হুমায়ূন শুধু যে সাধারণ বাস্তবতার গল্পই রূপকথার আদলে বলতেন তাই না এর মধ্যে খুব সাধারণ সত্যগুলোকে এমনভাবে ন্যারেট করতেন যেন ন্যারেশন দিয়ে চরিত্রকে নিয়ন্ত্রণ করার বদলে উল্টাটাই হতো, চরিত্রই ন্যারেশনকে টেনে নিয়ে যেতেন। মানুষ রূপকথার মতো মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তার ফিকশনে আটকে থাকতো কিন্তু তিনি রূপকথা বলতেন না বলতেন গল্প। আমাদের চারপাশের খুব সাধারণ জীবনের গল্প এবং এগুলো যখন টিভিতেও হাজির হতো মানে, সিনেমা-নাটকে তিনি পরিবেশন করতেন তখন তিনি ভিজুয়াল নির্মাণশৈলীর দিকে ততটা মনোযোগ না দিয়ে জাস্ট গল্প বলার দিকেই মনোযোগী থেকেছেন। পরের কোনো লেখকের মধ্যে এই ধরনের প্রবণতা এতটা সফলভাবে দেখা যায় নাই
“If you want to tell people the truth, make them laugh, otherwise they will kill you.” —Oscar Wilde লেখালেখি করতে গেলে অনেক ধরনের উপলক্ষ তৈরি করতে হয়। বিশেষ করে উপন্যাস লেখাতে অনেক ধরনের উপলক্ষের আড়ালে লিখন কর্ম চালাতে হয়। কিন্তু লক্ষ্য থাকে ‘সত্য’কে হাজির করার। বলা চলে এই সত্যে পৌঁছানোর জন্যই বা সত্যের হাজিরা নিশ্চিত করার জন্যই বাকি সব আয়োজন। ফলে লেখা বাস্তবধর্মী না কল্পনাধর্মী তার চেয়ে বড় প্রশ্ন হলো লেখাটা সত্যে পৌঁছাইতে পারছে কিনা? বলাই বাহুল্য একক বা একই ধরনের সত্য বলে কোনো ধারণা লেখক মাত্রই মেনে চলেন না। সত্যের ধারণার বিভিন্নতা লেখক ভেদে বিভিন্ন হয়ে থাকে। কিন্তু এই সত্যকে হাজিরের নানান বিপদও আছে।
কারণ লেখক যে ধারণাকে সত্য বলে মনে করেন তা নানানভাবে সমাজের প্রচলিত সত্যের ধারণার সঙ্গে বিরোধে উপনীত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে লেখকদের একটা খুবই কার্যকরী কৌশল হলো- রম্যের ঢং-এ নিজের ন্যারেশন বা বয়ানকে হাজির করা। আর এই কাজে হুমায়ূন আহমেদ যে মাস্টারির পরিচয় দিয়েছেন তা প্রায় তার সকল সৃষ্টিকর্মে একটা কমন বৈশিষ্ট্য হিসেবে দেখা যায়। এই পদ্ধতি ছাড়া হুমায়ূন বাংলাদেশের মতো বিভাজিত সমাজে কাজ করতে পারতেন কিনা সন্দেহ থেকে যায়।
বাংলাদেশে যে একটা ভয়াবহ ফ্যাসিবাদ তৈরি হতে পেরেছে তা একদিনে একটা দলের হুট করে ক্ষমতায় আসার ফলেই ঘটে নাই। সমাজে এই ধরনের ক্ষমতা কায়েমের শর্ত বা সুযোগ হাজির ছিল। এর মূলে আছে চিন্তার দিক থেকে এই ধরনের ফ্যাসিবাদকে মোকাবিলা করার বদলে সামাজিকভাবে এগুলোকে প্রতিপালনের আয়োজন। আর এই আয়োজনে সবার আগে চোখে পড়ে লেখক-শিল্পী বা সেলিব্রেটিদের। আমাদের সমাজে বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা ও সাহিত্য করার কিছু মানদণ্ডকে মূলধারার বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলা হয়েছে সাংস্কৃতিকভাবে এবং ক্ষমতার দিক থেকে এই মূলধারা ফ্যাসিবাদের দিকেই ঝুঁকে থাকে। আমাদের সমাজ যেকোনো বিষয়ে দুই ভাগে বিভক্ত মানুষদের দেখতে পাওয়া যায়। মাঝামাঝি অবস্থান থেকে পর্যালোচনার সংস্কৃতি আমাদের নাই। যেকোনো ইস্যুতেই সমাজ দুইভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। এই চরম বিভক্তির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা সমাজে সাহিত্য করতে গিয়ে আমরা জাতীয় বা আন্তর্জাতিক হওয়ার বদলে দলীয় লেখক পেয়েছি। কিন্তু লেখক কর্মের জোরেই সব মহলেই গ্রহণযোগ্য লেখক হয়েছে হুমায়ূন আহমেদ। আর এই গ্রহণযোগ্যতা তৈরিতে অন্যতম প্রধান ভূমিকা রেখেছে তার রম্য কৌশল। আর এই কৌশলকে কাজে লাগিয়ে তিনি তার রাজনীতিও করেছেন। ‘হলুদ হিমু কালো র্যাবের’ -মতো উপন্যাস তিনি লিখেছেন। “ও আমার কৃষ্ণ র্যাব, আমি তোমায় ভালোবাসি, তোমার অস্ত্র আমার বুকে বাজায় বাঁশি।” – এমন লাইন তিনি লিখেছেন। র্যাবও পড়ে আনন্দ পেয়েছেন। কিন্তু লেখক হিসেবে যা বলার তিনি বলে দিয়েছেন। অনুভূতির জগতে পৌঁছানোর-এটা কমন চিত্র হুমায়ূনের সাহিত্য কর্মে। এইজন্য তাকে কোনো দলীয় পয়েন্ট অব ভিউ থেকে বর্তমানের বিষয়ে অবস্থান নিতে হয় নাই।
বলাই বাহুল্য হুমায়ূন বরাবরই সমসাময়িক প্রসঙ্গ নিয়ে সাহিত্য করেছেন। কিছু ঐতিহাসিক উপন্যাস বাদে তার সব লেখাই সমসাময়িক অবস্থার প্রেক্ষিতে লিখিত হয়েছে। হুমায়ূনের প্রিয় লেখকদের একজন অস্কার ওয়াইল্ড। তিনি মনে হয় প্রিয় লেখকের উপদেশটা জানতেন। তাই অক্ষরে অক্ষরে মেনেছেন- ‘তুমি যদি জনগণকে সত্য বলতে চাও, তাইলে পাবলিককে হাসাও নইলে তারা তোমাকে খুন করে ফেলবে।’ অন্যদিকে দলীয় স্বার্থবুদ্ধি থেকে সাহিত্য চর্চার ভয়াবহ চরমপন্থি প্রভাবে বাংলা সাহিত্য অনেক দিক থেকেই গোয়ার, অলেখক ও অশিক্ষিতদের আস্ফালনের মঞ্চ হয়ে উঠেছে। কিছু মিডিয়াকে এরা মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করে বা মিডিয়া তাদেরকে চিড়িয়া হিসেবে কাজে লাগায়। সন্দিপন চট্টোপাধ্যায় যেমন বলতেন- ‘বাজারি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি বছর কিছু ঘোড়া গোষ্ঠী তৈরি করে এবং এদেরকে বাজারে ছোটায়।’ এর বাইরে স্বাধীনভাবে লিখতে চেষ্টা করা একটা গেরিলা যুদ্ধের মতোই ব্যাপার। এই যুদ্ধে হুমায়ূন রম্য-অস্ত্র ব্যবহার করে বহুদিক দিয়ে ফায়দা পেয়েছেন। উনি এই বিভাজিত সাংস্কৃতিক ক্ষমতা কাঠামোর বলয়ে থেকে এই কাজটা করলেন কি করে? এইটা বুঝবার জন্য তার উপন্যাসে হিউমার বা জোকসের ব্যবহারের ধরনের দিকে মনযোগ দিলেই হবে। যেমন, ক্ষমতার বলয়ে থেকেও বিভিন্ন অন্যায়ের