ফের প্রবাসী আয়ে পতন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন

0
112

গত সেপ্টেম্বরে দেশে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে ভয়াবহ পতন ঘটে। এর পর প্রণোদনার হার বৃদ্ধি ও ডলারের বাড়তি দরের ওপর দাঁড়িয়ে পরের মাস অক্টোবরে তা ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসে। কিন্তু নভেম্বরে ডলারের দাম কমতে শুরু করায় তার প্রভাব পড়ে প্রবাসী আয়েও। এ কারণে অক্টোবরের পরিস্থিতি বদলে যায় নভেম্বরে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, সদ্য সমাপ্ত নভেম্বর মাসে প্রবাসী আয় ফের কমে গেছে। এ মাসে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে বৈধ পথে ও ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ১৯৩ কোটি ডলার, যা অক্টোবরের চেয়ে প্রায় ৫ কোটি ডলার বা ২ দশমিক ৪০ শতাংশ কম।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তির অন্যতম শর্ত হচ্ছে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানো। যদিও পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিদেশি জনশক্তি রপ্তানির পরিমাণ বাড়লেও প্রবাসী আয়ের একটি বড় অংশ হুন্ডিতে আসায় রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, প্রণোদনা বাড়িয়ে দেওয়ায় প্রবাসীরা গত অক্টোবরে বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন, আর নভেম্বর মাসে দুদফায় রেমিট্যান্সের দর কমানোর ফলে প্রবাসীরা আবার ব্যাংকিং চ্যানেলের পরিবর্তে হুন্ডিতে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। অর্থ পাচারেও এই হুন্ডি ভূমিকা রাখছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এবং বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কর্মকর্তারা। আর তাই ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে কাজ করছে সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক।

নভেম্বরে ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে এসেছে স্থানীয় মুদ্রায় ২১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১১০ টাকা করে ধরে)। আগের মাস অক্টোবরে পতনের ধারা থেকে বেরিয়ে ইতিবাচক ধারায় এসেছিল রেমিট্যান্স প্রবাহ। ওই মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯৭ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। সেই হিসাবে রেমিট্যান্স কমেছে ৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলার বা ২ দশমিক ৪০ শতাংশ। যদিও এর আগের মাস সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ ডলার, যা গত ২১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। তবে অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছে ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার এবং এর পরের মাস আগস্টে এসেছে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার।

এদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের (জুলাই-নভেম্বর) প্রথম পাঁচ মাসে সব মিলিয়ে রেমিট্যান্সে এসেছে ৮৮১ কোটি ৪৫ লাখ মার্কিন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় সামান্য বেশি। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ৮৭৯ কোটি ৩৪ লাখ ডলার।

নভেম্বরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১৪ কোটি ৪২ লাখ ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৫ কোটি ৩২ লাখ ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১৭২ কোটি ৬৭ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫৯ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।

২০২২-২৩ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১৬১ কোটি ৭ লাখ মার্কিন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে এসেছিল ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স ছিল ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার।

ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে চলতি বছরের ২২ অক্টোবর সরকারের দেওয়া বিদ্যমান আড়াই শতাংশের সঙ্গে নিজ তহবিল থেকে আরো আড়াই শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে। নতুন সিদ্ধান্তে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালে প্রবাসীরা প্রতি ডলারে ১১৬ টাকার বেশি পাবেন বিনিময় হারে। প্রণোদনা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অক্টোবর মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহে ইতিবাচক ভূমিকা রাখলেও পরের মাসে তা আবার কমে গেছে। কারণ এই মাসে দুদফায় রেমিট্যান্সের দর কমানো হয়েছে।

সর্বশেষ, ডলারের নতুন দর নির্ধারণ করেছে ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ অথরাইজড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা)। রেমিট্যান্স এবং ডলারের অন্যান্য দর ক্রয় পর্যায়ে ১০৯ টাকা ৭৫ পয়সায় এবং আমদানিকারকদের কাছে প্রতি ডলার বিক্রি করবে ১১০ টাকা ২৫ পয়সাতে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here