তৃতীয় বিশ্বে নির্বাচনে হস্তক্ষেপে আমেরিকা কতটা শক্তিশালী- চমস্কির পর্যবেক্ষন কী বলে?

0
110

আমেরিকার ফিলাডেলফিয়াতে ১৯২৮ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ৬ ডিসেম্বর, নোয়াম চমস্কির জন্মদিন। অনেকের সাথেই চিন্তার পার্থক্য থাকার পরেও এক্টিভিস্ট ও স্কলার হিসেবে চমস্কি সক্রিয় প্রায় ৭০ বছর ধরে। তাঁর এই সক্রিয় প্রতিবাদি ভূমিকা ও প্রভাব বিরাট আলোচনার পরিসর দাবি করে।

তিনি তার প্রতিবাদি ভূমিকার জন্য সারা দুনিয়ার মুক্তিকামী মানুষের কাছেই আইকনিক চরিত্রে পরিণত হয়েছেন। ভিন্নমত থাকলেও বুদ্ধিজিবীর ভূমিকার প্রতীক হিসেবে তিনি বিপুল সমাদৃত। প্রায় একশ ছুঁই ছুঁই বয়সে এখনও তিনি সমান সক্রিয়। আমরা আজকে তার একটা পর্যবেক্ষণ নিয়ে আলোচনা করবো। এবং  তাঁর এই পর্যবেক্ষণটা এখনকার বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থান বুঝবার জন্য খুবই জরুরী।

অন্যদেশের নির্বাচনে আমেরিকার হস্তক্ষেপ করার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এমন দেশেও আমেরিকা এই কাজ করে যেখানে তার রাজনৈতিক প্রভাব তেমন একটা শক্তিশালী অবস্থায় থাকে না। কিন্তু প্রয়োজনবোধে বা মার্কিন পলিসি ডিমান্ড করলে আমেরিকা ইন্টারভেনশন করে। কিভাবে আমেরিকা এটা করতে সক্ষম হয় তাই বুঝতে চেষ্টা করার জন্য চমস্কির পর্যালোচনার দিকে আমরা দৃষ্টি দিবো। কেন না ইতিপূর্বে আমেরিকা নিয়ে চমস্কির অনেক ভবিষ্যৎবাণী বাস্তবে ফলতে দেখা গিয়েছে। উদারহরণ হিসেবে আফগান যুদ্ধের কথা বলা যায়। যাহোক আামদের প্রসঙ্গে ফেরা যাক।

নোয়াম চমস্কি-র বই ‘অপটিমিজম ওভার ডেসপেয়ার’ ২০১৭ সালে প্রকামিত হয়। বইটিতে পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্বায়নের বহুবিধ প্রভাব ও পরিণত নিয়ে আলাপ করেছেন তিনি। পেঙ্গুইন থেকে প্রকাশিত এই বইয়ে সি. জে. পলিক্রেনিউ-এর সঙ্গে পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থা, আমেরিকার রাজনীতি, বিদেশনীতি ও সমাজের পরিবর্তন নিয়ে কথা বলেছেন চমস্কি। এই বইয়ে অন্যদেশের নির্বাচন নিয়ে ২০১৭ সালে ‘ট্রুথআউট’-কে দেয়া সাক্ষৎকারটিও ১৩৭ পৃষ্ঠায় অন্তভূক্ত করা হয়েছে। ভীনদেশীদের নির্বাচনে আমেরিকার মধ্যস্ততা করার লম্বা ইতিহাস এখানে চমস্কি তুলে ধরেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে গোটা ইউরোপে এবং পরে লাতিন ও এশিয়ার দেশগুলোতে আমেরিকাকে এই ভূমিকা নিতে দেখা গেছে। সেইসব আলোচনা আমাদের জন্য এখানে প্রাসঙ্গিক নয়। আমাদের জন্য প্রাসঙ্গিক প্রশ্নটি কেবল এখানে উল্লেখ করবো। আমেরিকার সবচেয়ে সক্রিয় সমালোচক চমস্কি এখানে এক প্রশ্নের জবাবে জানান, আমেরিকা এই কাজটা কীভাবে করে।

এই সাক্ষাৎকারের পাঁচ নাম্বার প্রশ্নটি ছিল ( সরল অনুবাদে) –

আমেরিকার নীতিনির্ধারকরা নয়া ওয়াল্ড অর্ডার তৈরি করার জন্য গণতন্ত্রের যে ধারণাকে বুঝে থাকেন তার আলোকে আমরা কী শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি?