বিরুদ্ধে অনেক সুশীল মানুষও অনেক সময় কথা না বলে থাকতে পারেন না। আবার প্রচণ্ড ভয় ও নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকি প্রসারিত হওয়ার ফলে পাবলিক নিজে থেকেই বোবার চরিত্রে অভিনয় করতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। এর মধ্যে অতি অল্পকিছু লোক বিকল্প আকারে রম্যকে ভাব প্রকাশের উপায় হিসেবে ব্যবহার করেন। এটার একটি রাজনৈতিক দিক যেমন আছে তেমনি সোসালা-সাইকিতে এর প্রভাবও আছে।
এটা জনপ্রিয়তা তৈরির খুবই কার্যকর পদ্ধতি। বা বলা যায়, কোন ধরনের পরিবেশের মধ্যে এই ধরনের চুটকির ব্যবহার করতে লেখক বাধ্য হন এবং এটা কীভাবে স্টাইলের অংশ হয়ে যায়?- এটার অনুসন্ধান করা দরকার। হুমায়ূন আহমেদের লেখালেখি মনযোগ দিয়ে দেখলে বুঝতে পারা যায়- রম্যকে তিনি বেশ ভালো ছুতা হিসেবে ব্যবহার করেছেন এবং এই ছুতাই পরে তার স্টাইলের অংশ হয়ে যায়। হমায়ূন নিজে সাইকোলজি খুব ভালোভাবে পড়েছেন এবং সাহিত্যে সরাসরি প্রয়োগও করেছেন। কিন্তু তার নিজের সাহিত্য কর্মের সাইকো-এনালাইসিস করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে ফ্রয়েডের বিখ্যাত বইটা ধরে খুব সহজেই তাকে ব্যাখ্যা করা যায়। এখানে বিস্তারিত বলার সুযোগ নাই। কেবল ইশারা দেয়া যেতে পারে। ফ্রয়েডের বই‘The Joke and Its Relation to the Unconscious’-টা হুমায়ূনকে ব্যাখ্যার কাজে বেশ সহযোগিতা করে। হুমায়ূনের সাহিত্য প্রকল্পরে মধ্যে যে স্বাধীন ও সত্যের অন্বেষণ আছে এটা কতোটা গভীর, কতোটা ঐতিহাসিক, কতোটা কালজয়ী এইসব বিষয়ে লেখক হিসেবে হুমায়ূন তেমন চিন্তা-ভাবনা করেছেন বলে তার লেখালেখিতে নজির পাওয়া যায় না। বরং বাংলা সাহিত্যের ক্লাসিক ধারা মানে বঙ্কিমীয় ধারার বাইরে সহজ ও নকশাধর্মী যে ধারা আলালের ঘরের দুলালের মাধ্যমে প্যারীচাঁদ মিত্র তৈরি করেছেন হুমায়ূন সেই ধারার মধ্যে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। তাই আগে থেকে স্বীকৃত মহান ধারায় তিনি উপন্যাস সৃষ্টির প্রচেষ্টা প্রথম দুই-একটা কাজের পরে আর করেন নাই। এখন সবাই সেই বঙ্কিমীয় আদর্শ উপন্যাসের ধারার মধ্যে হুমায়ূনকে বিচার করতে গিয়ে দেখেন আরে এতো একেবারে চটুল লেখক। কোনো চিন্তা নাই। ফলে এই লেখা তো টিকবে না। অন্যদিকে বামপন্থি বা সর্বহারা আদর্শ প্রচারের বাহন হিসেবে যারা এই দেশে উপন্যাসকে ব্যবহার করেন তাদেরও বিরাট লেখক মনে করা হয়। কিন্তু হুমায়ূন এগুলোর ধারে কাছেও নাই। ফলে হুমায়ূনের আনকনসাস বা অচেতন যে সাহিত্যিক প্রকল্পের উপর প্রতিষ্ঠিত তার দিকে আমারা নজর ফেরাতে পারি নাই এবং তার সাহিত্যের এই রম্য বা জোকসকে বিচারও করতে পারি নাই।
