বিশ্বকাপের হৃদয়ভঙ্গের চারদিনও পার হয়নি, ভারতকে নেমে পড়তে হলো মাঠে। অধিনায়ক হিসেবে প্রথমবারের মতো খেলতে নামলেন সূর্যকুমার যাদব। বিশ্বকাপের বেদনা ভুলে ফিরলেন চেনা রূপে। টি-টোয়েন্টির আঙিনায় এসে যেন ফিরে পেলেন রাজত্ব! জশ ইংলিস নিজের প্রথম সেঞ্চুরিটাই করেছিলেন রেকর্ড স্পর্শ করে। শেষমেশ তার ১১০ রানের ইনিংস ম্লান হয়ে গেল সূর্যকুমারের ৮০ রানের ইনিংসে। টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড গড়েই ২ উইকেটের জয় পেল ভারত।
বৃহস্পতিবার বিশাখাপত্তমে ভারত নামে ২০৯ রানের লক্ষ্য তাড়ায়। যসভি জ্যাসওয়ালের ব্যাটে ভালো শুরু পেয়ে গিয়েও প্রথম ওভারেই ঘটে যায় দুর্ঘটনা। ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে ফিরে যান রুতুরাজ গায়কোয়াড় কোনও বল না খেলেই। জ্যাসওয়াল ঝড়োগতিতে ব্যাট করলেও থেমে যান ৮ বলে ২১ রানেই। ইশান কিষান নেমে শুরুতে ভোগান্তিতে পড়ে যান। প্রথম ১২ বলে আনতে পারেন মোটে ৪ রান। সূর্যকুমার এসে চেনা ভঙ্গিতে খেলে যান। পাওয়ারপ্লেতেই ভারত এনে ফেলে ৬৩ রান।
কিষানও এরপর খোলস ছেড়ে বেরুতে পারেন। ৩৭ বলে পেয়ে যান ফিফটি। তাদের দুজনের জুটিতে ভারত এগিয়ে যায় তরতর করে। কিন্তু কিষানকে ৫৮ রানে আউট করে ম্যাচ নাগালের বাইরে যেতে দেওয়া রুখে অস্ট্রেলিয়া। ১৩৪ রানে কিষানের ফেরার পর যদিও সূর্যকুমারের ব্যাটে তারা ফিরে আসার সুযোগই পায়নি। ২৮ বলে ফিফটি হাঁকিয়ে সূর্যকুমার বাউন্ডারির পসরা মেলে বসেন। ৪২ বলে ৯ চার ও ৪ ছক্কায় ৮০ রানের ইনিংস খেলে যখন ফিরছেন, ভারতের প্রয়োজন নেমে আসে ১৪ বলে ১৫ রানে। সেখান থেকেই অক্ষর প্যাটেল ৬ বলে ২ রানের ইনিংস খেললে শেষ তিন বলে দরকার পড়ে ৩ রানের। অপর প্রান্তে ছন্দে থাকা রিঙ্কু সিং স্ট্রাইক পেতে গিয়ে টানা দুই বলে দুই রানআউট করেন। কিন্তু শেষমেশ ১ বলে ১ রানের সময়ে ঠিকই ছক্কা মেরে জিতিয়ে দেন রিঙ্কু। ১৪ বলে ৪ চারে ২২ রানের ইনিংসে যদিও ঐ ছক্কা যোগ হয়নি, শেষ বলটা নো বল হয়ে ছক্কা পূর্ণ হওয়ার আগেই ভারত জিতে গিয়েছিল বলে।
টসে জিতে বোলিং নিয়ে ভারত শুরুটা করে ভালো। প্রসিধ কৃষ্ণা দ্বিতীয় ওভারে এসে দিয়ে দেন ১৩ রান। এর বাইরে আর কোন ওভারে দুই অঙ্কের রান পায়নি অস্ট্রেলিয়া। পাওয়ারপ্লেতে তাদের তাই ৪০ রান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। পঞ্চম ওভারে এসে স্টিভেন স্মিথের ফিরতি ক্যাচ লুফতে ব্যর্থ হন রবি বিষ্ণই। উইকেটের আফসোস যদিও বেশিক্ষণ থাকেনি তার, ওই ওভারেই ম্যাথু শর্টকে বোল্ড করে দেন ১৩ রানে। ম্যাচের বাকি অংশে যদিও বিষ্ণইয়ের উপর ঝড়ই বয়ে গেছে!
ওয়ান ডাউনে নামা জশ ইংলিস তাণ্ডবই চালিয়েছেন। তরুণ লেগি বিষ্ণইয়ের উপর পড়েছে ছয়টি ছক্কার মার। ৪ ওভারের স্পেলেই দিয়েছেন ৫৪ রান। কৃষ্ণও দেননি ৫০ রানের কম। ইংলিসের সামনে ভারতের বোলাররা দিশেহারাই হয়ে পড়েছিলেন। পাওয়ার গেমের সাথে দুর্দান্ত টাচে রানের চাকা সচল রাখেন ইংলিস। অপর প্রান্তে ওপেনিংয়ে নামা স্মিথের মন্থরগতির ইনিংসের প্রভাব তাই গায়ে লাগেনি অজিদের। ২৯ বলে ফিফটি হাঁকিয়ে ফেলেন ইংলিস। এরপর ৪৭ বলেই পেয়ে যান নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে যৌথভাবে দ্রুততম যে সেঞ্চুরি।
৪০ বলে স্মিথও ফিফটি পেয়ে যান। কিন্তু এরপর ৫২ রানেই তাকে ফিরে যেতে হয় রানআউট হয়ে। ইংলিস যখন ফিরে যান ৫০ বলে ১১ চার ও ৮ ছক্কায় ১১০ রানের ইনিংস খেলে, ১৭.২ ওভারে অস্ট্রেলিয়া তুলে ফেলে ১৮০ রান। মুকেশ কুমার ইয়র্কারের দুর্দান্ত প্রদর্শনী দেখিয়ে শেষ ওভারে দেন মাত্র ৫ রান। অস্ট্রেলিয়াকে ২০৮ রানে রুখতে তিনি ৪ ওভারে ২৯ রানের স্পেলে রাখেন বড় অবদান।