রেডিও ফ্রি এশিয়ার রিপোর্ট মিয়ানমারে সাংবাদিকসহ ৭ রাজবন্দিকে হত্যা করে মাটিচাপা দেয়া হয়েছে

0
65

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে একজন সাংবাদিকসহ মোট সাত রাজবন্দির মৃতদেহের সন্ধান মিলেছে। রাখাইনের মরাউক-ইউ শহর বৃহস্পতিবার দখলে নেয়ার পর এসব মৃতদেহ উদ্ধার করে জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। এ খবর দিয়েছে অনলাইন রেডিও ফ্রি এশিয়া। নিহতদের পরিবারের একজন সদস্য বলেছেন, রাখাইনের গুরুত্বপূর্ণ ওই শহর থেকে এই সাত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছিল সামরিক জান্তার বাহিনী। তারপর তাদেরকে গুলি করে হত্যা করেছে। এর মধ্যে সুপরিচিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভাষ্যকার ও সাংবাদিক মিয়াত থু টুন অন্যতম। তাকে মংডু শহরের আহ লেল থান কাইওয়া গ্রাম থেকে তুলে নেয়া হয়। এসব মানুষকে কবে হত্যা করা হয়েছে তা স্পষ্ট করে জানা যায়নি।

রাখাইন রাজ্যের ঐতিহাসিক শহর মরাউক ইউ। এটি এ রাজ্যের উত্তরের অংশ। বৌদ্ধদের প্রাচীন স্থাপত্যের জন্য এই শহরটি বিখ্যাত।

কয়েক সপ্তাহে এই শহরে দ্রুততর অভিযান পরিচালনা করেছে আরাকান আর্মি। তাদের অভিযানের মুখে সামরিক জান্তার সেনারা পালিয়েছে। কেউ কেউ অবৈধ উপায়ে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। এর ফলে তিন বছর ধরে দেশটিতে চলা গৃহযুদ্ধ নতুন এক মাত্রা নিয়েছে। মরাউক ইউ শহরে যেসব ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে তাদের বয়স ২০ থেকে ৪০ এর দশকের। এর মধ্যে কাইওয়া জ্যান ওয়াই বেশি পরিচিত ফোয়ে লা পাইই নামে। তিনি ফেসবুকে কৌতুকের মাধ্যমে সামরিক জান্তার সমালোচনা করার কারণে জনপ্রিয় ছিলেন। অন্যদিকে মাইয়াত থু টুন লেখালেখি করতেন ফোয়ে থিহা নামে। তিনি ডেমোক্রেটিক ভয়েস অব বার্মার সাবেক একজন রিপোর্টার। অন্যরা হলেন কাইওয়া থেইন হ্লাইং, কাইওয়া উইন হ্লাইং, কো নিউন্ট, উইন নাইং এবং পাই সোনে উইন।

হত্যার পর তাদের মৃতদেহ মাটিচাপা দেয়া হয়েছিল। পরিবারকে এ তথ্য জানানো হয়নি। আরাকান আর্মি বলেছে, জান্তাবাহিনী এসব ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে ২০২৩ সালে। তাদেরকে আটকে রাখা হয়েছিল মরাউক ইউ পুলিশ স্টেশনে।  ২০২৩ সালের ২৪শে ডিসেম্বর সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে যুদ্ধ শুরুর পর তাদেরকে মরাউক ইউভিত্তিক সেনাদের ব্যাটালিয়ন ৩৭৮-এর কাছে হস্তান্তর করা হয়। গত ৩১শে জানুয়ারি যুদ্ধ তীব্র হয়ে ওঠে। আরাকান আর্মি এক বিবৃতিতে বলেছে, তখন দু’জন সেনা সদস্য গুলি করে হত্যা করেছে এসব রাজবন্দিকে। তারপর মৃতদেহ মরাউক ইউ হাসপাতালের কাছে বোমা রাখার একটি স্থানে সমাহিত করা হয়। ২৫শে ডিসেম্বর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন মাইয়াত থু টুন। কিন্তু বড়দিনের পরে পরিবারের সদস্যরা তার সাথে আর কোনো যোগাযোগ করতে পারেননি। সোমবার একথা বলেছেন তার স্ত্রী ওহন মার শয়েজিন।

তিনি বলেন, আরাকান আর্মি যখন মরাউক ইউ শহর দখল করল, আমি খুব আশাবাদী হয়েছিলাম যে- তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে। কিন্তু তার পরিবর্তে শুনতে পেলাম তাদেরকে হত্যা করে মাটিচাপা দিয়েছে। এ খবর আমার কাছে কতটা বেদনার তা বুঝাতে পারবো না। মায়াত থু টুন ‘৭ ডে নিউজ জার্নাল, ডেমোক্রেটিক ভয়েক অব বার্মা, দ্য ভয়েস, ডেভেলপমেন্ট মিডিয়া গ্রুপ’ এবং দেশীয়, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদ সংস্থায় কাজ করেছেন। তার স্ত্রী আরও বলেন, ডিসেম্বরে যুদ্ধ তীব্র হয়ে ওঠার প্রেক্ষিতে তাদেরকে হস্তান্তর করা হয় সামরিক ব্যাটালিয়নের কাছে। বড়দিন পর্যন্ত তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছি। তিনি আমাকে বলেছেন নিরাপদে আছেন। এটাই ছিল তার সঙ্গে আমার শেষ কথা।

সেনাবাহিনী বেসামরিক আরও দুটি মৃতদেহ লুকানোর চেষ্টা করেছে। আরাকান আর্মির মতে, মরাউক ইউ এবং মিনবাইয়া শহর দখলে নেয়ার পর তারা রাথেডাং থেকে তুলে নেয়া নাইই নাইই অং এবং মিনবাইয়া শহর থেকে কাইওয়া নিউন্টের মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন। সেনাবাহিনীর ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন ৩৭৯-এর ঘাঁটিতে ১৯শে জানুয়ারি তাদের দু’জনকেই হত্যা করা হয়েছে। তবে এসব হত্যার বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি সামরিক জান্তা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here