সরকার পতনের দাবিতে টানা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে রয়েছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে ৩ দফায় ৪ দিন হরতাল ও ১১ দফায় ২২ দিন অবরোধ দিয়েছে তারা। বুদ্ধিজীবী ও বিজয় দিবস উপলক্ষে ৪ দিনের বিরতি দিয়ে নতুন কর্মসূচি নিয়ে ফের মাঠে নামছে বিরোধীরা। ১৮ই ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর দিন থেকেই শুরু হবে কর্মসূচি। ৭ই জানুয়ারি ভোটগ্রহণের দিন পর্যন্ত টানা কর্মসূচি থাকবে। রাজনৈতিক সভা-সমাবেশের ওপর ইসির নিষেধাজ্ঞাকে আমলে নিচ্ছে না বিরোধী দলগুলো। আন্দোলন আরও জোরদার হবে জানিয়েছেন তারা। এদিকে এতদিন বিএনপি-জামায়াত আলাদা কর্মসূচি পালন করলেও ১৮ই ডিসেম্বরের পর থেকে একসঙ্গে কর্মসূচি পালনের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। সমন্বিত শক্তি নিয়ে রাজপথে কর্মসূচি পালন করতে চায় দল দুটি।
এ ছাড়া জামায়াতের সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের দূরত্বও কমেছে। ১৮ই ডিসেম্বরের পর কয়েকদিন বিএনপি ও সমমনা ৩৬টি দলের সঙ্গে যুগপৎভাবে কর্মসূচি দেবে জামায়াত। আন্দোলনের চূড়ান্ত মুহূর্তে বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা দলগুলোর সঙ্গে একমঞ্চে উঠতে পারে জামায়াত। তবে নির্বাচন বর্জন করলেও জামায়াতের সঙ্গে একমঞ্চে উঠতে এখনো রাজি হয়নি ইসলামী আন্দোলন। তারা রাজপথে আলাদা কর্মসূচি পালন করবে। ইতিমধ্যে ১৯শে ডিসেম্বর শ্রমিক ও পেশাজীবীদের সঙ্গে আলোচনা সভার কর্মসূচি দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন। সরকারবিরোধী কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকবে সিপিবি-বাসদসহ কয়েকটি বাম দলও।
এদিকে নতুন কর্মসূচি নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। বৈঠকের পর বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানিয়েছেন, বৈঠকে আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ও জামায়াত ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ১৮ই ডিসেম্বর থেকে ৭ই জানুয়ারি পর্যন্ত এই ২০ দিনকে চূড়ান্ত ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হলে ঢাকাসহ সারা দেশে আরও ব্যাপকভাবে আন্দোলন জোরদার করতে হবে। আপাতত আগামী ১৮ই ডিসেম্বর থেকে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ডিসেম্বরের শেষদিকে আন্দোলন গতি বাড়ানো হবে। সমন্বিতভাবে আন্দোলন করে সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হবে।
এদিকে ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসের র্যালিতে ব্যাপক সমাগমের প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। ইতিমধ্যে র্যালির অনুমতির জন্য ডিএমপিতে চিঠিও দিয়েছে। গতকাল পর্যন্ত ডিএমপি থেকে অনুমতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। তবে বিএনপি’র একটি সূত্র জানিয়েছে, ডিএমপি থেকে হয়তো আনুষ্ঠানিক অনুমতি না দিলেও মৌখিক অনুমতি দেয়া হতে পারে। সেজন্য নয়াপল্টন কার্যালয় থেকে বর্ণাঢ্য বিজয় র্যালি করবে তারা। দুপুর ১টায় নয়াপল্টন থেকে র্যালি শুরু হয়ে মালিবাগ, মৌচাক হয়ে মগবাজারে গিয়ে শেষ হবে।
বিএনপি’র সিনিয়র এক নেতা জানান, জামায়াত ছাড়া যুগপৎ আন্দোলনে থাকা অন্য কোনো দলের দেশব্যাপী মাঠের কর্মসূচি পালনে কর্মীবাহিনী নেই। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারকে বড় ধাক্কা দিতে হলে জামায়াতের সঙ্গে সমন্বিত শক্তি নিয়ে মাঠে নামতে হবে। ইতিমধ্যে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপি’র নীতি-নির্ধারণী ফোরামের একাধিক বৈঠক হয়েছে। নীতিগতভাবে একমঞ্চে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকা মহানগর বিএনপি এবং ঢাকা মহানগর জামায়াত আন্দোলন ও জোট নিয়ে ভার্চ্যুয়ালি সভা করেছে। সভায় দল দুটির মহানগরের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন মহানগর ও অধিকাংশ জেলায় বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। ওইসব বৈঠকে আন্দোলন সমন্বয় করার জন্য জেলায় জেলায় দুদলের সমন্বয় কমিটি করার সিদ্ধান্ত হয়।
বিএনপি’র নীতি-নির্ধারণী ফোরামের এক নেতা জানান, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র পর দেশের তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি জামায়াত। সারা দেশে জামায়াতের সাংগঠনিক ভিত্তি অনেক মজবুত। বিএনপি’র সঙ্গে একত্রে রাজপথে কর্মসূচি পালন করলে ভালো ফল আসবে।
বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকার পতনের দাবিতে সকল দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলগুলোকেই আন্দোলন করা উচিত। জামায়াত তো ইতিমধ্যে রাজপথে আছে। তবে, তাদের সঙ্গে বিএনপি কোন ফরমেটে ঐক্য হবে তা আমার জানা নেই।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান মানবজমিনকে বলেন, নতুন কর্মসূচির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি আরও বলেন, আমরা দেশের মানুষের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছি। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের জনগণ এই সরকারকে প্রত্যাখ্যান করেছে। ৭ই জানুয়ারি নির্বাচন হবে না। আওয়ামী লীগ নির্বাচন করে ফেলেছে। শুধু ফলাফল ঘোষণা করবে। তফসিল নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। আমরা সত্যের পথে আছি। জনগণের সঙ্গে আছি।