বর্তমান পৃথিবীর মানচিত্রে প্রায় দুইশটি রাষ্ট্র রয়েছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে ইউরোপ ব্রিটিশ, ফরাসি, অস্ট্র-হাঙ্গেরি, অটোমানদের অধীনে ছিল, এশিয়াতে ছিল জাপান, রুশ, অটোমান সাম্রাজ্য, আফ্রিকাতে ছিল অটোমান সাম্রাজ্য। সমগ্র পৃথিবী তখন শাসন করতো সাত আটটি রাজপরিবার। রাজ পরিবারদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে জনগণ তাদের কল্যাণকর শাসন ব্যবস্থা খুঁজে নেয়। জনগণ তাদের কল্যাণকর শাসন ব্যবস্থা সরল বিশ্বাসে তাদের নির্বাচিত নেতার কাছে ক্ষমতা তুলে দেয়। আর সেই নেতাই হয়ে উঠে ফ্যাসিস্ট। সকলে না, কিছু কিছু। ফ্যাসিস্ট ইতালিয় শব্দ। ‘ফ্যাসিস্ট দল’ তৈরি করেছিলেন ইতালির একজন শ্রমিক নেতা। যার নাম ছিল বেনিতো মুসোলিনি। তৎকালীন শ্রমিক অসন্তোষ ঠেকাতে মুসোলিনি দলটি গঠন করেছিল। ফ্যাসিজম শব্দের উৎপত্তি ওখান থেকেই। ফ্যাসিজম দিয়ে চরমপন্থি ন্যাশনালিস্ট বুঝানো হয়, এরা গনতন্ত্রের ধার ধারেনা, ন্যাশনালিজম-ই ফ্যাসিজমের মূল কথা বলে স্বীকৃত। এটি বিশেষভাবে বামপন্থী রাজনীতির উপাদান গ্রহণের মাধ্যমে ডানপন্থী রাজনীতিতে অবস্থান গ্রহণ করে এবং এটি ছিল সমাজতন্ত্র, উদারতাবাদ, সাম্যবাদ, ডানপন্থী রক্ষণশীল, গণতান্ত্রিকের বিরোধী। তবে ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রনায়কদের কথা আসলেই জার্মানির অ্যাডলফ হিটলার এবং ইতালির বেনিতো মুসোলিনির নাম বলতেই হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সাধারণ সৈনিক হিটলারও কিন্তু একটি স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে। জার্মানির নিকৃষ্ট ফ্যাসিস্ট অ্যাডলফ হিটলারের সাথে নব্য ফ্যাসিস্টদের তুলনা করা হয়। বাংলাদেশর ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার ফ্যাসিজম কোন পর্যায়ে রয়েছে তা নির্ণয় করতে অ্যাডলফ হিটলারের ফ্যাসিজমের সাথে তুলনা করতে হবে।
স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের সাথে সাথেই যুক্ত হয় ফ্যাসিস্ট ও ফ্যাসিজম। দেশ হিসাবে বা জাতি হিসাবে এটি আমাদের দুর্ভাগ্য। বাংলাদেশর বর্তমান ফ্যাসিস্ট ও ফ্যাসিজম বীজ বপন করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। শেখ হাসিনা তার পিতার বপন করা ফ্যাসিজমের বীজকে বটবৃক্ষের মত রূপ দিয়েছে। শেখ মুজিবের বাকশাল রুপি ফ্যাসিজমের কথা সবাই জানেন। তার পরও বলতে হয়। প্রথম ক্রসফায়ারও হয়েছিলো বাকশালি আমলে। ইঞ্জিনিয়ার সিরাজ শিকদারকে ক্রসফায়ার দিয়ে বলা হয়েছিলো “কোথায় সিরাজ শিকদার?”