ডায়রিয়া হলে কী করবেন?

0
82

পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়ার জন্য মূলত দায়ী কিছু ব্যাকটেরিয়া। এসব ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু পেটে যাওয়ার কারণে ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হয়ে থাকে। আর সেটা অধিকাংশ ক্ষেত্রে কয়েক দিনের মধ্যেই সেরে যায়। তবে ডায়রিয়া থেকে যদি মারাত্মক পানিশূন্যতার সৃষ্টি হয়, সেটা অনেক সময় মৃত্যুর কারণও হতে পারে।

আমাদের দেশে সাধারণত গরমের সময়ে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি দেখা যায়। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) তথ্যমতে, বাংলাদেশে সারাবছর কমবেশি ডায়রিয়ার রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। তবে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত এ রোগের লক্ষণ বেশি দেখা যায়।

পানিবাহিত এ রোগের জীবাণু পানি ছাড়াও পচা-বাসি খাবারের মাধ্যমেও ছড়িয়ে থাকে। জীবাণুটি যদি কোনোভাবে পচা-বাসি খাবারে পড়ে, তা সেখানে দ্রুত বংশবিস্তার করতে থাকে। যেমন : একটা থেকে চারটা, ৪টা থেকে ১৬টা; এভাবে ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে পড়ে। তবে গরম খাবারে এই জীবাণু পড়লেও তেমন ছড়াতে পারে না।

এ ছাড়া ডায়রিয়ার জীবাণু আছে, এমন পানি দিয়ে তৈরি করা খাবার খেলেও ডায়রিয়া হয়ে থাকে।

পানিশূন্যতার লক্ষণ

ডায়রিয়া হলে শরীর থেকে প্রচুর পানি ও প্রয়োজনীয় লবণ বেরিয়ে যায়। যখন এ ঘাটতি পূরণ করা না হয়, তখনই পানিশূন্যতা দেখা দেয়। আর এই পানিশূন্যতা মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে চলে গেলে তা থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই ডায়রিয়ার প্রথম চিকিৎসা হলো পানিশূন্যতা পূরণ করা। পানিশূন্যতার প্রধান লক্ষণগুলো হচ্ছে—

# পিপাসা লাগা

# মুখ শুকিয়ে আসা

# চোখ শুকনো লাগা বা খচখচ করা

# প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া

# গাঢ়, তীব্র দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব হওয়া

ডায়রিয়া হলে যা করতে হবে

# এক প্যাকেট খাবার স্যালাইন আধা লিটার পানিতে গুলিয়ে খেতে হবে। শিশুর জন্য বারবার পাতলা পায়খানা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওরস্যালাইন দিতে হবে। বাজারে রাইস স্যালাইন পাওয়া যায়, সেটাও দেওয়া যেতে পারে।

# বড়দের (১০ বছরের বেশি) ডায়রিয়া হলে প্রতিবার পায়খানার পর এক গ্লাস (২৫০ গ্রাম) পানিতে গুলিয়ে খাবেন।

# শিশুদের ডায়রিয়া হলে প্রতিবার পায়খানার পর শিশুর যত কেজি ওজন, তত চা চামচ বা যতটুকু পায়খানা হয়েছে, আনুমানিক ততটুকু স্যালাইন খাওয়াবেন।

# শিশুর বমি হলে ধীরে ধীরে খাওয়ান। যেমন—প্রতি তিন-চার মিনিট পরপর এক চা চামচ করে স্যালাইন খাইয়ে দিন।

# খাবার স্যালাইন খাওয়ানোর পাশাপাশি দুই বছরের নিচের শিশুকে অবশ্যই মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে, কোনোভাবেই বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করা যাবে না।

# ছয় মাসের অধিক বয়সী রোগী খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি সব ধরনের খাবার খেতে পারবে।

# প্রাপ্তবয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি বেশি বেশি তরল খাবার, যেমন—ডাবের পানি, চিড়ার পানি, স্যুপ ইত্যাদি খাওয়াবেন।

# বাচ্চাদের ডায়রিয়া হলে কোমল পানীয়, ফলের রস, আঙুর, বেদানা খাওয়াবেন না।

# ছয় মাস থেকে পাঁচ বছরের শিশুকে প্রতিদিন একটি করে জিঙ্ক ট্যাবলেট পানিতে গুলিয়ে ১০ দিন খাওয়াবেন।

# অবস্থার কোনো পরিবর্তন না হলে বা অবনতি হলে কাছের হাসপাতালে রোগীকে ভর্তি করাবেন।

ডায়রিয়া থেকে বাঁচার উপায়

# বারবার সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে।

# ডায়রিয়া এড়াতে খাবার ও পানি জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে।

# রাস্তার পাশের অস্বাস্থ্যকর ও উন্মুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না।

# পানি ফুটানোর সময় বলক ওঠার পর আরও পাঁচ মিনিট চুলায় রাখতে হবে, পানি ঠান্ডা হলে পান করতে হবে। পানি ফুটানোর ব্যবস্থা না থাকলে প্রতি তিন লিটার পানিতে একটি পানি বিশুদ্ধকরণ ক্লোরিন ট্যাবলেট দিয়ে পানি নিরাপদ করা যেতে পারে।

# এ সময় শিশুকে ফিডারে কিছুই খাওয়ানো যাবে না। যদি খাওয়াতেই হয়, তবে ফোটানো পানি ও সাবান দিয়ে ভালো করে ফিডারটি ধুয়ে, ফিডারের নিপলের ছিদ্রটি ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।

ডায়রিয়া হলে যা করবেন না

# সম্ভব হলে অন্যদের জন্য রান্না করা থেকে বিরত থাকুন।

# আপনার থালা-বাসন, ছুরি-চামচ, গামছা-তোয়ালে, জামা-কাপড় কারও সঙ্গে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করবেন না।

# লক্ষণগুলো চলে যাওয়ার পর দুই সপ্তাহ পার হওয়ার আগে পুকুর বা সুইমিংপুলে নামবেন না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here