হুমায়ূনের রম্য ও এর সঙ্গে তার অবচেতন লেখক প্রকল্পের সন্ধান করলেই আমরা তার কাজে রাম্য কীভাবে পাঠককের কাছে তাকে জনপ্রিয় ও লেখক হিসেবে তার প্রকল্পকে প্রসারিত করতে সাহায্য করেছে তার হদিস পেয়ে যাবো। আবার আমরা দেখি ক্ষমতার বিরুদ্ধে যখন মানুষ সরাসরি কিছু বলতে পারে না তখন কৌতুকের আশ্রয় নিয়ে প্রতিবাদ করে বা চরম এনার্কিস্টরা গালিকেও অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। এটা সব দেশেই কমবেশি দেখা যায়। কিন্তু আমাদের দেশের মতো অতি বিভাজিত সমাজে লেখক হিসেবে রম্য যখন প্রধান অবলম্বন হয়ে যায় তার একটা আলাদা গুরুত্ব আছে। এই যে জোকস-এর ব্যবহার এটা যে স্থায়ীভাবে একটা হুমায়ূনী স্টাইল হয়ে গেল এই বিষয়টা লেখকের রাজনৈতিক কৌশলের অংশ। যদিও ফ্রয়েডের কথা ধরে এর সঙ্গে আনকনসাস বা অবচেতনের সম্পর্ক আবিষ্কার করা যায়। কিন্তু এটা রাজনৈতিকভাবে আমাদের মতো বিভাজিত সমাজে লেখককে তার বক্তব্য প্রকাশ ও ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য হতে সাহায্য করে।
হুমায়ূন এই ফায়দা পুরোপুরি আদায় করে নিয়েছেন। এমন অনেক বই বা লেখার উদাহরণ দেয়া যাবে- যা সাধারণ পাঠক কেবল কৌতুকের আমোদে পড়ে যাবে কিন্তু কৌতুকের ঢং বাদ দিয়ে সেই বক্তব্য পড়লে মনে হবে খুব পলিটিক্যাল পজিশন নিয়েছেন লেখক। কৌতুকের আড়ালে পাঠক আমোদে তরতর করে পড়ে যান। রাজনীতিটা খেয়াল করা হয় না। কিন্তু মনোযোগ দিয়ে না পড়লে এটা আমাদের চোখে পড়বে না যে- হুমায়ূনের লেখায় রম্য ও রাজনীতি হাত ধরাধরি করে চলে। অন্যদিকে, হুমায়ূন মারা যাওয়ার দেড় দশক পরেও তার বই কেনার জন্য জটলা দেখা যায়। যদিও তখন পণ্ডিতরা বলেছিল, মরার সঙ্গে সঙ্গে এগুলো শেষ হয়ে যাবে, বরং দেখা গেছে যারা এমন মন্তব্য করেছেন তাদের কপালেই চির বিস্মৃতি জুটেছে। হুমায়ূনকে পাঠক আজও খুঁজে নিচ্ছেন এবং আরও একটি প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এতদিন পরেও আর কেউ কেন হুমায়ূনের জায়গাটা দখল করতে পারলো না। এর দুইটা উত্তর হতে পারে। উপরে যেটা বলতে চেষ্টা করেছি তার আলোকে বলা যায়, হুমায়ূনকে নকল করে বা হুমায়ূনী ঢং-এ যারা তখন লিখতেন তারাও এক ধরনের জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। কিন্তু হুমায়ূনের যে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা বা শিল্পী হিসেবে যে উদারতা ছিল তা এদের নাই। এরা দলে দলে জনপ্রিয় ট্রেন্ডের মধ্যে ঢুকে গিয়েছেন। ক্ষমতার পায়ের কাছে মাথা নিচু করে এমনভাবে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন যে ক্ষমতার ফটকা ও ফ্যাসিস্ট চরিত্র উদাম হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের তৈরি হওয়া জনপ্রিয়তা জনঘৃণাতে রূপ নিয়েছে। তাদের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে। হুমায়ূনের পরে এই ধারায় জনপ্রিয় লেখক না তৈরি হওয়ার আরও একটা কারণ হলো, এরা প্রেম-ভালোবাসার আবেগি ফিকশনাল বয়ানের টিপিক্যাল ভূমি থেকে বের হতে পারে নাই।