। তখন বিএনপি ছিল না , জাতীয় পার্টি ছিল না , জামাত-শিবির ছিল না। প্রতিপক্ষ ছিল জাসদ। সেই জাসদের প্রায় চল্লিশ হাজার নেতা কর্মী হত্যা করা হয়েছিলো। হত্যা, খুন, গুম, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি- রাহাজানি ছিল প্রতিদিনের ঘটনা। বাকশালের কথা বলার উদ্দেশ্য আমার নয়। তারপরও শেখ মুজিবের প্রসঙ্গ আসলে বাকশালের কথা না বলে ইতিহাসকে অপমান করা হবে। যার জন্যই বিশাল সমুদ্রের পানির ন্যায় বাকশালি অপরাধের একফোঁটা লেখা। আর জাতি হিসাবে আমাদের দুর্ভাগ্য যে একবার ফ্যাসিস্ট সরকারকে উৎখাত কারার ৩৯ বছর পর আবার ফ্যাসিস্ট সরকারের উত্থান, প্রথম জন ছিল পিতা আর পরের জন কন্যা। আমরা সেই হতভাগ্য জাতি ফ্যাসিস্ট এর কন্যাকে এবার সুযোগ দিই। পৃথিবীর ইতিহাসে এরূপ হয়েছে কি না জানিনা।
এবার আমরা দেখি হাসিনার গণতন্ত্রে হিটলারের ফ্যাসিজম কিভাবে ভর করেছে। ফ্যাসিস্ট ও ফ্যাসিজমের প্রধান অস্ত্র মিথ্যাচার। জোসেফ গোয়েবলস হিটলারের প্রচার মন্ত্রী, যার কাজই ছিল মিথ্যা বলা এবং তা মিডিয়াতে প্রচার করা। মিথ্যা কথাটা বার বার প্রচার করা। হিটলার বিশ্বাস করতো বারবার একটা মিথ্যা বললে তা সত্য হয়ে যায়। হিটলার যেদিন মারা গিয়েছিল সেদিনও গোয়েবলসের চাপাবাজি চলছিল। জোসেফ গোয়েবলসকে মিথ্যাচারের বরপুত্র ধরা হতো ফ্যাসিস্ট হাসিনার আগমনের পূর্বে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার জোসেফ গোয়েবলস কে? কাওয়া কাদের না হাসান মাহমুদ? না এরা একজনও নয়। জোসেফ গোয়েবলস ভূমিকায় হাসিনা নিজেই। এ পৃথিবীতে জোসেফ গোয়েবলসের সাথে তুলনা করা যায় শুধু হাসিনার। যার দিন শুরু হয় মিথ্যা দিয়ে আর শেষ হয় মিথ্যা দিয়ে। মিথ্যাচারের দিক থেকে ফ্যাসিস্ট হাসিনার কাছে হিটলার শিশু। জোসেফ গোয়েবলসের ও হিটলার যা মিথ্যাচার করতো হাসিনা একাই তা করে। আর প্রচার মাধ্যম সগুলোই যেন একই মদ রং বেরঙ্গয়ের বোতলে রাখার মত।
হিটলার গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত হয়েই তার ফ্যাসিজম শুরু করার পথ খুঁজতে থাকে। অবশেষে সে একটি পথ বের করে। পোল্যান্ড আক্রমণ করার প্রেক্ষাপট তৈরি করে হিটলার নিজেই। হিটলার তার দেশের সাজা প্রাপ্ত কয়েদিকে পোল্যান্ড সেনাবাহিনীর পোশাক পরিয়ে পোল্যান্ড ও জার্মান সীমান্তে নিয়ে হত্যা করে এবং প্রচার করে পোল্যান্ড জার্মান আক্রমণ করেছে। সীমান্তে পোল্যান্ড ও জার্মানি যুদ্ধ হয় এবং