১০ বছরেও খোঁজ মেলেনি সন্তানের ফেরার অপেক্ষায় মা

0
120

দশ বছর ধরে নিখোঁজ নিজাম উদ্দিন মুন্না। ২০১৩ সালের ৬ই ডিসেম্বর রাত ১০টার দিকে সাদা পোশাকে কয়েকজন লোক র‌্যাব পরিচয়ে তাকে তুলে নেয়। এরপর থেকে ছেলেকে হন্যে হয়ে খুঁজছে পরিবার। কিন্তু আজও হদিস মেলেনি রাজধানীর বিমানবন্দর থানা ছাত্রদলের তৎকালীন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুন্নার।

২০১৬ সালে ছেলের শোকে বাবা সামছুদ্দিন স্ট্রোক করে মারা যান। অন্যদিকে স্বামী এবং সন্তানকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ মুন্নার মা ময়ূরী বেগম। সন্তান ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনছেন তিনি।  তিনি বলেন, ২০১৩ সালের ৬ই ডিসেম্বর রাত ১০টার সময় মোল্লার টেক এলাকা থেকে আমার ছেলেকে র‌্যাব পরিচয়ে উঠিয়ে নিয়ে যায়। এই ১০ বছরে আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলে- আমার ছেলে নাকি নিজেই আত্মগোপনে আছে। কীভাবে ১০ বছর, আত্মগোপনে থাকে, পরিবারের কথা কি মনে পড়ে না? এটা কেমন দেশ, কি বিচার আমরা এইটাই বুঝতে পারছি না।

ওর বাবা থাকলে তাও একটু সাহস থাকতো এখন একা হয়ে গেছি। ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে আজকে ১০ বছর শেষ হয়ে এগারো বছরে পড়লো। আমরা যে একটা প্রোগ্রাম করবো, একটু মিলাদ পড়াবো সেটারও উপায় নেই চাপে। নিখোঁজের প্রথম বছরে এগুলো করতে পারছি, আর তার পরে তো হয়রানি আর হয়রানি। আমাদের সন্তানগুলোকে যেন আল্লাহ ফিরিয়ে দেয়। এ সকল মায়ের কান্না যেন তাদের হৃদয়ে পৌঁছে যায়। আমাদের কান্না তো কেউ শোনে না। সন্তানের কবরটাও যদি দেখাতো তাহলেও নিজেকে বুঝাতে পারতাম।

তিনি বলেন, আমার ছেলে একটি গ্লাস হাউজে চাকরি করতো। ঘটনার দিন দোকান বন্ধ করে বাসায় আসছিল। আসার পথে র‌্যাব পরিচয় দিয়ে তাকে ধরে নিয়ে যায়। তখন ওর বাবা দেখতে পেয়ে চিৎকার দিলে তারা বলে আপনার ছেলের নামে অভিযোগ আছে, তাকে আমরা থানায় নিয়ে যাচ্ছি। এরপর রাত ১১টার দিকে আমার স্বামী বিমানবন্দর থানায় যান। থানা থেকে বলা হয় মুন্না নামে আমাদের থানায় কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তখন মুন্নার বয়স ছিল ২২ বছর। এরপর ডিবি অফিসে যান, সেখান থেকেও বলা হয় এই নামে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। এরপর থেকে খুঁজতে খুঁজতে ১০ বছর কেটে গেল। প্রথম ৬ মাস পর্যন্ত ওর বাবা শুধু প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। প্রথম কয়েকদিন তারা বলেন, আপনার ছেলে আছে, তখন ওর বাবা বলে তাহলে আমাদের একটু দেখান। এরপর তাদের কাছে গেলে কেউ কিছুই জানে না বলে জানায়। যখন আমার ছেলেকে ধরে নিয়ে যায় তখন তারা সাদা পোশাকে ছিল এবং সঙ্গে ছিল কালো গাড়ি।

ময়ূরী বেগম বলেন, ওইদিন থেকে পথেঘাটে হয়রানির শেষ নেই। দেশে যেকোনো দিবস আসলে বাসায় পুলিশ আসতো। এখনো আমরা অনেক চাপের মধ্যে আছি। তার ‘অপরাধ’ ছাত্রদল করা।  ছেলেহারা মায়ের কষ্ট কে বুঝবে? এখনো কেউ যদি ফোন করে- দৌড়ে আসি, এই বুঝি আমার ছেলে মা বলে ডাকবে। একটা সন্তানহারা মায়ের যে কতো যন্ত্রণা, কতো কষ্ট সেটা মা ছাড়া কেউ বুঝবে না। আমার মতো দুঃখিনী মা যেন আর কেউ না হয়। আমার স্বামী নেই, এক ছেলে নেই, মা-বাবা নেই। তাদের ছাড়া বুকে পাথর চাপা দিয়ে থাকি। নিজের বাড়ি, মাথার উপর ছাদ নেই, পায়ের নিচে মাটি নেই, আমিও আমার নেই। আমরা গুম পরিবার, কোথাও গিয়ে দাঁড়াতে পারি না। ছেলেগুলো চলাফেরা করলে তারা কুনজরে তাকায়, সমালোচনা করে। পুলিশের হয়রানিতে বাসা পর্যন্ত পাল্টিয়েছি। আমরা যে কতো কষ্টে আছি এটা কাউকে বুঝাতে পারবো না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here