ক্ষমতাসীন সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ ও সংসদ ভেঙে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন না দিলে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম না কমালে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা। সেইসঙ্গে বিদেশি আগ্রাসন ও সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যার প্রতিবাদে সকলকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান বক্তারা। আজ রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সমাবেশে জোটের শীর্ষ নেতারা এই আহ্বান জানান।
“ভারতীয় আগ্রাসন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সহ সকল রাজবন্দীর মুক্তি, সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি” শীর্ষক এই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে ১২ দলীয় জোট। সমাবেশ শেষে প্রেসক্লাবের সামনে থেকে মিছিল বের করেন জোটের নেতাকর্মীরা। নেতাকর্মীদের গায়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতের আগ্রাসন বন্ধ ও পণ্য বর্জন সম্বলিত রঙিন টিশার্ট পড়া ছিল। হাতে ছিল ‘রিচব্যান্ড‘। অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্ব করার কথা ছিল। কিন্তু তিনি অসুস্থ হওয়ায় আসতে পারেননি। পরে বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিমের সভাপতিত্বে ও জাতীয় ছাত্র সমাজের সভাপতি কাজী ফয়েজের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন ১২ দলের বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান এডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাতীয় পার্টির মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি মহিউদ্দিন ইকরাম, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন ফারুক রহমান, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি- জাগপার সিনিয়র সহসভাপতি রাশেদ প্রধান, কল্যাণ পার্টি একাংশের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. শামসুদ্দিন পারভেজ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের জাকির হোসেন, কল্যাণ পার্টির আবু হানিফ, লেবার পার্টির শরিফুল ইসলাম, জাতীয় দলের আবুল মনসুর ভুইয়া, ছাত্র জমিয়তের আল-আদনান প্রমুখ।
জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, প্রতিবেশী দেশ ভারত আমাদের বাংলাদেশকে করদ রাজ্যে পরিণত করেছে। সিকিম বানানোর চক্রান্ত চলছে।
সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের পাখির মতো গুলি চালিয়ে হত্যা করছে। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ তাদের বিরুদ্ধে বয়কটের ডাক দিয়েছে। তারা কখনও বাংলাদেশকে সিকিম হতে দিবে না। ইনশাআল্লাহ আমরা সবাইকে নিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে আগ্রাসন প্রতিরোধ করবো। আমাদের আন্দোলন চলছে এবং অব্যাহত থাকবে।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন বলেন, স্বাধীনতার ৫২ বছরে প্রতিবেশী দেশের আগ্রাসনে বাংলাদেশের বৃহৎ শিল্প, চিনি শিল্প, চামড়া শিল্প ধ্বংস হয়ে গেছে। গার্মেন্টস শিল্প ধ্বংস হওয়ার উপক্রম। আমি সবাইকে আহ্বান জানাবো তাদের পণ্য বর্জনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে গণজাগরণ সৃষ্টি করুন। সেইসঙ্গে সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিক হত্যার বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহিউদ্দিন ইকরাম বলেন, কোনো ভিন দেশের তাঁবেদারি আমরা মানিনা। মানবোনা। সেইসঙ্গে রোজার আগে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম না কমালে রমজান মাসেও আন্দোলন চলবে, ঠেকানো যাবে না। এছাড়া বেগম খালেদা জিয়া সহ গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তি দিয়ে ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচন বাতিল করে নতুন নির্বাচন দিতে হবে। তা না হলে আন্দোলন আরও জোরদার করা হবে।
লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন ফারুক রহমান বলেন, গত ৭ জানুয়ারি একটি পাতানো নির্বাচনে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেছে। তারা মূলত প্রতিবেশী দেশ ভারতের সহযোগিতায় ক্ষমতায় এসেছে। ভারত যে প্রেসক্রিপশন দেয় সে মোতাবেক আওয়ামী লীগ পরিচালিত হয়। এটা একটা পুতুল সরকার। বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও ভোটাধিকার ফেরাতে আমাদের আন্দোলন চলছে এবং চলবে। আমরা বাংলাদেশের জনগণের আসল স্বাধীনতার স্বাদ ফিরিয়ে আনতে চাই। ছাত্রলীগের নেতারা কর্তৃক বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ ও অন্যায় কর্মকাণ্ডের নিন্দা ও বেগম খালেদা জিয়াসহ গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তির জানান তিনি।
রাশেদ প্রধান বলেন, আন্দোলন শেষ হয় নাই। নতুনভাবে সূচনা হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ ভারতীয় আগ্রাসন মানবেনা। এই সরকার বাংলাদেশের জনগণের কাঁধের ওপর দিয়ে যায় ইলিশ মাছ ও শাড়ি। বিনিময়ে তারা বাংলাদেশের জনগণের কাঁধে তুলে দিচ্ছে লাশের কফিন। এই হলো কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার নমুনা। এসবের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ফিরিয়ে আনা হবে।
শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, আমরা রক্ত দিয়ে কেনা স্বাধীনতা কারো হাতে তুলে দিতে পারিনা। প্রতিবেশী দেশের সরকার আমাদের প্রিয় বাংলাদেশে গণতন্ত্রবিহীন সরকার ব্যবস্থা কায়েম করেছে। এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে আমরা সবাই তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবো। তাদের পণ্য কিনবো না। তবে বাংলাদেশে ভারতের সবচেয়ে বড় প্রোডাক্ট শেখ হাসিনা ও তাদের দোসরদের বয়কট করবো। তাই না হলে আল্লাহর কাছে দায়ী থাকবো। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করবো ইনশাআল্লাহ।
অন্য বক্তারা বলেন, প্রতিবেশী দেশ ভারত বাংলাদেশকে নানাভাবে শোষণ করছে। তারা আমাদের মূল্যবান ইলিশ মাছ নিয়ে যায়। তারা আমাদের থেকে শুধু নিয়ে যাচ্ছে। করিডোর দিয়েছি, ট্রানজিট সুবিধা দিয়েছি।বিনিময়ে তারা সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করছে। ফেলানীর লাশ উপহার দিয়েছে। তিস্তার পানি আটকে রেখেছে। তারা সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালাচ্ছে। ভারত হচ্ছে একটি অশুভ দেশ। এইসব করার সাহস পাচ্ছে বাংলাদেশের ফ্যাসিস্ট ডামি নির্বাচনের আওয়ামী সরকারের কারণে। অথচ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালে ভারত নাকি সহায়তা করেছিল। কিন্তু কোনো আসল বন্ধু তো এমন খারাপ আচরণ করতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে তারা নিজেদের স্বার্থে বাংলাদেশের পাশে ছিল। বিনিময়ে অসংখ্য সম্পদ লুট করেছে। এসবের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক সবাইকে সম্মিলিতভাবে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। একইসঙ্গে পণ্য বর্জনের আহ্বান জানান বক্তারা।
এই সাক্ষীগোপাল সরকার কে তখোর আন্দলন করে বিদায় করতে হবে। হাতে আরকোন সময় নাই, যার যাকিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থাক। প্রতিটা রাস্তাঘাট, অলি গলি বন্ধ করে দিন। এখন আর পিছনে তাকানোর সময় নেই। সর্বাত্বক আন্দোলন গরে তুলতে হবে। যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাক। ইনশাআল্লাহ গনতন্ত্রের বিজয় আসবে।