মিয়ানমারে একের পর এক এলাকা হাতছাড়া হচ্ছে জান্তা বাহিনীর। বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর কাছে অনেকটা অসহায় দেশটির সেনাবাহিনী, সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি, পুলিশসহ অন্যান্য সংস্থার সদস্যরা। গতকালও আরাকান রাজ্যের ‘আরাকান আর্মি’ মিনবিয়া নামের একটি শহর দখলে নিয়েছে। শহরটিতে সামরিক বাহিনীর দুটি সামরিক ব্যাটালিয়নও নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। এর মধ্যদিয়ে মধ্য আরাকানে অবস্থিত বেশ বড় শহর মিনবিয়ার পতন হলো। এদিকে সীমান্তের ওপারে চলমান সংঘাতের কারণে সৃষ্ট উত্তেজনা এখনো বিরাজ করছে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে। আতঙ্ক কাটেনি সীমান্ত এলাকার মানুষের মধ্যে। তবে কিছুটা শান্ত হওয়ায় গতকাল বান্দরবানের ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া ২৮টি পরিবারের ১৪০ জন নিজ গ্রামে ফিরতে শুরু করেছেন। এদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সেনাবাহিনী, বিজিপি, পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার এ পর্যন্ত ৩২৯ জন বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। সীমান্ত এলাকায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি).
থাইল্যান্ডভিত্তিক মিয়ানমারের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ইরাবতীর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের ‘আরাকান আর্মি’ মিনবিয়া নামের একটি শহর দখলে নিয়েছে। শহরটিতে সামরিক বাহিনীর দুটি সামরিক ব্যাটালিয়ন মঙ্গলবার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয় আরাকান আর্মি। এর মধ্যদিয়ে মধ্য আরাকানে অবস্থিত বেশ বড় শহর মিনবিয়ার পতন হলো। খবরে জানানো হয়, জান্তার ‘লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন ৩৭৯’ এবং ‘লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন ৫৪১’ হেডকোয়ার্টার্স দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি। এর আগে প্রায় এক মাস ধরে ওই শহরটিতে দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ চলছিল। মিনবিয়া শহরের প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে স্থানীয় মিডিয়া জানিয়েছে, দুটি সামরিক ঘাঁটি দখলের সময় কয়েক ডজন সেনা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা বিদ্রোহীদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। তাদের বাঁচাতে জান্তা সরকার যুদ্ধবিমান এবং গানবোট পাঠালেও শহরটির নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারেনি সামরিক সরকার। গত ২৮শে জানুয়ারি মিনবিয়ার প্রথম সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ‘লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন ৩৮০’-এর সদর দপ্তর দখল করেছিল বিদ্রোহীরা। জানুয়ারি মাসে শহরটিকে ধরে রাখতে মিনবিয়াতে প্রচুর সেনা মোতায়েন করেছিল জান্তা। তাদের নদীপথে সেখানে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু আরাকান আর্মির অতর্কিত হামলায় তারা পরাজিত হয়। বিদ্রোহীরা জানুয়ারির শেষের দিকে জান্তা সরকারের পাঠানো গোলাবারুদ এবং খাদ্যের বড় চালানও জব্দ করে। মিনবিয়াতে নিজেদের ঘাঁটিগুলো রক্ষার শেষ চেষ্টা হিসেবে শহরটির ওপারে এবং আশেপাশের বেশ কিছু গ্রামে স্থল, সমুদ্র এবং আকাশ থেকে বোমাবর্ষণ করে জান্তা বাহিনী। মঙ্গলবার রাখাইন মিডিয়া জানিয়েছে যে, মিনবিয়া এখন জান্তার শাসনমুক্ত জনপদ।