পোল্যান্ড সেনাবাহিনীর কয়েকশত সৈন্য নিহত হয়েছে। পরের দিনই পোল্যান্ড আক্রমণ করে বসে ও দখল করে নেয় হিটলার। ফ্যাসিস্ট হাসিনা হিটলারের এই অপকৌশল গ্রহণ করেছে। ফ্যাসিবাদ বাস্তবায়নের প্রথম ধাপ ছিল পরিকল্পিত বিডিআর বিদ্রোহ করার পরিবেশ তৈরি করা। ফ্যাসিবাদ বাস্তবায়নের প্রধান বাধা ছিল এই বিডিআর বিদ্রোহে নিহত ৫৭ জন সেনা অফিসার। আর পরের ধাপে পরিকল্পিত ভাবে শাহবাগ তৈরি করে, যা শুরু হয়েছিল রাজাকারের বিচার দিয়ে আর শেষ হয়েছিল ইসলাম ধর্মের অবমাননা দিয়ে। শাহবাগ তৈরির মূল লক্ষ্য ছিল ইসলামী ধর্মীয় চেতনাকে কবর দিয়ে ইসলামী চেতনাকে খণ্ডিত করে একটি অংশকে ফ্যাসিবাদের পক্ষে নিয়ে আসা। এরই ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় ধাপে ব্লগারদের দিয়ে মাঠে নামতে বাধ্য করা হয় হেফাজত ইসলামকে, নিজের অজান্তেই লক্ষ লক্ষ মুসলমান এই ফাঁদে পা দেয়। ৫ মের হেফাজত হত্যাযজ্ঞ দিয়ে ফ্যাসিবাদ বাস্তবায়নের ইঙ্গিত প্রদান করে। পরের ধাপ বাস্তবায়ন করে ২০১৪ সালে প্রতিপক্ষের আন্দোলনকে বিতর্কিত করার লক্ষ্যে বাসে আগুন ধরিয়ে জ্বালাও পোরাও করিয়ে প্রতিপক্ষের উপর দোষ চাপিয়ে এবং মিথ্যা মামলা দিয়ে ঘায়েল করে। ফ্যাসিবাদের পরিপূর্ণ রূপ প্রকাশ পায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের হামলা ও সকল কেন্দ্রীয় নেতাদের বিনা কারণে এরেস্ট করার মধ্য দিয়ে। সেই সাথে মন্দির-মূর্তি ভেঙ্গে প্রতিপক্ষের উপর দোষ চাপানো ইত্যাদি। ২০১৪ সালে ১৫৪ জন এমপি বিনা ভোটে এবং অবশিষ্ট ভোট ডাকাতি করে সরকার গঠন করে ফ্যাসিস্ট হাসিনা ফ্যাসিবাদের রাষ্ট্রীয় রূপ দেয়।
হিটলারের প্রতি তার জেনারেলদের আনুগত্য ছিল প্রবল। এদের মধ্যে ফিল্ড মার্শাল রোমেল ছিল অন্যতম যার মাঝে জার্মান জাতীয়তাবাদ ছিল তীব্র। আফ্রিকা বিজয়ের নায়ক ছিল সে। সে তার এক বন্ধূকে চিঠি লিখেছিল, তার মধ্যে “আমাদের প্রিয় ফুয়েরার কি পাগলামো শুরু করেছে” এই বাক্য ছিল। চিঠিটি হিটলারের কাছে পৌঁছে যায়। শুধুমাত্র এই বাক্য লেখার জন্য প্রচণ্ড ক্ষেপে যান এবং দূত মারফৎ চিঠি পাঠান। চিঠিটা যখন রোমেলের হাতে পৌঁছে তখন রোমেল সবে মাত্র ঘুম থেকে উঠেছে। তার প্রিয় ফুয়েরারের চিঠি খুবই আগ্রহ সহকারে খোলে। তাতে লেখা ,”প্রিয় রোমেল, তোমার জন্য আমার উপহার, তুমি পান করো।” চিঠির দূত তাকে একটি ছোট বোতল দেয়। ফিল্ড মার্শাল রোমেল তা স্বেচ্ছায় পান করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার প্রতি