শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী স্টাইলের ভোট প্রত্যাখ্যান করেছে মানুষ

0
111

কেন্দ্রে না গিয়ে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ স্টাইল ভোট নাটক প্রত্যাখ্যান করেছে দেশের মানুষ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ গঠন উপলক্ষে আয়োজিত শেখ হাসিনার একতরফা ভোটে মানুষ অংশ নেয়নি। শেখ হাসিনার অনুগত প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন, বিরোধী দল গুলো ভোটে অংশ না নিলেও মানুষ ভোট দিতে আসলেই অংশগ্রহণ নির্বাচন হবে। কাজী হাবিবুল আওয়ালের নেতৃত্বে গঠিত কমিশন জানিয়েছেন বিকাল ৩টা পর্যন্ত ২৭.১৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। অথচ, সারা দেশের কেন্দ্র গুলোর চিত্র ছিল ভিন্ন। দেশের কোন জায়গায় ভোটকেন্দ্রে স্বত:স্ফুর্তভাবে ভোটার উপস্থিতি দেখা যায়নি। বরং আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সন্ত্রাস ও ভোট ডাকাতির পুরাতন চিত্রই দেখা গেছে ভোটকেন্দ্রে। প্রতিবাদে বিভিন্ন জায়গায় দলবেঁধে ডামি প্রার্থীরা ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।

বিকাল ৩টা ২০ মিনিটে ইসির জনসংযোগ শাখার পরিচালক মো. শরিফুল আলমের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বিকাল ৩টা পর্যন্ত ঢাকা বিভাগে ২৫ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে ২৭ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে ২৬ শতাংশ, খুলনা বিভাগে ৩২ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে ৩১ শতাংশ, সিলেট বিভাগে ২২ শতাংশ, রংপুর বিভাগে ২৬ শতাংশ, ময়মনসিংহ বিভাগে ২৯ শতাংশ ভোট পড়েছে।
এর আগে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৮ দশমিক ৫০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানান নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম।

শেখ হাসিনা অনুগত কাজী হাবিবুল আওয়ালের কথাই যদি ধরে নেওয়া হয়, মানুষ ভোটে গেলেই অংশগ্রহণমুলক নির্বাচন হবে। এখন তো খোদ নির্বাচন কমিশনই স্বীকার করলেন মাত্র ২৭.১৫ শতাংশ মানুষ ভোটে গেছে। যদিও প্রকৃত সংখ্যা ১০ শতাংশের নিচে বলেই মনে করেন ভোটের প্রতি নজর রাখা সাধারণ মানুষ। দেশের কোন জায়গায় কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায়নি। কোন কোন কেন্দ্রে কুকুর এবং ছাগলের ঘোরাঘুরির চিত্র দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

এদিকে শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী আওয়ামী লীগ ও তাঁর ফ্যাসিবাদের সহযোগী রাজনৈতিক দল গুলোর ডামি প্রার্থীরা ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন বিভিন্ন জায়গায়। কোন কোন আসনে দলবেঁধে তারা ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। এরমধ্যে কক্সবাজার-১ চকরিয়া-পেকুয়া আসনের ট্রাক মার্কার স্বতন্ত্র প্রার্থী, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদ্য বহিষ্কৃত সভাপতি, বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আলম, কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু-ঈদগাঁও) আসনের ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী হাইকোর্টের আওয়ামী আইনজীবী ফোরামের নেতা ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ ও কক্সবাজার -৪ (উখিয়া -টেকনাফ) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল বশর এবং উখিয়া টেকনাফের জাতীয় পার্টির প্রার্থী নুরুল আমিন সিকদার ভূট্টো ভোট বর্জন করেছেন। পৃথক সাংবাদিক সম্মেলনে ৪ প্রার্থী পুনঃনির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন।

মৌলভীবাজারের দুটি আসনের ৩ প্রার্থী ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ভোট কারচুপি, জালিয়াতি, কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেয়া, পেশি শক্তির প্রয়োগসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেন এই তিন প্রার্থী। মৌলভীবাজার-৩ (সদর ও রাজনগর) আসনের ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী এডভোকেট আবু বকর ভোট বর্জন করে গণমাধ্যমকর্মীদের জানান রাজনগরের দক্ষিণ ঘরগাঁও কেন্দ্রে এক ব্যক্তি একাধিকবার সিল মারছেন এমন দৃশ্য দেখে আমি প্রতিবাদ করলে পেছন দিক থেকে একজন এসে আমাকে ধরে বাহিরে বের করে দেয়। তিনি অভিযোগ করে বলেন এই দুই উপজেলার প্রতিটি কেন্দ্রে একইভাবে জালিয়াতি ও অনিয়ম করে ভোট কাস্ট করা হয়। একই অভিযোগে ভোট বর্জন করেন ওই সংসদীয় আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. আলতাফুর রহমান। এদিকে মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনের তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী সাবেক এমপি এম এম শাহীন একই অভিযোগ এনে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।

সাধারণ মানুষ ভোট প্রত্যাখ্যান করেছে কেন্দ্রে না গিয়ে। আওয়ামী লীগের ডামি প্রার্থী ও সহযোগী রাজনৈতিক দল গুলোর প্রার্থীরা ভোট বর্জন করেছে সন্ত্রাস ও ভোটচুরির প্রতিবাদ করে। মূলত শেখ হাসিনার ডামি প্রার্থী ছিল সুষ্ঠু ভোট দেখানোর একটি অপকৌশল। এই অপকৌশল এখন শেখ হাসিনার জন্যই বুমেরাং হয়েছে। ডামি প্রার্থীরাই এখন ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়ে বিরোধী দলের দাবীকে সত্য প্রমান করেছেন।

শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, এটা বিরোধী দল গুলো বারবার বলে আসছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবীতে বিরোধী দল গুলো এই ভোটে অংশ নেওয়া থেকে বিরত ছিল। বিরোধী দল গুলো সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল শেখ হাসিনার ঘোষিত ডামি নির্বাচনে ভোট দিতে না যাওয়ার জন্য। সাধারণ মানুষ ভোট দিতে যায়নি। কারণ, মানুষ এই ভোটের ফলাফল আগে থেকে জানেন।

মানুষের প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে সম্পন্ন হওয়া ভোটের পর শেখ হাসিনার গণশত্রুর তালিকায় কারা অন্তর্ভুক্ত হন সেটা দেখার অপেক্ষায় মানুষ।

লেখকঃ সিনিয়র সাংবাদিক, অলিউল্লাহ নোমান

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here