আরাকান আর্মি আরও জানিয়েছে যে, তাদের সেনারা তিন দিন ধরে যুদ্ধের পর মঙ্গলবার বাংলাদেশের সীমান্তে মংডু এলাকায় জান্তার সীমান্তরক্ষী ঘাঁটি ‘টাং পিও’ দখল করেছে। রোববার থেকে টাং পিও দখলে যুদ্ধ চলছিল। সে সময় কয়েক ডজন জান্তা সেনা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এখন পর্যন্ত শত শত জান্তা সদস্য বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। মঙ্গলবার রাখাইন রাজ্যের ম্রাউক-ইউ, কিয়াউকতাও, রামরি, অ্যান এবং মাইবোন শহরে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। আরাকান আর্মি গত ১০ দিনে উত্তর রাখাইনে আরও দুটি জান্তা ঘাঁটি দখল করেছে। আরাকান আর্মি হলো ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের’ সদস্য। এই অ্যালায়েন্স গত বছরের ২৭শে অক্টোবর উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যে জান্তা-বিরোধী অপারেশন শুরু করে। অপারেশনের অংশ হিসেবে তারা শান রাজ্যের বেশির ভাগ দখল করে নিয়েছে। এরমধ্যে আছে ২০টি শহর এবং চীনের সঙ্গে থাকা গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য পথ। ওই অপারেশনের অধীনেই আরাকান আর্মি ১৩ই নভেম্বর থেকে রাখাইন রাজ্য এবং প্রতিবেশী চিন রাজ্যের পালেতওয়া শহর জুড়ে একটি বড় আকারের আক্রমণ শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত তারা জান্তার হাত থেকে ১৭০টি ফাঁড়ি দখলে নিয়েছে। এ ছাড়া মিনবিয়া, পাকতাও এবং পালেতওয়ার মতো বড় শহরগুলোও দখলে নিয়েছে তারা।
এদিকে কিছুটা শান্ত হয়ে উঠায় ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া ২৮টি পরিবারের ১৪০ জন নিজ গ্রামে ফিরতে শুরু করেছেন। গতকাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ধুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ। তিনি বলেন, দুইদিনে ধরে ঘুমধুম সীমান্ত এলাকা অনেকটা স্বাভাবিক আছে। গোলাগুলির তেমন কোনো শব্দ শোনা যায়নি। গত কয়েকদিন ধরে সীমান্তের ওপারে গোলাগুলির কারণে আতঙ্কে ছিলেন এলাকাবাসী। তাই জেলা প্রশাসনের নির্দেশে আমরা সীমান্ত লাগোয়া গ্রামের বাসিন্দাদের নিরাপদে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলি।
ওদিকে গতকালও মিয়ানমারের অভ্যন্তরে রাষ্ট্রীয় জান্তা বাহিনীর সঙ্গে জাতিগত বিদ্রোহীদের চলমান সংঘর্ষে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন আরও ৬৩ জন। তাদের মধ্যে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) সদস্য, সেনাসদস্য, পুলিশ সদস্য, ইমিগ্রেশন সদস্য ও বেসামরিক নাগরিক রয়েছেন। গতকাল বিজিবি সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, নতুন করে আরও ৬৩ জন এসেছেন। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া বিজিপিসহ অন্যান্য বাহিনীর ৩২৭ সদস্যকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়েছে বিজিবি। এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। বুধবার বিজিবি’র কক্সবাজার রিজিয়নের আওতাধীন বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত পরিদর্শনের সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিজিবির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে ধৈর্য ধারণ করে, মানবিক থেকে এবং আন্তর্জাতিক সুসম্পর্ক বজায় রেখে পরিস্থিতি মোকাবিলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, অবৈধভাবে আর একজনকেও বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়া হবে না। দেশ মাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সীমান্তে উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত রয়েছে বলেও তিনি দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