তার জেনারেলদেরও আনুগত্য থাকলেও ফিল্ড মার্শাল রোমেলের মত একটিও নেই। আনুগত্যের নমুনা অন্যদের জীবননাশে প্রয়োগ করেছে, নিজেদের বেলায় নয়। এরা বাংলাদেশকে পৃথিবী মনে করেছে। ফলে ৫মের হেফাজত হত্যাযজ্ঞ এদের কাছে আফ্রিকা বিজয়ের মত, ২০১৪ -২০১৮ সালে প্রায় ৬৫০ জন বিরোধী নেতা কর্মী গুম, শত শত বিরোধী নেতা কর্মী হত্যা, হাজার হাজার শত শত বিরোধী নেতা কর্মী পঙ্গু আর লক্ষ লক্ষ নেতা কর্মীকে মামলার জালে ফেলে করেছে সাজানো নির্বাচন যা ফ্যাসিস্ট হাসিনারও কাছে ইউরোপ-আফ্রিকা বিজয়ের মত। ফ্যাসিস্ট হাসিনার ফ্যাসিবাদ এতই মারাত্মক যে ফিল্ড মার্শাল রোমেলের মত মন্তব্য করার সাহস কেউ দেখাইনি। তবে বিডিআর বিদ্রোহের পর কিছু সেনা কর্মকর্তা ফ্যাসিস্ট হাসিনার প্রতি নিক্ষিপ্ত প্রশ্ন করার পরিণতি আমাদের কারোরই অজানা নয়।
হিটলারের গ্যাস চেম্বারের কথা অনেকে হয়তো জানেন না। গ্যাস চেম্বারে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা হয়েছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা অবশ্য একটি পদ্ধতিতে হত্যাযজ্ঞ চালায় নাই। বিভিন্ন স্বৈরাচারের একাধিক পদ্ধতিতে প্রয়োগ করেছে। মেক্সিকো থেকে গ্রহণ করেছে ক্রসফায়ার, হিটলারের গ্যাস চেম্বারের আদলে তৈরি করেছে আয়না ঘর, ফ্যাসিস্ট হাসিনার নিজের তৈরি করছে জঙ্গি নাটক আর হেলমেট বাহিনী। দলীয়করণের বিষয়ে হিটলার ও হাসিনার মধ্যে কিছুটা পার্থক্য না থাকলেও আত্মীয়করণ ও স্বজনপ্রীতির দিক থেকে বিশাল পার্থক্য রয়েছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা আত্মীয়করণ ও স্বজনপ্রীতির দিকটি গ্রহণ করেছে ইরাকের সাদ্দাম হোসেন ও লিবিয়ার গাদ্দাফীর সাথে প্রচণ্ড মিল পাওয়া যায়। তবে জনগণের মৌলিক অধিকার (অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা) হিটলার, মুসোলিনি, সাদ্দাম ও গাদ্দাফীর নিশ্চিত করেছিল কিন্তু হাসিনা জনগণের মৌলিক অধিকার তো দূরের কথা জনগণের কথা ভাবেননি।
অর্থপাচার ও দুর্নীতি হিটলার, মুসোলিনি, সাদ্দাম ও গাদ্দাফীর ফ্যাসিজমের আওতায় ছিল না। ফ্যাসিস্ট হাসিনার ফ্যাসিজমের মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হচ্ছে অর্থ পাচার ও দুর্নীতি। ফ্যাসিজমের সাথে অর্থপাচার ও দুর্নীতি যুক্ত করে ফ্যাসিজমের নতুন একটি রূপ দিয়েছে। অর্থাৎ বলা যায় পৃথিবীর সকল ফ্যাসিস্ট সরকারের খারাপ দিকগুলোর সমাহারের নতুন এক চেহারা ফ্যাসিস্ট হাসিনার মধ্যে বিদ্যমান।