সম-সাময়িক বিষয়কে একটা এথিক্যাল চরিত্রের মাধ্যমে মোকাবিলা করতে পারে নাই। হুমায়ূন যেটা তার উপন্যাসে করেছেন। এরা সেফ সাইডে থেকে সাহিত্য করতে চান কিন্তু যাপিত বাস্তবতাকে মোকাবিলার সংগ্রাম সাহিত্যে থাকে না। এর ব্যতিক্রম যারা করেছেন তারা কিন্তু ঠিকই পাঠক প্রিয় হয়েছেন, হচ্ছেন। উদাহরণ হিসেবে আসিফ নজরুলের কথা বলা যায়। তার গদ্য হুমায়ূনের মতো আমোদে না হলেও আবার আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের মতো ক্লাসিক না হলেও বাস্তবতাকে ডিল করার সাহসের কারণে ঠিকই পাঠক প্রিয়তা অর্জন করেছেন। এক কথায় হুমায়ূনের পরের লেখকরা এই রম্য ও রাজনীতির সম্পর্ক বুঝতে পারেন নাই এবং মূল ধারায় থাকতে গিয়ে গণবিরোধী অবস্থানে হাজির হয়েছেন। আরও কিছু কারণ আছে, যেমন- হুমায়ূন গল্প বলার বেলায় ক্লাসিক্যাল তরিকা ও পরামর্শ ফলো করতেন। ঠিক যেমন প্লেটো তার গর্জিয়াসে বলেছেন- ‘Listen to a good story. You will think it’s a fable, but according to me it’s a story. I will tell you as a truth what I am about to tell you.’ হুমায়ূন শুধু যে সাধারণ বাস্তবতার গল্পই রূপকথার আদলে বলতেন তাই না এর মধ্যে খুব সাধারণ সত্যগুলোকে এমনভাবে ন্যারেট করতেন যেন ন্যারেশন দিয়ে চরিত্রকে নিয়ন্ত্রণ করার বদলে উল্টাটাই হতো, চরিত্রই ন্যারেশনকে টেনে নিয়ে যেতেন। মানুষ রূপকথার মতো মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তার ফিকশনে আটকে থাকতো কিন্তু তিনি রূপকথা বলতেন না বলতেন গল্প।
আমাদের চারপাশের খুব সাধারণ জীবনের গল্প এবং এগুলো যখন টিভিতেও হাজির হতো মানে, সিনেমা-নাটকে তিনি পরিবেশন করতেন তখন তিনি ভিজুয়াল নির্মাণশৈলীর দিকে ততটা মনযোগ না দিয়ে জাস্ট গল্প বলার দিকেই মনযোগী থেকেছেন। পরের কোনো লেখকের মধ্যে এই ধরনের প্রবণতা এতটা সফলভাবে দেখা যায় নাই। যদিও অনেকে টিভি-সিনেমায় কাহিনীকার হিসেবে কাজ করে পরিচিতি পেয়েছেন কিন্তু পরে তাদের রাজনৈতিক পজিশনের জন্য তার চেয়ে বেশি ঘৃণা কুড়িয়েছেন। হুমায়ূন বর্তমানের গল্প বলেছেন, রূপকথার চেয়ে সরস কৌতুকে। এভাবেই কথা সাহিত্যের জনপ্রিয়তার মঞ্চে হুমায়ূন একাই নায়ক একাই ভিলেন থেকে যাচ্ছেন একক ভাবে।
লেখক: চিন্তক, সম্পাদক- জবান।
সূত্রঃ মানবজমিন