তারেক রহমানের যে কৌশলের কাছে এবার ধরা খেল আওয়ামী লীগ

0
205

গত ২৮ নভেম্বরের পর থেকে চলতে থাকা চরম দমন , গ্রেফতার, পুলিশের অত্যাচার, লীগের নেতা-কর্মিদের হামলা সব কিছু কাটিয়ে হঠাৎ সরব হয়ে উঠেতে শুরু করেছে বিএনপি। বিএনপি নেতা-কর্মীদের মাঠে নামতে নির্দেশ দিয়েছেন, হাইকমান্ড।

২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনের সমাবেশের পর দিন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলসগীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি নিম্ন আদালত থেকে জামিন পাননি। এখন জামিনের জন্য তার পক্ষে উচ্চ আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আর এরইমধ্যে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও কয়েকজন নেতা ছাড়া শীর্ষ পর্যায়ের প্রায় সব নেতাই কারাগারে আছেন। রুহুল কবির রিজভি বিএনপির কর্মসূচি ঘোষণা করছেন এবং তাকে ঢাকার আশপাশে বিভিন্ন মিছিলে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়।
মিডিয়াতে একতরফা প্রচারণায় বিএনপির নেতা কর্মিদের বিভ্রন্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। অনেকের মধ্যে হতাশা ও সংশয় তৈরি হতে শুরু করেছিল।

কিন্তু আত্মগোপন আন্দোলনের কৌশলের অংশ ছিল তা বুঝতে পারা গেল ডামি ইলেকশন আয়োজনের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার তারিখ শেষ হওয়ার সাথে সাথে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী ডয়েচে ভেলেকে বলেন
“দলের হাইকমান্ড( তারেক রহমান) থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা যারা কারাগারের বাইরে আছেন তাদের সবাইকে দলের কর্মসূচি বাস্তবায়নে মাঠে থাকতে হবে। কৌশলগত কারণে নেতারা ৩০ নভেম্বর( মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন) পর্যন্ত আত্মগোপনে ছিলেন। কারণ তাদের ওপর নির্বাচনে অংশ নিতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা চাপ দিচ্ছিল। তাতে সরকার সফল হয়নি। এখন দলের হাইকমান্ড সবাইকে মাঠে নামতে বলেছেন।”

সরকার বিএনপিকে ভাঙার ও যুগপৎ আন্দোলনে ভাঙন ধরানোর যে চেষ্টা করেছে তাতে সফল হয়নি। যারা নানা নামে দল করে বিএনপির কিছু লোককে ভাগানোর চেষ্টা করেছে তারাও ব্যর্থ হয়েছে। এতে দলের নেতা-কর্মীরা আরো চাঙ্গা হয়েছে বলে তারা মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন,” আমাদের চলমান আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। এখন সমমনা সব দলকে একই মঞ্চে নিয়ে আসার কাজ চলছে। সবাই আমরা এক বিন্দুতে চলে আসব। আরো নতুন কর্মসূচি নিয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা সমমনা দলগুলোর সঙ্গে কথা বলছেন।”

ফলে সরকারের সব প্রচারণা অসাড় প্রমাণ হয়ে গেল। আওয়ামী লীগ যেভাবে ফাঁকা মাঠে ক্ষমতার ভাগাভাগির সিলেকশন করে ফেলবে ভেবেছিল সেই হিসেব পাল্টে গেল। ফলে দলটি আবারও বিএনপিকে অনুসরণ করে আরও সহিংসতার অজুহাত তৈরি করতে পাল্টা কর্মসূচি দিতে শুরু করেছে।
আগামী ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের কর্মসূচিতেও বিএনপি নেতারা অংশ নিতে চান। জানা গেছে ওই দিন নিখোঁজ ও গুম হওয়াদের স্বজনদের সংগঠন ” মায়ের ডাকের” কর্মসূচিতে বিএনপি নেতারা উপস্থিত থাকবেন। বিএনপির আলাদা সমাবেশ বা মানববন্ধনের কর্মসূচির থাকবে। একই দিনে আওয়ামী লীগও ঢাকায় বায়তুল মোকাররম মসজিদেও দক্ষিণ গেটে সমাবেশ ডেকেছে। ফলে এক মাসেরও বেশি সময় পর বিএনপি ও আওয়ামী লীগ ফের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে যাচ্ছে।

কর্মসূচির নতুন ধরন সম্পর্কে বিএনপি নেতারা বলেন,” দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলছেন। প্রচলিত হরতাল অবরোধ রেখেই আরো নতুন কর্মসূচির চিন্তা হচ্ছে। আমরা ওই কর্মসূচির সঙ্গে সভা-সমাবেশের কর্মসূচিও দেবো।আমাদের এখন টার্গেট ৭ জানুয়ারির নির্বাচন। ওই নির্বাচন যাতে না হয়। এই সরকার পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যাতে নির্বাচন দিতে বাধ্য হয় সেজন্য আন্দোলন আমরা আরো জোরদার করব।”
আওয়ামী লীগের নেতারা বিএনপির ভাঙা এবং মাঠে ফিরে আসার কৌশলে কিছুটা হতাশ হয়ে পড়েছেন। কিন্তু এই হতাশা আড়াল করতে দ্রুতই বিএনপির পিছে পিছে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত হলো- তাকের রহমানের এই ব্যাকফুটে গিয়ে আবার ফ্রন্টফুটে আগানোর এই কৌশলে আওয়ামী লীগ এবার ধরা খেয়েছেন। বিএনপির জন্য ফাঁদ পাততে গিয়ে সেই ফাঁদে একের পর এক তারাই পড়ছেন। ফলে দলটি দিনদিন ক্ষমতা হারানোর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছেন বলেই মনে করছেন তাঁরা।

অন্যদিকে, বিএনপির নবম দফা ৪৮ ঘণ্টা অবরোধের শুরুতে ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ২৩০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ১০টি মামলা হয়েছে, ৫০ জন আহত এবং একজনের মৃত্যু হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here