হিটলারের পররাষ্ট্রও নীতি ও হাসিনার পররাষ্ট্র নীতির এক অদ্ভুত অবশ্যম্ভাবী সাদৃশ্য রয়েছে। হিটলারের জার্মানির সাথে অটোমান সাম্রাজ্য, জাপান ও ইতালি হিটলারের সাথে চুক্তি ছিল। সেই সাথে হিটলারের জার্মানির সাথে রাশিয়ার গোপন চুক্তি ছিল। রাশিয়া আর জাপান ছিল তখন পরস্পরের কঠিন শত্রু। যার জন্যই রাশিয়ার সাথে গোপন চুক্তি করেছিলো সাময়িক; ইউরোপ, আফ্রিকা দখল করা পর্যন্ত রাশিয়ার সাথে চুক্তি ধরে রেখেছিল। তারপরই জার্মান আক্রমণ করে রাশিয়া। পরের ইতিহাস সবার জানা। হাজার হাজার ট্রাঙ্ক-সাঁজোয়া যান, লক্ষ লক্ষ মেশিনগান, লক্ষ লক্ষ সেনা দাড়িয়ে থাকল। অসময়ে শুরু হল প্রাকৃতিক দুর্যোগ, প্রচণ্ড ঠাণ্ডা আর তুষারপাত, যার জন্য প্রস্তুত ছিল না নাৎসি বাহিনী, অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র আর ঐ সময়ের সেরা সেনাবাহিনী থাকার পর বিনা যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ সেনা প্রচণ্ড শীতে মারা পরল। এ ধরণের পরিস্থিতির জন্য হিটলার প্রস্তুত ছিল না। লন্ড-ভণ্ড নাৎসি বাহিনী। ঠিক তেমনি আমেরিকার সাথে জঙ্গি নির্মূলের অলিখিত চুক্তি করে ক্ষমতায় আসে, আমেরিকার প্রকৃত জঙ্গি নির্মূলের চাহিদা পুঁজি করে হাসিনা, এটিই ছিল তার ক্ষমতা যাওয়ার ও ধরে রাখার একটি কৌশল। ভারত আগে থেকেই তার সাথে ছিল, ছিল রাশিয়াও। আমেরিকাকে হাতে রাখতে একটার পর একটা জঙ্গি নাটক সাজাতে থাকে আর আমেরিকার শত্রু চীন-রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক গাঢ় করে। হিটলার যেমন মনে করেছিলো এখন রাশিয়া আক্রমণ করা কোন ব্যাপার না ঠিক তেমনি হাসিনাও ভেবেছে আমেরিকাকে বৃদ্ধা আঙুল দেখানো যায়। যে রাশিয়ার সাথে চুক্তির ফলে ইউরোপ, আফ্রিকা দখল নিশ্চিন্তে করতে পেরেছিল, সেই রাশিয়া আক্রমণ করে যুদ্ধে পরাজয় নিশ্চিত হয়েছিলো। ঠিক আজকের ফ্যাসিস্ট হাসিনা বাহিনীর মত। বাংলাদেশের বাইরে একটা পৃথিবী রয়েছে, সেটি ভুলে গিয়েছিল ফ্যাসিস্ট হাসিনা। অত্যাচারিত জনগণের ভয়ার্ত চিৎকার, পিতাহারা সন্তানের অশ্রু ভেজা চাপা কান্না, স্বামীহারা বিধবার বোবা মুখে বুক ফাটা চিৎকার আর সন্তানহারা পিতামাতার আকাশের পানে চেয়ে দুহাত দিয়ে মুখ চেপে চিৎকার করে সৃষ্টিকর্তাকে ডেকেছে বারবার সকাল সন্ধ্যা রাত্রিতে। তাদের ডাকে সারা দিয়েছে বিশ্ববাসী সৃষ্টিকর্তার প্রতিনিধি, পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশর জনগণের। আমেরিকার ভিসা নিষেধাজ্ঞা অনেকটাই প্রাকৃতিক দুর্যোগের