কূটনৈতিক রিপোর্টার জানান, সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে সৃষ্ট আচমকা উদ্বেগের বিপরীতে বাংলাদেশের ‘শান্তিপূর্ণ কৌশল’ কী হওয়া উচিত তা নিয়ে রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক অঙ্গনে অন্তহীন আলাপ-আলোচনা চলছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বুধবার এ নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সব অরগানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব জানান, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাত তথা যুদ্ধের স্পিলওভার অ্যাফেক্ট অর্থাৎ প্রভাব যেন বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে না আসে এটাই ঢাকার একমাত্র চাওয়া। মিয়ানমারের সংঘাতে বাংলাদেশের করণীয় কী হওয়া উচিত তা নিয়ে নানা মত রয়েছে। তবে একটি বিষয়ে সব মত ও পথের লোকজন একমত যে, এ যুদ্ধের নানামুখী প্রভাব স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের ক্ষতি করবে। রোহিঙ্গা ঢলের আশঙ্কা তো আছেই। নিরাপত্তা বিশ্লেষক ড. এম সাখাওয়াত হোসেন অনেক দিন ধরে বলে আসছেন মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সামনে বড় ধরনের ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে। তার মতে, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা ও রোহিঙ্গা প্রশ্নে শুধু দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার চেষ্টা এবং চীনের ওপর নির্ভরতা যেহেতু কাজে দিচ্ছে না, তাই কেন্দ্রের দাবিদার এনইউজি (ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট) ও আরাকান আর্মি তথা তাদের রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ ও সম্পর্ক তৈরির বিষয়ে ঢাকাকে এখন ভাবতে হবে।
তিনি মনে করেন, রাখাইন অঞ্চলে যা ঘটেছে এবং ঘটবে, তার প্রভাব বাংলাদেশের ওপর পড়বে। বিভিন্ন সময় মিয়ানমার সরকারের জাতিগত নির্মূল প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বাংলাদেশে প্রায় ১২ থেকে ১৫ লাখ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু আশ্রয় নিয়েছে এমনটা জানিয়ে সম্প্রতি এক লেখায় তিনি উল্লেখ করেন- বাংলাদেশ সরকার দীর্ঘদিন ধরে প্রচেষ্টা চালিয়েও এদের দেশে ফেরত পাঠাতে পারেনি। উত্তর রাখাইনে আরাকান আর্মির শক্ত অবস্থান বাংলাদেশকে নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে বলে মনে করেন তিনি। ওই বিশ্লেষক বলেন, রাখাইন অঞ্চলে ভবিষ্যতে আরাকান আর্মি ও ইউএএল যে বড় ধরনের প্রভাববলয়ে থাকবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রতিষ্ঠিত সংবাদ মাধ্যম ইরাবতী’র সর্বশেষ রিপোর্ট বলছে, রাখাইন প্রদেশের উত্তরাঞ্চলের এক শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে লড়াইরত আরাকান আর্মি। মিনবিয়ায় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর শেষ দুটি ব্যাটালিয়নের ঘাঁটি তারা দখলে নিয়েছে। এ সময় মিয়ানমার বাহিনীর কয়েক ডজন সদস্য ও তাদের পরিবার আরাকান আর্মির কাছে আত্মসমর্পণ করেছে।
সেনা ও সীমান্তরক্ষীদের ফেরানো নিয়ে ভিন্নমত: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে চলমান সংঘাত থেকে প্রাণে বাঁচতে দেশটির সেনাবাহিনী, সীমান্তরক্ষী বাহিনীসহ (বিজিপি) বিভিন্ন সংস্থার এ পর্যন্ত ৩২৯ জন সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। আন্ত মন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে তিনি এ তথ্য জানান। ওই সদস্যদের ফেরানোর পথ ও পন্থা নিয়ে ঢাকা ও নেপিড’র মধ্যে ভিন্ন মত চলছে। মিয়ানমার তাদের নাফ নদ হয়ে ফিরিয়ে নিতে চেয়েছিল। বিকল্প পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ তাদের আকাশপথে ফেরত পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু মিয়ানমার ওই প্রস্তাবে রাজি হয়নি।
দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বাংলাদেশ নাফ নদের পরিবর্তে আকাশপথে বান্দরবানে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের লোকজনকে ফেরত দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের আকাশপথে ফেরাতে চায় না। এই পরিস্থিতি নিজেদের আশ্রিত লোকজনকে সমুদ্রপথে নেয়ার বিষয়টি মিয়ানমার সামনে এনেছে। বঙ্গোপসাগর হয়ে মিয়ানমারের লোকজনকে কীভাবে ফেরত নেয়া হবে জানতে চাইলে এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, মিয়ানমার নৌবাহিনীর নৌযান বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেবে। এর আগে আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। আশা করা যায়, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেবে।
এদিকে বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, মিয়ানমারের ৩২৯ জন নাগরিককে কীভাবে ফিরিয়ে দেয়া যাবে সেটাই আমাদের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল। আলোচনায় মিয়ানমারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত যুক্ত ছিলেন। মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি আজ দেখা করছেন। সেখানে তিনি সীমান্তের ঘটনাবলীর প্রতিবাদ পুনর্ব্যক্ত করবেন। একই সঙ্গে যারা এখানে আছেন তাদের কীভাবে ফিরিয়ে নেবেন সেটা জানতে চাইবেন। এখানে যে সব লোকজন আছেন তাদের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তবে আমরা তাদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে আকাশপথে অগ্রাধিকার দিয়েছিলাম। তবে তারা হয়তো সমুদ্র দিয়ে তাদের ফেরত নেয়ার ব্যাপারে আলোচনায় তুলবেন বলে আমরা ভাবছি। এসব লোকজনের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে যেটা সবচেয়ে নিরাপদ এবং দ্রুততম সময়ে করা যায় সেটাই আমাদের অগ্রাধিকার থাকবে।
মিয়ানমারের লোকজনকে এখন কোথায় রাখা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি জানান, এদের এখন বিজিবি’র তত্ত্বাবধানে দুটি স্কুলে রাখা হয়েছে। সংখ্যা বাড়লে অন্তর্বর্তীকালীন শিবিরে নেয়া হবে। বিজিপি’র একটা ব্যাটালিয়নের বড় সংখ্যক বিশেষ করে তাদের লেফটেন্যান্ট কর্নেলসহ অনেকেই এবং আরেকটা ব্যাটালিয়নের অর্ধেক সদস্য চলে এসেছেন। সব মিলিয়ে পাঁচ থেকে ছয়শ’ হতে পারে সংখ্যাটা। আরও একশ’ সদস্য আসতে পারে বলে আমাদের অনুমান। বাংলাদেশ বিবদমান পক্ষগুলোর একটির প্রতি ঝুঁকে পড়েছে- এমন কোনো বার্তা কেউ নিচ্ছে কিনা জানতে চাইলে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আমরা তো মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করছি। আমাদের সঙ্গে নেপিড’তে, ঢাকায় সবখানেই তাদের যোগাযোগ আছে।
এই মুহূর্তে কোনো ভুল বুঝাবুঝির অবকাশ দেখছি না। সবাইকে স্পষ্ট করেই বলতে চাই মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংকট যেন আমাদের না পোহাতে হয় সেটা আমাদের কাম্য। সেখানকার সংঘাতে এখানে প্রচুর মর্টারশেল পড়ছে, দু’জন মারা গেছেন। সীমান্তে উত্তেজনা ও ভয়ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে সেটারও অবসান চাই আমরা। আমরা এমনিতেই যথেষ্ট ঝামেলায় আছি। প্রত্যাবাসন ব্যাহত আছে। নতুন করে রোহিঙ্গা নিতে চাই না। রাখাইনের বর্তমান পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকি তৈরি করেছে কিনা এই প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সরাসরি কোনো ঝুঁকি দেখছি না। যদি তাদের কোনো বিমান হামলা করে বা সম্ভাবনা থাকে আকাশসীমা লঙ্ঘনের। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- ধৈর্য ধরতে হবে। এমন কোনো কিছু করবো না যাতে পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। বিজিবি’র সর্বোচ্চ প্রস্তুতি আছে যাতে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয়।