গাজায় ইসরাইল-হামাস মুখোমুখি যুদ্ধ

0
118

পুরো গাজা উপত্যকায় হামলা চালাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। এতদিন তারা গাজার উত্তরাঞ্চলে বেশির ভাগ হামলা চালিয়েছে। এখন দক্ষিণে শরণার্থী বোঝাই এলাকাগুলোতেও একই কাণ্ড ঘটাচ্ছে। এরই মধ্যে এসব হামলায় বিপুল পরিমাণ গাজাবাসী নিহত ও আহত হয়েছেন। হামাস বলছে, দক্ষিণের শহর খান ইউনুস থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে ইসরাইলি সেনাদের সঙ্গে মুখোমুখি যুদ্ধ করছে হামাসের যোদ্ধারা। এ অবস্থায় যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে ইরান। বিশেষ করে রোববার লোহিত সাগরের দক্ষিণাঞ্চলে জাহাজ চলাচলের রুটে হামলায় এই যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার বড় রকম আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, এর আগে ইসরাইল গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে সাধারণ মানুষজনকে সরে দক্ষিণে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। ফলে আল শিফা হাসপাতাল সহ সব স্থাপনা থেকে রোগী, আশ্রয়গ্রহণকারী এবং সাধারণ মানুষকে সরিয়ে নেয়া হয় দক্ষিণে। সেখানে আশ্রয় নেয়া গাজাবাসী বলছেন, তারা ট্যাংকের গুলির শব্দ শুনতে পেয়েছেন।

এর আগে তেল আবিবে ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ)-এর মুখপাত্র রিয়ার এডমিরাল ডানিয়েল হাগারি সাংবাদিকদের বলেছেন, গাজা উপত্যকায় হামাসের কেন্দ্রীয় অঞ্চলগুলোর বিরুদ্ধে স্থল অভিযান অব্যাহত রাখবে আইডিএফ। এই বাহিনীর সদস্যরা হামাসের সঙ্গে মুখোমুখি যুদ্ধ করছে।

 

ওদিকে সোমবার হামাসের মিডিয়া জরুরি সার্ভিসকে উদ্ধৃত করে বলেছে, ইসরাইলের হামলায় গাজা সিটিতে বেসামরিক তিনজন ইমার্জেন্সি কর্মী নিহত হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, লোহিত সাগরে আন্তর্জাতিক জলসীমায় তিনটি বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা করেছে ইয়েমেনের হুতিরা। ওই অঞ্চলে সক্রিয় থাকা যুক্তরাষ্ট্রের ডেস্ট্রয়ার তিনটি ড্রোনকে ভূপাতিত করেছে। হুতির এক মুখপাত্র বলেছেন, লোহিত সাগরে ইসরাইলের দুটি জাহাজে হামলা চালিয়েছে তাদের নৌবাহিনী। রোববার এ কাজে ব্যবহার করা হয়েছে সশস্ত্র ড্রোন এবং একটি ক্ষেপণাস্ত্র। তবে ওই দুটি জাহাজের সঙ্গে ইসরাইলের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র।
গাজার উত্তরাঞ্চলে জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে আকাশ থেকে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এতে বেশ কিছু মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র। রয়টার্স যেসব ফুটেজ পেয়েছে তাতে দেখা যায়, একটি বালক ধুলোবালিতে একেবারে ঢেকে আছে। বিধ্বস্ত কংক্রিটের স্তূপের ওপর বসে আর্ত চিৎকার করছে। তার কণ্ঠ শুকিয়ে গেছে। তবু সে চিৎকার করছে। বলছে, আমার পিতা শহীদ হয়েছেন। গোলাপী পোশাক পরা একটি বালিকাকে দেখা যায় ধুলোবালিতে ছেয়ে আছে। সেও দাঁড়িয়ে আছে ধ্বংসস্তূপের মাঝে। এছাড়া আল জাজিরার ঘটনাস্থল থেকে সরাসরি সম্প্রচারে দেখা যায়, কম্বলে মুড়িয়ে মৃতদেহ সরিয়ে নিচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা। একটি হাসপাতাল দেখানো হয়, সেখানে রক্তাক্ত মানুষ আসছেই। সেসব মানুষের দেহ থেকে রক্ত ঝরছে। তাতে হাসপাতালের মেঝে ভেসে যাচ্ছে। তার ভিতর দিয়ে মানুষ ছুটছে। চিকিৎসকরা এসব মানুষকে বাঁচাতে প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন। স্থানীয়রা বলেছেন, গাজার দক্ষিণে খান ইউনুস ও রাফাহ শহরে ইসরাইলি যুদ্ধবিমান থেকে বোমা ফেলা হচ্ছে। সশস্ত্র পদাতিক হামলা চলছে। ইসরাইল সরকারের মুখপাত্র ইলন লেভি বলেছেন, সপ্তাহান্তে কমপক্ষে ৪০০ টার্গেটে হামলা করেছে তারা। এর মধ্যে খান ইউনুসে সবচেয়ে তীব্র করা হয়েছে আকাশপথে হামলা। তারা হামাসের একজন কমান্ডারকে হত্যার দাবি করেছে। উত্তরে বেইত লাহিয়াতে ধ্বংস করে দিয়েছে অবকাঠামো।

শুক্রবার সাত দিনের অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি শেষ হয়ে যাওয়ার পরই গাজায় নতুন করে হামলা শুরু করে ইসরাইল।  সর্বশেষ এই সহিংস হামলায় বেসামরিক লোকজনের সীমিত ক্ষতির জন্য আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তা সত্ত্বেও যেভাবে হামলা হচ্ছে তাতে কোনো বাদবিচার নেই। আল জাজিরায় প্রচারিত ভিডিও ফুটেজই বলে দিচ্ছে, কিভাবে সাধারণ মানুষকে- শিশু ও নারীদের হত্যা করছে ইসরাইল। রোববার ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট আইজাক হারজগ এবং ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস। এ সময় তিনি ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। একই সঙ্গে সমস্যার দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানে সমর্থন ব্যক্ত করেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে ৭ই অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১৫,৫২৩ জনকে হত্যা করেছে ইসরাইল।

অন্যদিকে ইসরাইলে নিহত হয়েছে ১২০০ মানুষ। প্রায় ২৪০ জন ইসরাইলিকে জিম্মি করে হামাস। ইসরাইলের দাবি, হামাসের কাছে এখনও আছে ১৩৬ জন ইসরাইলি জিম্মি। হামাসকে চিরতরে দুনিয়া থেকে মুছে দেয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করেছে ইসরাইল। অন্যদিকে ইসরাইলের ধ্বংসের জন্য শপথবদ্ধ হামাস।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here