চমস্কি এই প্রশ্নের উত্তরের দ্বিতীয় প্যারাতে বলেন,
‘সংক্ষেপে, ইতিহাসের এই সময়ে আমেরিকা তৃতীয় বিশ্ব ও বিশ্বের বৃহৎ ইন্ডাসট্রিয়াল অঞ্চলে ইন্টারভেশন করতে গিয়ে ক্লাসিক্যালি এক সংকটে উপণিত হয়েছে। এইসব জায়গায় আমেরিকার রাজনৈতক অবস্থান দূর্বল। কিন্তু সামরিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান শক্তিশালী। এখন একটা কৌশলগত অবস্থান নির্ধারণের জন্য তাকে নির্ভর করতে হয় তার দূর্বল এবং সবল অবস্থানের পর্যালোচনার উপর। এবং এই অবস্থায় স্বাভাবিক ভাবেই আগ্রাধিকার পায় সামরিক শক্তির দিকটি এবং অর্থনৈতিকযুদ্ধের হিসেব-নিকেশ। এবং এই দুই জায়গায়ই আমেরিকা সুপ্রিম ক্ষমতা নিয়ে শাসন করে।’

খুব সরল ও সংক্ষেপে অনুবাদ করে দেখা যাচ্ছে- আমাদের আসল পয়েন্টটা আামরা পেয়ে গিয়েছি এখানে। অবশ্যই চমঙ্কি এটা আমেরিকার প্রসংশা করতে গিয়ে বলেন নাই। বলেছেন সমালোচনা করতে গিয়েই। কিন্তু এই শক্তির জায়গায় আমেরিকাকে সুপ্রিম বলেই উল্লেখ করেছেন সত্যের স্বার্থেই।

আওয়ামী লীগ সরকার কেন আমেরিকাকে বাংলাদেশে তেমন পাত্তা না দিয়ে ভারতের নির্ভরতায় চরম ফ্যাসিস্ট ভূমিকায় হাজির হয়েছে? কারণ, সরকার জানে আমেরিকা এখানে রাজনৈতিক ভাবে দুর্বল। আর এটার সুযোগ নিয়ে ভারতীয় ও বাংলাদেশী মিডিয়াতে আমেরিকার অবস্থান নিয়ে ক্রমাগত মিথ্যা ও ভুয়া প্রপাগান্ডা সংবাদ ছাপিয়ে ফ্যাসিবাদের অনুসারী ও সহযোগিদের মনোবল চাঙ্গা রাখার কৌশল নিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার।

এইসব দেশে রাজনৈতিক ভাবে আমেরিকা দুর্বল -কথাটা সত্য। চমস্কিও এটা মনে করেন। তৃতীয় বিশ্বে রাজনৈতিক ভাবে বরং লোকাল মোড়লরা বেশি শক্তিশালী। কিন্তু তাই বলে সরকার কি পার পেয়ে যাবে? ইতিমধ্যে সরকার যা যা করেছে, করছে, সুপার পওয়ার হিসেবে আমেরিকার জন্য বিপুল অস্বস্তি তৈরি হওয়ার কথা। হয়েছেও সন্দেহ নাই। ফলে আমেরিকার এই দুর্বল রাজনৈতিক অবস্থানের সুযোগ নিয়ে তার সবল দিকগুলোকে ইগনোর কারার পরিণতি ভয়াবহ হতে বাধ্য। আর সেটা হলো অর্থনৈতিকযুদ্ধ ও সামরিক হস্তক্ষেপ।

বাংলাদেশের বেলায় আমেরিকার নীতি কি হতে যাচ্ছে তা পরিস্কার এতোদিনে। এখানে সামরিক হস্তক্ষেপের প্রয়োজন একদমই নাই। ফলে অর্থনৈতিক যুদ্ধের দিকেই এগুবে আমেরিকা। আর এতে আমেরিকার বিজয় ঠেকানোর ক্ষমতা এশিয়ার কোন দেশের এখনও হয়ে ওঠে নাই। এবং আমেরিকার সবচেয়ে কঠোর সমালোচক নোয়াম চমস্কিও মনে করেন আমেরিকা সুপ্রিম ক্ষমতার অধিকারী- অর্থনীতি ও সামরিক-এই দুই ক্ষেত্রেই। কাজেই, জনগনের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে সন্ত্রাসী কায়দায় দমন করে, মিথ্যা শক্তির প্রদর্শন করে সরকার নিজেকে নিজে প্রতারিত করার কৌশল নিয়ে গোটা দেশকে পরাশক্তির যুদ্ধভূমিতে পরিণত করার দিকে হাটছে। এদের প্রতিহত করা ছাড়া দেশ ও সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করা সম্ভব না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here