স্মরণশক্তি বাড়ানোর কিছু আমল

0
122

জ্ঞান অর্জন বা স্মরণশক্তি বৃদ্ধিতে আল্লাহর সাহায্যের পাশাপাশি আন্তরিক প্রচেষ্টা জরুরি। কোরআন-সুন্নাহর আলোকে কয়েকটি দোয়া ও তার আমল কালবেলা অনলাইনের পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো।

ইখলাস বা আন্তরিকতা

যে কোনো কাজে সফলতা অর্জনের ভিত্তি আন্তরিকতা। আর আন্তরিকতার মূল উপাদান হলো বিশুদ্ধ নিয়ত। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনের সুরা আল-বায়্যিনাহর ৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তাদের এ ছাড়া কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে, নামাজ কায়েম করবে এবং জাকাত দেবে। এটাই সঠিক ধর্ম।’

দোয়া ও জিকির করা

আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কোনো কাজেই সফলতা অর্জন সম্ভব নয়। এ জন্য আমাদের উচিত সর্বদা আল্লাহর কাছে দোয়া করা, যাতে তিনি আমাদের স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে দেন এবং কল্যাণকর জ্ঞান দান করেন। এ ছাড়া জিকির বা আল্লাহর স্মরণও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। সুরা কাহাফের ২৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘…যখন ভুলে যান, তখন আপনার পালনকর্তাকে স্মরণ করুন…।’

জ্ঞান বৃদ্ধির দোয়া

رَبِّ زِدْنِي عِلْمًا উচ্চারণ : রব্বি জিদনি ইলমা। অর্থ : ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করো।’ (ত্বা-হা : ১১৪)

অপর দোয়া হলো

ﺳُﺒْﺤَﺎﻧَﻚَ ﻻَ ﻋِﻠْﻢَ ﻟَﻨَﺎ ﺇِﻻَّ ﻣَﺎ ﻋَﻠَّﻤْﺘَﻨَﺎ ﺇِﻧَّﻚَ ﺃَﻧﺖَ ﺍﻟْﻌَﻠِﻴﻢُ ﺍﻟْﺤَﻜِﻴﻢُ

উচ্চারণ : সুবহা নাকা লা ইলমা লানা ইল্লা মা আল্লামতানা, ইন্নাকা আনতাল আ’লিমুল হাকিম। অর্থ : (হে আল্লাহ) আপনি পবিত্র! আমরা কোনো কিছুই জানি না, তবে আপনি আমাদের যা শিখিয়েছেন (সেগুলো ছাড়া) নিশ্চয়ই আপনি প্রকৃত জ্ঞানসম্পন্ন, হেকমতওয়ালা। (সুরা বাকারা : ৩২)

 

পাপ থেকে দূরে থাকা

প্রতিনিয়ত পাপাচারের একটি প্রভাব হচ্ছে দুর্বল স্মৃতিশক্তি। পাপের অন্ধকার ও জ্ঞানের আলো কখনো একসঙ্গে থাকতে পারে না। কোনো মানুষ যখন পাপ কাজ করে, এটা তাকে উদ্বেগ ও দুঃখের দিকে ধাবিত করে। সে তার কৃতকর্মের ব্যাপারে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে তার অনুভূতি ভোঁতা হয়ে যায় এবং জ্ঞান অর্জনের মতো কল্যাণকর আমল থেকে সে ছিটকে পড়ে। তাই আমাদের উচিত পাপ থেকে দূরে থাকার সর্বাত্মক চেষ্টা করা।

বিভিন্ন উপায়ে চেষ্টা করা

সবার মুখস্থ করার পদ্ধতি এক নয়। কারও শুয়ে পড়লে তাড়াতাড়ি মুখস্থ হয়, কারও আবার হেঁটে হেঁটে পড়লে তাড়াতাড়ি মুখস্থ হয়। কেউ নীরবে পড়তে ভালোবাসে, কেউবা আবার আওয়াজ করে পড়ে। কারও ভোরে তাড়াতাড়ি মুখস্থ হয়, আবার কেউ গভীর রাতে ভালো মুখস্থ করতে পারে। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত উপযুক্ত সময় ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ বুঝে যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা।

মুখস্থ বিষয়ের ওপর আমল করা

এ বিষয়ে সবাই একমত, কোনো একটি বিষয় যত বেশিবার পড়া হয়, তা আমাদের মস্তিষ্কে তত দৃঢ়ভাবে জমা হয়। তাই আমাদের একই পড়া বারবার পড়া উচিত, এতে মুখস্থের বিষয়টি আত্মস্থ হয়ে যাবে। যা দীর্ঘদিন স্মৃতিতে গেঁথে থাকবে।

অন্যকে শেখানো

কোনো কিছু শেখার কার্যকর একটি উপায় হলো তা অন্যকে শেখানো। আর এ জন্য আমাদের একই বিষয় বারবার ও বিভিন্ন উৎস থেকে পড়তে হয়। এতে ওই বিষয়টি আমাদের স্মৃতিতে স্থায়ীভাবে গেঁথে যায়।

মস্তিষ্কের জন্য উপকারী খাদ্য গ্রহণ

পরিমিত ও সুষম খাদ্য গ্রহণ আমাদের মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্যের জন্য একান্ত আবশ্যক। অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ আমাদের ঘুম বাড়িয়ে দেয়, যা আমাদের অলস করে তোলে। ফলে আমরা জ্ঞানার্জন থেকে বিমুখ হয়ে পড়ি। এ ছাড়া মস্তিষ্কের জন্য খুবই উপকারী এমন খাবার গ্রহণ করা।

পরিমিত বিশ্রাম

আমরা যখন ঘুমাই, তখন আমাদের মস্তিষ্ক অনেকটা ব্যস্ত অফিসের মতো কাজ করে। এটি তখন সারা দিনের সংগৃহীত তথ্যগুলো প্রক্রিয়াজাত করে। সেই সঙ্গে ঘুম মস্তিষ্ক কোষের পুনর্গঠন ও ক্লান্তি দূর করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

জীবনের অপ্রয়োজনীয় বিষয় ত্যাগ

বর্তমানে আমাদের মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া ও জ্ঞান অর্জনে অনীহার একটি অন্যতম কারণ হলো—আমরা নিজেদের বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় কাজে জড়িয়ে ফেলি। ফলে কোনো কাজই আমরা গভীর মনোযোগের সঙ্গে করতে পারি না। তাই আমাদের উচিত অপ্রয়োজনীয় কাজ থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকা।

হাল না ছাড়া

যে কোনো কাজে সফলতার গুরুত্বপূর্ণ উপায় লেগে থাকা। যে কোনো কিছু মুখস্থ করার ক্ষেত্রে শুরুটা কিছুটা কষ্টসাধ্য হয়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মস্তিষ্ক সবকিছুর সঙ্গে মানিয়ে নেয়। তাই আমাদের উচিত শুরুতেই ব্যর্থ হয়ে হাল না ছেড়ে আল্লাহর ওপর ভরসা করে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here