মত, বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত হাসিনার ফ্যাসিজমে। কোন প্রকার যুদ্ধ ছাড়াই একটার পর একটা ভিসা শহীদ হয়ে যাচ্ছে ফ্যাসিস্ট হাসিনার সৈন্যরা, তাও আবার পরিবারসহ। এর পর যদি অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আসে ইউরোপ-আমেরিকা থেকে তাহলে রাশিয়ার লাল ফৌজের মত বেরিয়ে আসবে বিশাল বাহিনী এবং নাৎসি বাহিনীর মত নাস্তানাবুদ হতে হবে যা ফ্যাসিস্ট হাসিনার জন্য অপেক্ষমাণ।
ফ্যাসিস্ট ও ফ্যাসিজমের আরেকটি দিক হল পরকীয়া। অন্যান্য সকল ফ্যাসিস্ট শাসক পরকীয়াতে জড়ালেও হিটলার অবশ্য পরকীয়া করার সুযোগ পাননি, কারণ মৃত্যুর কয়েক ঘন্টা আগে তার প্রেমিকা ইভা ব্রাউনকে বিয়ে করেছিল। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় হিটলার একজনকে পছন্দ করতো ও প্রচণ্ড ভালোবাসতো। তার নাম ছিল গেইল। গেইল হিটলারকে পছন্দ করতো না। গেইলের প্রেমিককে হত্যা করা হয় এবং গেইলকে একটি বাসাতে বন্দি রাখা হয়। গেইলকে বিয়ে করার মনোবাসনা ছিল হয়তো যার জন্যই মাঝে মাঝে তার সাথে সাক্ষাৎ করতে যেত কিন্তু ক্ষতি করে নাই, বরং গেইলের ভালোবাসার প্রতীক্ষায় ছিল। কিন্তু গেইল আত্মহত্যা করে বসে। এ খবর যখন হিটলার পায় সেদিন প্রচণ্ড কেঁদেছিল, ওই একবারই হিটলারকে কাঁদতে দেখেছিল তার পাশে থাকা মানুষগুলো এবং প্রেমিকা হারানোর বেদনায় হিটলার আত্মহত্যার করতে যায়। মাথায় পিস্তল ঠেকিয়েছে গুলি করার জন্য আর এই সময় ইভা ব্রাউন পিস্তল কেড়ে নেয়। ফ্যাসিস্ট হাসিনার সাথে এই জায়গায় মিল আছে কিনা জানিনা। হিটলারের যে একটি প্রেমিক মন ছিল এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। প্রেমিকাকে হারানোর জন্য যে আত্মহত্যা করতে যায় তার তো ক্ষমতা হারালে আত্মহত্যা ছাড়া কিছু করার থাকে না। হিটলারেরও ছিল না। সাদ্দামের পরিণতি চোখের সামনে জ্বল জ্বল করছে আর গাদ্দাফীর পরিণতি তো আঁতকে উঠার মত। শেখ মুজিবের থেকে রাশিয়ার জারের হত্যা আরও মর্মান্তিক, জারের পোষা কুকুরকেও হত্যা করা হয়েছিলো। ফ্যাসিস্ট হাসিনার সামনে কোন পরিণতি অপেক্ষমাণ তা বলা মুশকিল; তবে ইতিহাসের বাইরে কোন ফ্যাসিস্ট সরকার ও ফ্যাসিজমের যাওয়ার সুযোগ একেবারেই নাই। ইতিহাসের বিভিন্ন ফ্যাসিস্ট সরকারের পরিণতির বিন্যাস-সমাবেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ আছে কি? সুযোগ যদি থেকে থাকে তাহলে মিথ্যা হয়ে যাবে ইতিহাস। আর টিকে যাবে ফ্যাসিস্ট ও ফ্যাসিজম, যা অসম্ভব।
লেখকঃ কামরুল হাসান