শুরু হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা, তুরাগতীরে মুসল্লিদের ঢল

0
75

গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) ফজরের নামাজের পর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। এরই মধ্যে সারা দেশ থেকে আগত মুসল্লিদের ঢল নেমেছে। বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনে চড়ে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসছেন তারা। নিজ নিজ আমিরের তত্ত্বাবধানে অবস্থান নিয়েছেন ইজতেমা ময়দানের নির্ধারিত খিত্তায়। আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মুসল্লিরা বুধবার (৩১ জানুয়ারি) থেকেই আসতে শুরু করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে সড়ক, মহাসড়কে ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের ঢল দেখা গেছে।

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে তাবলিগ জামায়াতের শীর্ষ মুরব্বি মাওলানা জোবায়ের অনুসারীরা এ পর্বে অংশ নিচ্ছেন। ১০৫টি খিত্তায় বিভক্ত ইজতেমা ময়দানে মুসল্লিরা তাদের জন্য নির্ধারিত স্থানে অবস্থান নিয়েছেন। মুসল্লিদের সুযোগ সুবিধায় পানি, বিদ্যুৎ,গ্যাস, টয়লেট ও পয়ঃনিষ্কাশনসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ছাড়াও মুসল্লিদের চিকিৎসায় টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বাড়তি উদ্যোগ।

মুসল্লিরা বলছেন, ইজতেমার সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। মহান আল্লাহতালাকে রাজি খুশি করে যেন পরকালে শান্তি পেতে পারি এ নিয়তে ইজতেমায় এসেছি আমরা।

এদিকে শীতের প্রকোপের মধ্যে বুধবার (৩১ জানুয়ারি) এক পসলা বৃষ্টিতে ভোগান্তি বেড়েছে মুসল্লিদের। বিশেষ করে ময়দানের পূর্ব পাশে ও মহাসড়কে পাশে অবস্থান নেওয়া মুসুল্লিরা বেশি বিপাকে পড়েন।

মুসল্লিরা আরও বলছেন, প্রায় আধ ঘন্টা বৃষ্টিপাতে অনেকের জামা-কাপড় ভিজে গেছে। পরে পলিথিন টাঙিয়ে বৃষ্টি থেকে তাদের মালপত্র রক্ষা করেন। এদিকে অনেকে বিশ্ব ইজতেমার মূল ময়দানে জায়গা না পেয়ে এর প্রবেশপথের দুইপাশে অবস্থান নিয়েছেন। কেউ কেউ কামারপাড়া সড়কে অবস্থান করছেন।

বিশ্ব ইজতেমার আয়োজক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী আব্দুন নূর জানান, দেশ-বিদেশের লাখো মুসলিম জনতার পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীর। ইতিমধ্যে পুরো ময়দান পূর্ণ হয়ে গেছে। জিকির-আসকারে সময় পার করছেন মুসুল্লিরা। তাদের ধর্মীয় কাজে মনোনিবিষ্ট করতে ও ময়দানে উপস্থিত মুসল্লিদের জমিয়ে রাখতে মুরব্বিরা বৃহস্পতিবার বাদ ফজর থেকে প্রাথমিক বয়ান দিচ্ছেন।

ইজতেমার আয়োজক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী মো. মাহফুজ জানান, বিশ্ব ইজতেমার মূল পর্ব শুক্রবার থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বুধবার থেকেই দলে দলে তাবলিগ মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে এসে অবস্থান নিয়েছেন। মুসল্লির দল মাঠের ভেতরে ঢুকে নিজ নিজ জেলার খিত্তায় অবস্থান নিতে শুরু করেছেন।

আয়োজকরা বলছেন, বিশ্ব ইজতেমার প্রথম দিন দেশের বৃহত্তম জুমার নামাজ হবে। দুপুর দেড়টার দিকে কাকরাইলের মুরব্বি মাওলানা জোবায়ের এ জুমার নামাজে ইমামতি করবেন। বৃহত্তম জুমার এ নামাজে অংশ নিতে প্রতি ইজতেমায় তাবলিগের মুসল্লি ছাড়াও গাজীপুর ও আশপাশের জেলা থেকে বৃহস্পতিবার রাতেই ইজতেমা ময়দানে অবস্থান নিতে থাকেন।

পুরো ইজতেমা ময়দান ছাপিয়ে কামারপাড়া, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ আশপাশের অলিগলিতেও কাতারবদ্ধ হয়ে জুমার নামাজে অংশ নেবেন মুসল্লিরা। ময়দানের পশ্চিমে তুরাগ নদের পূর্ব পাশে নামাজের মিম্বর এবং উত্তর-পশ্চিম পাশে বিদেশি মুসল্লিদের কামড়ার পাশে বয়ান মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে। নামাজের মিম্বর থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ইমাম এবং বয়ানের মঞ্চে বয়ানকারী অবস্থান করেন। এখান থেকেই আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করা হবে।

প্রায় ১ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের মাঠটিতে বাঁশের খুঁটির ওপর ছাউনির মধ্যে মুসল্লিদের বয়ান শোনার জন্য লাগানো হয়েছে বিশেষ ছাতা মাইক। লাগানো হয়েছে পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক বাতি। দেশীয় তবলিগের মুসল্লিদের জন্য জেলাওয়ারি আলাদা খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে।

বিদেশি তবলিগ অনুসারী মুসল্লিদের জন্য মাঠের উত্তর-পশ্চিম কোণে আধুনিক সুবিধাসংবলিত আলাদা থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এদিকে, তাবলিগ জামাতের নিজেদের মধ্যে বিরোধের কারণে এবারও বিশ্ব ইজতেমা দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এখন যারা মাঠে আছেন বা আসছেন তারা সবাই মাওলানা জুবায়েরপন্থী। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে জুবায়েরপন্থীদের ইজতেমা। এরপর সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা ৯, ১০ ও ১১ ফেব্রুয়ারি ইজতেমায় অংশগ্রহণ করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here