা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ হবে। সেখানে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা পান্নুনকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ নিয়ে কথা হবে। তবে বিশ্বাঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ বিশেষত নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা এফবিআই’র সর্বোচ্চ কর্মকর্তার নয়াদিল্লি সফরটি দু’একটি ইস্যুর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে বলে মনে করেন না বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, সামগ্রিক অর্থে এশিয়া অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লেষ্ট থাকা ইস্যুগুলো নিয়ে হাই প্রোফাইল ওই সফরে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হতে পারে। ভারতের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা পিটিআই জানায়, গত বুধবার ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেট্টি নয়াদিল্লিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সম্পর্ক বিশেষত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ধারাবাহিক দিল্লি সফরের প্রসঙ্গ টেনে এফবিআই প্রধানের আসন্ন সফরের বিষয়টি প্রকাশ করেন। ৭ই ডিসেম্বর প্রচারিত পিটিআইয়ের রিপোর্টে জানানো হয়, সফরকালে এফবিআই প্রধান ভারতীয় জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। তবে কার কার সঙ্গে বৈঠকগুলো হবে নয়াদিল্লির থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ইভেন্টে তা খোলাসা করেননি রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেট্টি। ভারতের একাধিক সংবাদ মাধ্যম বলছে,
পান্নুনকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় দায়ের করা মামলা এবং নয়াদিল্লি ঘোষিত তদন্তের অগ্রগতি বিষয়ে মতবিনিময় হবে আমেরিকার শীর্ষ গোয়েন্দা কর্তার সফরে। ইতিমধ্যে এ নিয়ে আলোচনার প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছেন ভারতের এনআইএ কর্মকর্তারা । সেখানো নিরাপত্তা ইস্যুতে আমেরিকা ও ভারতের মধ্যে সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা হবে বলে ধারণা দিচ্ছে নয়াদিল্লির সংবাদ মাধ্যমগুলো।

স্মরণ করা যায়, উত্তর ভারতের একটি সার্বভৌম শিখ রাজ্যের পক্ষে ওকালতিকারী নিউইয়র্ক সিটির বাসিন্দা পান্নুনকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ বিষয়ে তাৎক্ষণিক গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারত। এহেন কাণ্ডকে ভারত সরকারের নীতির পরিপন্থী বলে অভিহিত করে নয়াদিল্লি। সেই সঙ্গে পুরো বিষয়টি  নিজেরা  তদন্ত করবে বলে ঘোষণা করে। গুরপতবন্ত সিং পান্নুন যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি কানাডারও নাগরিক। চলমান নিরাপত্তা সহযোগিতার অংশ হিসেবে এফবিআই পরিচালকের সফরটি হচ্ছে বলে
বৃহস্পতিবার নিশ্চিত করেছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি।  ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, নিরাপত্তা ইস্যুতে আলোচনায় সিআইএ পরিচালক উইলিয়াম জে বার্নস এবং জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক এভ্রিল হেইনস সম্প্রতি নয়াদিল্লি সফর করেছেন। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তা জোনাথন ফিনারও ক’দিন আগে দিল্লি সফর করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রাসহ নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট অনেকের সঙ্গেই তিনি দেখা করেন।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here